মধুসূদন চ্যাটার্জি : বাঁকুড়া
প্রতিবেশীর হাতে খুন হলেন বাঁকুড়া মিশন হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মথুরামোহন দত্ত (৬৮) ও তাঁর ছেলে শ্রীধর দত্ত( ২৭)। এই ঘটনায় তাঁর স্ত্রী মল্লিকা দত্ত আশংকাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁকে কলকাতার এসএসকেএমে পাঠানো হয়েছে। রবিবার রাতে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে বাঁকুড়া শহরের নতুনচটি এলাকায় ১১নং ওয়ার্ডের মুচি পাড়ায়। এই ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারন কয়েকদিন আগেই বাঁকুড়া শহরের ধলডাঙ্গা এলাকায় এক নৈশ প্রহরীকেও খুন করা হয়। পুলিশ এখনও অপরাধীকে পাকড়াও করতে পারেনি। এই ঘটনায় একমাসের মধ্যেই ফের জোড়া খুনের ঘটনা শহরে ঘটল। স্থানীয় মানুষজনের বক্তব্য রবিবারের রাতে মুচি পাড়ায় যে ঘটনা ঘটে পুলিশ বহু আগেই তার সমাধান করে দিতে পারত।
ঘটনা হল মথুরামোহন দত্তের বাড়ি লাগোয়া পিন্টু রুইদাসের বাড়ি। পিন্টু রুইদাস পেশায় লটারি বিক্রেতা। তার দুই ছেলে গাড়ি চালক। অভিযোগ যে পিন্টু রুইদাস মথুরামোহন দত্তের জায়গার একটা অংশ দখল করে বাড়ি বানিয়েছেন। সেই বাড়ি আবার পৌরসভার হাউস ফর অল প্রকল্পে দেওয়া। বাড়ির দোতলা এই অংশটি একেবারে মথুরামোহন দত্তের বাড়ির লাগোয়া। মথুরামোহন দত্ত এই জায়গা ছেড়ে বাড়ি করার কথা বললে পিন্টুরা শোনেনি। এই নিয়ে বেশ কয়েকবার বচসাও হয়েছে দুজনের মধ্যে। ঐ শিক্ষকের বাড়িতে তিনি ও তাঁর স্ত্রী ও ছোট ছেলে থাকতেন। এর আগেও পিন্টু রুইদাস তাঁর উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। বাঁকুড়া থানায় এই নিয়ে বেশ কয়েকবার ঐ শিক্ষক অভিযোগ দায়েব করলেও পুলিশ কিছুই ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি উচ্চ আদালতে মামলা করলে বিচারকের রায় তাঁর পক্ষে যায়। আদালত থেকে অবৈধভাবে করা ঐ বাড়িটি ভেঙ্গে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এলাকার মানুষের বক্তব্য স্থানীয় তৃণমূলের কাউন্সিলার ও বাঁকুড়া পৌরসভার চেয়ারপ্যার্শেন অলকা সেনমজুমদারও বিষয়টি নিয়ে কোন গুরুত্ব দেননি। উল্টে স্থানীয় তৃণমূলের লোকজন পিন্টুর পক্ষে দাঁড়ায়।
রবিবার রাত ৮টা নাগাদ মথুরামোহন দত্তের ছেলে এলআইসির কর্মচারী শ্রীধর দত্ত রাতের খাবার এনে ঘরে ঢোকার মুহুর্তের পিন্টু রুইদাস, তাঁর স্ত্রী দুই ছেলে মহেশ্বর ও সিদ্ধেশ্বর তাঁর উপর চড়াও হয়। মথুরাবাবু ও তাঁর স্ত্রী ঘর থেকে বের হলে তাঁদের উপরও হামলা করেন তারা। কাটারি, কুড়ুল, লাঠি, রড দিয়ে তিনজনকে রক্তাক্ত করা হয়। ঘরের গেটেই খাবার ফেলে দেওয়া হয়। জানা গেছে এই হামলার সময় মথুরা বাবু ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনননি। রক্তাক্ত অবস্থায় প্রায় এক ঘন্টা এঁরা পড়ে ছিলেন। পরে বাঁকুড়ার থানার পুলিশ এসে এঁদের উদ্ধার করে বাঁকুড়া হাসপাতালে ভর্তি করে। রবিবার রাতেই শ্রীধর মারা যান। সোমবার সকালে মথুরা মোহন দত্ত মারা যান। সোমবার সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল পুলিশ বাড়িটিকে সিল করে দিয়েছে। বাড়ির গেটেই চাপ, চাপ রক্ত ও খাবার পড়ে আছে। কেউ মুখে কোন কথা বলছেনা। পিন্টু রুইদাসের পরিবারের কেউ বাড়িতে নেই। তারা পলাতক। মথুরাবাবুর বড় ছেলে সায়ন মুম্বাই এ থাকেন তিনি আসছেন বলে জানা গেছে। অতীতে এরকম নৃশংস খুন বাঁকুড়া শহরে হয়নি বলে মানুষের বক্তব্য।
Comments :0