RICKSHAW WORKERS HOOGLY

টোটো কিনতে রিকশা শ্রমিকদের ঋণের দাবিও তুলবে ইনসাফ ব্রিগেড

রাজ্য জেলা

৭ জানুয়ারি ব্রিগেডের ফেস্টুন। রিকশাচালকদের হাতে ‘গণশক্তি’।

শুভ্রজ্যোতি মজুমদার

‘রিকশা যাবেন?’ 
চেনা এই স্বরধ্বনি কেমন যেন হারিয়ে যাচ্ছে। বর্ষশেষের পড়ন্ত বিকেলে যাত্রীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন রিকশাচালকেরা। কিন্তু টোটো ও অটোর সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে পেশা হারাতে চলেছে রিকশা। হেলদোল নেই সরকারের। 
এককালে ভোর চারটের কনকনে শীত হোক বা রাতের নির্জনতা হঠাৎ কোন স্টেশনে নামলে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর একমাত্র বাহন ছিল রিকশা। কিন্তু আজ আমি আপনি সহজে ও সস্তায় পৌঁছানোর বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছি টোটোকে। টোটো শ্রমিক আর রিকশা শ্রমিকদের শ্রমস্বার্থে পার্থক্য নেই। কিন্তু বাস্তব হলো সময়ের সঙ্গে রিকশা শ্রমিকদের পেশা অবলুপ্তির পথে এসে দাঁড়িয়েছে। 
হুগলী জেলার পান্ডুয়া, ব্যান্ডেল, হুগলী, চুঁচুড়া, চন্দননগর, ভদ্রেশ্বর, বৈদ্যবাটি, শ্রীরামপুরে রিকশা অনেকটাই কমে গেছে এক দশকে। অনেক ক্ষেত্রেই রিকশা স্ট্যান্ড দখল করেছে টোটো। রিকশা বন্ধ হলে চালকরা খাবেন কী? 
সরকার এই রিকশা চালকদের কথা ভাবে না। একটা উদাহরণ দিলে স্পষ্ট হবে। আগে হুগলী জেলার অন্তর্গত পান্ডুয়া স্টেশন, বর্ধমান জংশনে বেশ কয়েক হাজার রিকশা চলত। রিকশার নির্দিষ্ট রুট ও ছিল। আজ তার কিছুই অবশিষ্ট নেই, অনেকটাই দখল হয়ে গিয়েছে টোটো ও অটোর দ্বারা। 
হুগলী জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার রিকশা চালকরা হলেন ভূমিহীন সহায় সম্বলহীন গরিব মানুষ। তাদের অন্যত্র কাজের সুযোগ নেই। এরমধ্যে বন্ধ কলকারখানার বা চটকলের শ্রমিকরা যেমন আছেন, উদ্বাস্তু মানুষ থেকে গৃহহীন গরিব মানুষ আছেন। যাঁদের সহায় বলতে কিছুই নেই। 
বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে চন্দননগর স্টেশনেও রিকশা ও ভ্যানচালক ইউনিয়ন যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। চন্দননগর পৌর নিগমের বামপন্থী পৌরবোর্ডের ও চন্দননগরের শ্রমিক নেতৃত্ব পাশে থাকায় শক্তিশালী হয়েছিলো রিকশা ইউনিয়ন। সরকার সেই সময় স্বল্প সুদে বেশি কিস্তিতে লোনের সুযোগ দিয়ে রিকশা কিনে দিতো। পৌরসভা ও কর্পোরেশ গুলি থেকে সেই সুযোগ পেয়ে অগনিত গরিব মানুষ আর্থিক ভাবে স্বনির্ভরতার সুযোগ পেয়েছিলেন। সরকারি উদ্যোগে টোটো অটো ইউনিয়নের সম্পাদকদের নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটিও গঠিত হয়েছিল। শ্রমজীবীর মধ্যে সমন্বয় তৈরির কাজে প্রশাসন সক্রিয় ছিল। 
২০১১ সালে পালাবদলের পর তৃণমূল সরকারে আসার পর নীতির বদল হয়। শ্রমজীবী মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই নিয়ে নতুন সরকার অগ্রহী ছিল না। তারপর মস্তানি জুলুমবাজি ও সরকারি নীতির প্রভাবে ক্রমশ রিকশা ইউনিয়ন দুর্বল হতে শুরু করে। 
হুগলী জেলা রিকশা ও ভ্যানচালক ইউনিয়নের চন্দননগর শাখার সম্পাদক ও পেশায় রিকশাচালক গণেশ পাশোয়ান জানান, চন্দননগরের রিকশা চালকদের সমস্যা তো আর গোটা পশ্চিমবঙ্গের থেকে আলাদা নয়। বিজ্ঞানের যুগে যখন একটা ছোট্ট বোতাম টিপে মানুষ চাঁদে ও মঙ্গলগ্রহে রকেটে চেপে চলে যাচ্ছে তখন একজন মানুষ নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে প্যাডেল টেনে অপর মানুষজনকে বয়ে নিয়ে চলেছে এটা সমাজের ও দেশের লজ্জা। রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকার নানারকম প্রকল্প চালু করেছে যেমন লক্ষ্মীর ভান্ডার, প্রধানমন্ত্রী আবাস ইত্যাদি। টাকা পয়সা দিয়ে বাড়ি হচ্ছে দেখতেও পাচ্ছি। রিকশা চালকেরা ঝুপড়িতে থাকেন। তাঁদের জমির কাগজ নেই তাই হয়ত এইসব প্রকল্পের সুযোগ নেই। তা বলে কি তাদের সামাজিক সুরক্ষার অধিকার নেই? টোটোর সঙ্গে আমরা পাল্লা দিতে পারছি না। 
পাশোয়ান বলছেন, বামফ্রন্ট সরকার যথাসাধ্য গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এই সরকার কি পারে না তাদের পাশে দাঁড়াতে? রিকশা চালকদের আর্থিক সাহায্য দিলে তারা টোটো কিনে চালাতে পারে। সরকার কি এ ব্যাপারে দেখতে পারে না?  ১ লক্ষ ৮০ হাজারের মধ্যে টোটো মেলে। 
রিকশা শ্রমিক গনেশ ভট্টাচার্য, পরেশ ধর জানান গোটা দিনে ১০০ টাকাও আয় হয় না। চন্দননগরে ঝুপড়ির ভাড়া ৩০০০ টাকার ওপর। তার ওপর শীতকাল পড়েছে, হাফ ধরে যায়। সর্দি বসে গেলে ডাক্তার বদ্যির খরচ বিস্তর। না ইসএসআই আছে না কিছু। চিকিৎসার সুযোগ নেই। কিছু মানুষ ভালোবাসেন, মালপত্র বয়ে দিই, এই করেই কোনক্রমে টিকে আছি। 
হুগলী জেলা রিকশা ও ভ্যানচালক ইউনিয়নের জেলা সাধারণ সম্পাদক ঐকতান দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি এঁদের ই-রিকশা বা টোটো দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এই শ্রমিকরা সহায়সম্বলহীন। এঁদের অন্যত্র কাজ খুঁজে পাওয়ার সুযোগ নেই। এঁদের জন্য স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদী কিস্তিতে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকেই। এটুকু কি সরকার করতে পারবে না? এঁরাও তো এই দেশেরই নাগরিক তারা কি তাদের অধিকার পাবেনা? 
ইনসাফের দাবিতে আজ ডিওয়াইএফআই সোচ্চার হচ্ছে। আগামী ৭ জানুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে রিকশা চালকদের দাবিও উঠবে।

Comments :0

Login to leave a comment