Brigade Rally

ইনসাফ চাইতে ব্রিগেডে আসছেন ধাত্রীগ্রামের তাঁতশিল্পীরা

রাজ্য

যুবদের ব্রিগেডে হাজির হবেন জানিয়ে দিলেন ধাত্রীগ্রামের তাঁতশিল্পিরা। এলাকার  তাঁতশিল্পী সংগঠনের প্রয়াত নেতা অরুণ মজুমদারের স্মরণসভায় হাজির হয়ে সেখানেই তারা জানিয়ে দেন আমাদের মরা বাঁচার লড়াইয়ের জন্যই ব্রিগেড সমাবেশে হাজির থাকবো। 
উল্লেখ্য কালনা মহকুমায় ষাট হাজার মানুষ এই হস্তচালিত তাঁত শিল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন। কিন্ত এই শিল্পে মন্দা নেমে আসায় বহু তাঁতশিল্পী কাজ হারান। বিরাট প্রভাব পরে কালনা মহকুমার কালনা শহর, ধাত্রীগ্রাম, কাদিপাড়া, পূর্বস্থলীর নশরতপুর, সমুদ্রগর, মাজিদা, শ্রীরামপুরের মতো তাঁতশিল্প নিবিড় এলাকাগুলিতে। সাধারণত কালনায় ঢাকাই জামদানি শাড়ি বেশি উৎপাদন হয়। আর এই শাড়ি বেশির ভাগই বুনতেন উত্তরবঙ্গ থেকে আসা পরিযায়ী তাঁত শ্রমিকরা। কিন্তু প্রথম লকডাউনে তাঁরা ফিরে যাওয়ার পর আর এদিকে কেউ পা বাড়াননি। অন্যদিকে জীবন জীবিকার টানে এখানকার তাঁত মালিকরা নিজেরাই শ্রমিক হয়ে গিয়ে তাঁতে বসে যান। কিন্তু কাপড় হাটগুলোতে তাঁত কাপড়ের খরিদ্দার না থাকায় ১২ শো টাকা মূল্যের কাপড়ের দাম নেমে আসে মাত্র সাড়ে চারশো টাকায়। ফলে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হন তাঁত শিল্পীরা। তাই অভাবে তাড়নায় এই ধাত্রীগ্রামে আত্মঘাতী হন দুইজন তাঁত শিল্পী দয়াল বসাক ও সমিরন বসাক। দয়াল বসাক একসময় ছয়টা তাঁত নিয়ে দুই ভাই মিলে তাঁত কাপড় উৎপাদন করার ব্যবসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু এই ব্যবসা এতই মন্দার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল যে, একে একে তাঁত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিল। শেষে দু ভাই দুটো তাঁত চালিয়ে কোনরকমে সংসারটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষের দিকে এমনই অবস্থা দাঁড়ায় যে তাদের আর সংসারটা ঠিক মতো চলছিল না। শেষে তিনি বিষপান করে আত্মঘাতী হন। নিজের বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন সমিরন বসাক(৫০)নামে এক তাঁত ব্যবসায়ী। তিনি বাজার থেকে প্রচুর ঋণ নিয়ে তাঁতের অত্যাধুনিক যন্ত্র বসান। কিন্তু উৎপাদিত শাড়ির বিক্রি না হওয়াই চরম বিপাকে পড়ে গিয়েছিলেন এই তাঁতব্যবসায়ী। যা আয় হচ্ছিল, তাতে নিজের সংসার চালিয়ে ঋণ শোধ করার কোন উপায় ছিল না। ব্যাংক ও মহাজনদের তাগাদায় অতিষ্ঠ হয়ে আত্মঘাতী হন। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নসরতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হাটশিমলা গ্রামে ছেলেদের পরিত্যাক্ত তাঁতঘরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন সরস্বতী বসাক নামে এক বৃদ্ধা।  মৃতার দুই ছেলেই তাঁত ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যন্ত্র চালিত তাঁত এসে যাওয়ায় এলাকা থেকে হস্ত চালিত তাঁত প্রায় বিদায় নেয়। তাই বাজার থেকে বহু টাকা ঋণ নিয়ে দুই ভাই বাড়িতে যন্ত্র চালিত তাঁত বসিয়েছিলেন। তাতে এদের লাভ তো হয়নি, বরং ঋণের চাপে চোখের ঘুম কেড়ে নেয়। ঘরে ঘরে উৎপাদিত তাঁতবস্ত্র জমা হয়ে পড়ে থাকায় বাধ্য হয়ে যন্ত্র চালিত তাঁতও বন্ধ রাখতে হয়। ছেলেদের এই দুর্দশা দেখে সহ্য করতে না পেরে সরস্বতী দেবী পরিত্যক্ত তাঁতঘরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এই হাটশিমলা গ্রামেই রাত্রিবেলা নিজের তাঁত ঘরে গলায় দরি দিয়ে আত্মঘাতী হন নিমাই বসাক নামের আরো এক তাঁত শিল্পী। তাঁত শিল্পের অবস্থার অবনতি হওয়াই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন বলে পাড়া-প্রতিবেশীদের দাবি। তাঁত শিল্পীদের আত্মঘাতী হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কমেছে অর্থের সংস্থান। শাড়ির দুনিয়ায় রকমারি আসায় হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার তাঁত। রজ্যের হাজার হাজার তাঁতঘর এখন খাঁখাঁ করছে। ইনসাফ পাচ্ছে না তাঁতিরা, ধ্বংসের মুখে তাঁত শিল্প। তাঁত শিল্পের সুদিন কি আর ফিরে আসবে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেতে ব্রিগেডে যাবেন ধাত্রীগ্রামের তাঁতশিল্পীরা। 
 

Comments :0

Login to leave a comment