KMC WORKER'S SALARY

কর্পোরেশন আর ঠিকাদারি সংস্থার দড়ি টানাটানি
বেতন পাচ্ছেন না কর্মীরা

কলকাতা

KMC SALARY BENGALI NEWS

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেতন দিতে হবে সমস্ত অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীকে। এই মর্মে নোটিশ ঝুলিয়েছেন কলকাতা কর্পোরেশনের মিউনিসিপ্যাল কমিশনার। নির্দেশ অমান্য হলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। 

ঠিকাদারি সংস্থাগুলির দাবি, কর্পোরেশনের তরফে দীর্ঘদিন ধরে টাকা আটকে রাখা হয়েছে। তাই শ্রমিক কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। 

এই টানাপড়েনে সমস্যায় পড়েছেন ঠিকাদারি সংস্থায় নিযুক্ত শ্রমিক কর্মচারীরা।

২ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না পলতা জলপ্রকল্পে কর্মরত ৩০ জন অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মী। কাজের পর্যায়ক্রমে তাঁদের বেতন মাসে ৮ থেকে ১৪ হাজার টাকা। চেন্নাইয়ের একটি ঠিকাদারি সংস্থার অধীনে কর্মরত তাঁরা। ডিসেম্বর থেকে তাঁদের বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। সংস্থার তরফে তাঁদের বেতন এক থেকে দেড়মাস দেরিতে দেওয়া শুরু হয়। মাঝে কিছুদিন অবস্থার উন্নতি হলেও, মার্চ মাস থেকে মাইনে পাচ্ছেন না এই কর্মীরা।

প্রতিবাদে সিআইটিইউ’র নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখান এই কর্মীরা। দক্ষিণ ভারতীয় সংস্থাটির অফিসে গিয়েও বিক্ষোভ দেখানো হয়। আলোচনার টেবিলে বসে সংস্থার তরফে কর্মচারীদের বলা হয়, কর্পোরেশনের তরফে ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাস অবধি বকেয়া মেটানো হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে কর্পোরেশনে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকলেও, এই সময়কালের ‘ইনভয়েস ক্লিয়ার’ করেনি কর্পোরেশন। তার ফলেই বেতন নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

কর্মচারীরা এর পর সংস্থার উপর চাপ দিয়ে বলেন, এই গোটা বক্তব্য লিখিত আকারে জানাতে হবে তাঁদের। সেই মতো মঙ্গলবার সংস্থার তরফে নোটিশ দিয়ে বকেয়া রাখার জন্য কলকাতা কর্পোরেশনকে দায়ী করা হয়েছে। বকেয়ার বিভিন্ন তথ্য পেশ করা হয়েছে।

অপরদিকে কলকাতা কর্পোরেশনের তরফেও একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে ৪ এপ্রিল। মিউনিসিপ্যাল কমিশনারের নামে জারি হওয়া সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘‘কলকাতা কর্পোরেশনের নিজস্ব এবং ঠিকাদারি সংস্থার অধীনে কর্মরত কোনও কর্মীর বেতন আটকে রাখা যাবে না। প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন দিতে হবে। এর অন্যথা হলে শাস্তির মুখে পড়বেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিকরা।’’

এই পরস্পর বিরোধী অবস্থানে আতান্তরে পড়েছেন অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক কর্মচারীরা। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, কর্পোরেশনের বরোগুলিতে কর্মরত চুক্তিভিত্তিক মালিরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন পাচ্ছিলেন না। তাঁদের নিয়ে মার্চ মাসে কলকাতা কর্পোরেশনের বাজেট অধিবেশন চলাকালীন বড় আন্দোলন সংগঠিত করেছিল সিআইটিইউ। আন্দোলনের চাপে মেয়র বাধ্য হন নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করতে। তারপরেই সার্কুলার জারি করেন মিউনিসিপ্যাল কমিশনার। কিন্তু মৌলিক সমস্যা, অর্থাৎ, ঠিকাদারি সংস্থাগুলির বকেয়া না মেটানোয় পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে নি। 

কর্মচারী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলছেন, কলকাতা কর্পোরেশনে স্থায়ী নিয়োগ বন্ধ দীর্ঘদিন ধরে। বিভিন্ন বিভাগে ঠিকাদারদের অধীনে কর্মরত কর্মীর সংখ্যা ১৭ হাজারের কাছাকাছি। এই কর্মচারীদের দিয়ে কম বেতনে স্থায়ী কর্মীদের সমান কাজ করানো হয়। বেতন কম হওয়ায় তাঁরা এমনিতেই সমস্যায় ভুগছেন। এখন কর্পোরেশনের অপদার্থতায় বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, ইংরেজ আমলে তৈরি পলতার ইন্দিরা গান্ধী জলপ্রকল্প ছাড়া কলকাতা শহর অচল। দৈনিক ২৬২ মিলিয়ন গ্যালন জল সরবরাহের ক্ষমতা সম্পন্ন এই জলপ্রকল্প প্রতিদিন গড়ে ২৪০ মিলিয়ন গ্যালনের কাছে জল সরবরাহ করে থাকে। এই জলপ্রকল্পে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীরা ‘এমারজেন্সি সার্ভিস’র আওতায় পড়েন। কিন্তু তারপরেও তাঁদের বেতন আটকে যাওয়ায় কলকাতা কর্পোরেশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। 

দীর্ঘদিন ধরে কলকাতা কর্পোরেশনের ঠিকা শ্রমিক কর্মচারীদের নিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করছে সিআইটিইউ। সিআইটিইউ’র সংগঠক সৌম্যজিৎ রজক জানিয়েছেন, ‘‘এই গোটা ঘটনায় কলকাতা কর্পোরেশনের দ্বিচারিতা স্পষ্ট। তাঁরা সার্কুলার জারি করে শ্রমিক দরদী সাজার চেষ্টা করছে। কিন্তু ঠিকাদারি সংস্থার নোটিশ অনুযায়ী, কলকাতা কর্পোরেশন টাকা আটকে রাখার ফলেই সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এই কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত না হলে সিআইটিইউ’র তরফে বড় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’’

 

Comments :0

Login to leave a comment