Chief Secretary High Court

নির্লজ্জতারও সীমা থাকে

সম্পাদকীয় বিভাগ

উচ্চ আদালতের ডিভিসন বে‍ঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ আধিকারিক অর্থাৎ মুখ্যসচিব বলছেন ভুলে হয়ে গেছে, আর কখনও এমন ভুল হবে না। একজন দক্ষ আইএএস সুদীর্ঘ কর্মজীবনে বহু অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর শেষ পর্বে মুখ্যসচিব পদে বসে যখন এমন স্বীকারক্তি করেন তখন সেটা সরকারের কাছে কতটা উপাদেয় সেটা বলা মুশকিল তবে সেই রাজ্যের মানুষের কাছে নিঃসন্দেহে লজ্জার ও অপমানের। এই ঘটনা দুনিয়ার সামনে মাথা হেঁট হয়ে যাবার মতো হলেও রাজ্য সরকারের তাতে কোনও বিড়ম্বনা নেই। কারণ এটা তাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। প্রতিদিনই কোনও না কোনও আদালতে এই সরকারকে ভর্ৎ‍‌সিত হতে হয় বা চপেটাঘাত খেতে হয়। আদালতের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে মাথানত করে থাকতে হয়।
এরাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার পর থেকে যত ওবিসি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে তার কোনোটাই আইন ও বিধি মেনে বৈধভাবে দেওয়া হয়নি। তাই কলকাতা হাইকোর্ট মমতা সরকারের দেওয়া সমস্ত সার্টিফিকেট বাতিল করে দিয়েছে। এই সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে কোনও চাকরি বা সরকারি সুবিধা পাওয়া যাবে না। তৃণমূল সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তারা নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না। দলীয়, গোষ্ঠীগত বা ব্যক্তিগত স্বার্থে খেয়াল খুশি মতো কাজ করে। জেনে বুঝেও ভুল করে। নিজেদের পছন্দের লোকদের চাকরি বা সরকারি সুবিধা পাইয়ে দিতে এবং মোটা টাকার বিনিময়ে চাকরি বা সুবিধা দিতে সরকারি পদে বসে বেআইনি কাজ করে। এটাই তাদের কর্মনীতি ও কর্মসংস্কৃতি। সততা, স্বচ্ছতা, ন্যায় বলে ওদের অভিধানে কিছু নেই। চুরি, দুর্নীতিই জীবনদর্শন। মজার ব্যাপার হলো এরা ধরা পড়বে, আদালতে থাপ্পড় খাবে জেনেও বেপরোয়াভাবে অন্যায় করে, বেআইনি কাজ করে। উচ্চ আদালতে দাঁড়িয়ে নির্লজ্জের মতো জোর গলায় দুর্নীতির পক্ষে সওয়াল করে। তাতে কাজ না হলে সুপ্রিম কোর্টে দৌড়ায়। এইভাবে দুর্নীতিকে বৈধতা দিতে সরকারের বিপুল টাকা ধ্বংস করে মামলা করে।
ওবিসি শংসাপত্র হাইকোর্টে বাতিল হবার পর সরকার দৌড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়নি। ফলত ২০১০ সালের পর থেকে দেওয়া সব শংসাপত্রই বাতিল হিসা‍‌বেই গণ্য। আদালতের এই স্পষ্ট নির্দেশকে অগ্রাহ্য মমতা ব্যানার্জির সরকারের বিভিন্ন দপ্তর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাতিল শংসাপত্রের ভিত্তিতে চাকরি দেবার প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়। তারপরই আদালত তলব করে মুখ্যস‍‌চিবকে।
এখন প্রশ্ন হলো দেশের সংবিধান ও আইনের কাছে দায়বদ্ধ কোনও সরকার এইভাবে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এবং আদালতের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে চলছে কি করে। মমতা ব্যানার্জিরা মনে করেন ভোট লুট করে নির্বাচনে জিতে যা খুশি তাই করার অধিকার পেয়ে গেছেন। তারা সংবিধান, আইন, আদালতের ঊর্ধ্বে। কোনও কিছুকেই মান্যতা দেবার দায় তাদের নেই। এই মানসিকতা থেকে চাল চুরি, ত্রিপল চুরি, গোরু পাচার, কয়লা পাচার, বালি পাচার, চাকরি বিক্রি ইত্যাদিকে অধিকার বানিয়ে ফেলেছে। দলের লোক ধর্ষণ সহ যে কোনও অপরাধ করলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেবে না। শাসক গুন্ডাদের বিরুদ্ধে যা অভিযোগ করবে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না। চুরি, দুর্নীতি, অনৈতিকতার যে ইকোসিস্টেম তৃণমূল এরাজ্যে তৈরি করেছে সেখানে আইপিএস, আইএএস অফিসাররা অংশীদার হয়ে পড়ছে। ফলে শাসনের বদলে অপশাসন বাড়ছে, সভ্যতার বদলে বাড়ছে অসভ্যতা। উন্নত সমাজ গড়ার বদলে ত্বরান্বিত হচ্ছে অধপতন।

Comments :0

Login to leave a comment