RATION SCAM

বিহারে কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের রাইসমিলই ছিল সরকারি তালিকায়!

রাজ্য

বিহারে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্তের নাম উঠে এসেছে বাংলায় রেশন বন্টন দুর্নীতিতেও। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত এই ব্যক্তি সুন্দরবনে বছরে পর বছর ধরে এই রেশন দুর্নীতির চক্রে যুক্ত ছিল। 
এই অভিযুক্তের চালকল সংস্থা খাদ্য দপ্তরের তালিকা ভুক্ত। খাদ্য মন্ত্রী ছিলেন রেশন কাণ্ডেই ধৃত জ্যোতিপ্রিয়। তদন্তকারী সংস্থার দাবিবেছে বেছে এই দাগী সংস্থাগুলোকে দিয়েই দিনের পর দিন দুর্নীতির চক্র চালিয়ে গেছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বাকিবুর রহমানরা। 
সুন্দরবন থেকে কোচবিহার, সর্বত্র চলেছে সংগঠিত দুর্নীতির এই নেটওয়ার্ক। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি’ চলতি মাসে রেশন কাণ্ডে বাকিবুর রহমানের নামে যে চার্জশিট দিয়েছে সেখানেই উল্লেখ রয়েছে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত দীপেশ চন্দক ও সেই অভিযুক্ত সংস্থা অঙ্কিত ইন্ডিয়া লিমিটেডের নাম। কৃষকদের কাছে ধান সংগ্রহের নামে আসলে বাজার থেকে নিম্নমানের চাল বাজার থেকে সংগ্রহ করে রেশনে সরবরাহ করতো এই দাগী সংস্থা। খাদ্য দপ্তর সব জেনে বুঝেও চোখ বন্ধ করেছিল। 
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা চার্জশিটে অভিযোগ করে ২০১৮ সালে সুন্দরবন এলাকায় জনৈক তারক মন্ডল নামে এক কৃষক লিখিত অভিযোগ করেছিল। পশু খাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত দীপেশন চন্দক, হীতেশ চন্দকরা কৃষকদের ভুয়ো নথির মাধ্যমে একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলে সেখান থেকে সরকারি টাকা নয়ছয় করতো। কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হতো অথচ তাঁদের নথি ব্যবহার করে সেখান থেকে কমিশনের একটা অংশ ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দেওয়া হত। ধান সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ গোটাটাই ছিল স্রেফ খাতায় কলমে। এমনকি রাইস মিলে ধান পৌছে দেওয়ার জণ্য গাড়ির খরচের ভুয়ো বিলও তোলা হত। রেশনে বাজারের নিম্ন চাল সরবরাহ করা হতো। এই গোটা চক্র নিয়ে নীরব ছিল খাদ্য দপ্তর। যদিও পরে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে, চলতি বছরের জানুয়ারিতেআ আলিপুর আদালতে চার্জশিটও দায়ের করে। সংশ্লিষ্ট অঙ্কিত ইন্ডিয়া লিমিটেডের ডিরেক্টর হীতেশ চন্দক ও দীপেশ চন্দক এবং সুন্দরবনে সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি ভূয়ো মাস্টার রোল তৈরি করে কোটি কোটি টাকা সরিয়েছে। কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণের গোটাটাই আসলে ভুয়ো। ভুয়ো নাম দেখিয়েই তোলা হয়েছে টাকা। বিনিময়ে বাজারের নিম্ন মানে চাল পৌছে পৌছেছে রেশনে। 
কৃষি উন্নয়ন সমিতির সাইটে ঢুকে সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রী করা কৃষকের তালিকাও বিকৃত করা হত। ভুয়ো কৃষকের নাম তালিকায় ঢোকানো হত। আর সেই টাকা অন্যত্র সরানো হত। শুধু তাই নয় কোন কৃষকের নামে ধান বিক্রির কত টাকা অ্যা কাউন্টে জমা করা হয়েছে, সেই তথ্যের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ থাকত পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত দীপেশ, হীতেশ চন্দকদের হাতে। গোটা রাজ্য জুড়ে রেশন ব্যবস্থায় গত এক দশক ধরে আসলে বাকিবুরের মডেলকেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। চার্জশিটে সেই ইঙ্গিত দিয়েই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দিকেই অভিযোগ তোলা হয়েছে।
নয়ের দশকের শেষের দিকে বিহারে পশু খাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ছিল এই দীপেশ চন্দক, তাঁর সংস্থা অঙ্কিত ইন্ডিয়া লিমিটেড। ১৯৯৬ সালে পশু খাদ্য কেলেঙ্কারিতেই সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিল। পরে যদিও রাজসাক্ষী হয়ে জামিনে ছাড়া পায়।সেই দুই ব্যক্তির মালিকাধীন রাইস মিলে কীভাবে সরকারের তালিকায় এলো স্বাভাবিকভাবেই তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। 
তদন্তকারী সংস্থার দাবি বাকিবুরের মডেলে আটা কল থেকে রেশনে পৌছানোর আগেই তা পাচার করা হত। ভুয়ো মাস্টার রোল দেখিয়ে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের টাকাও অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরিমান কোটি কোটি টাকা। রেশন দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে সামনে আসা তথ্য বলছে সরকার, প্রশাসনের গোচরেই ভুয়ো কৃষকের তালিকা তৈরি করা হতো, আদৌ তাঁরা সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রী করেননি অথচ কৃষি সমবায় সমিতির তালিকায় তাঁদের নামে ঢুকিয়ে দেওয়া হত। রেশন কাণ্ডে ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ দালাল চক্রের মাধ্যেই গত এক দশক ধরে চলছে এই কারবার। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি’র দাবি, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীন খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরে শুধু নিয়মিত আনাগোনাই নয় রীতিমত প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন ধৃত বাকিবুর রহমান। সেই মডেলেই একেক জেলায় এককেজন এই চক্রের পাণ্ড ছিল। যেমন সুন্দরবন এলাকায় দীপেশ ও হীতেশ চন্দক।
এর আগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সূত্রেই জানা গিয়েছিল প্রায় ছয় বছর আগেই নবান্নে, এমনকি খাদ্য দপ্তরেও গুরুতর অভিযোগ জমা পড়েছিল- দক্ষিন চব্বিশ পরগণার দুটি গুদাম থেকেই প্রায় ২০০ কোটি টাকার চাল রীতিমত ‘উধাও’ হয়ে গেছিল। সেই অভিযোগ সামনে আসার পরেও কার্যত নিস্পৃহই ছিল রাজ্য সরকার। খাদ্য দপ্তরের তরফে একটা লোক দেখানো তদন্ত হয়েছিল, কয়েকজন আধিকারিককে ‘শোকজ’ করা হয়েছিল। কিন্ত ২০০ কোটি টাকার চাল রেশন দোকানো পৌছানোর আগেই উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা তদন্ত পরিকল্পিতভাবেই ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল।

Comments :0

Login to leave a comment