২০০৫ সালের ৪ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটে চলেছে এই অভিযোগে রাজ্য এবং সংসদে করেছেন মমতা ব্যানার্জি। সেই সময়কালে লোকসভার অধ্যক্ষের আসনের দিকে একগুচ্ছ কাগজও তিনি ছোঁড়েন। তার দাবি ছিল ওই কাগজে অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে।
বুধবার ধর্মতলার সভায় শাহের ভাষণে অনুপ্রবেশের পাশাপাশি গুরুত্ব পেয়েছে রামমন্দির, সিএএ প্রসঙ্গ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দাবি কেন্দ্র রাজ্যকে বিভিন্ন প্রকল্পের ৯ বছরে প্রায় ৮ লক্ষ কোটি টাকা পাঠিয়েছে। দুর্নীতির জন্য তা গরিব, সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছায়নি।
শাহ বলেছেন, ‘‘যে রাজ্যে এত অনুপ্রবেশ হয় সেখানে উন্নয়ন হতে পারে না।’’
বামপন্থীরা যদিও মনে করিয়েছেন বারবারই যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ হলে দায় কেন্দ্রীয় সরকারেরও। কেননা কেন্দ্রীয় বাহিনী বিএসএফ সীমান্ত রক্ষারই দায়িত্বে?
তারপরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে শোনা যায় সিএএ প্রসঙ্গ। সংসদে সংখ্যার জোরে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী পাশ করালেও এখনও বিধি চালু হয়নি। দলের সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরকে পাশে বসিয়ে লোকসভা নির্বাচনের আগে অমিত শাহ ঘোষনা করেন যে রাজ্যে সিএএ লাগু হবে। মতুয়া প্রধান এলাকায় লোকসভা ভোটের আগে ফের এই প্রচারে জোর দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর দল।
শাহ বলেন, ‘‘সিএএ দেশের আইন। এই আইন কেউ আটকাতে পারবে না’’। নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসামে প্রায় বাংলাভাষীদের বন্দিশিবিরে আটকে রাখা হয়েছে।
ইতিহাস পালটানোর চেষ্টায় শাহ বলেন, ‘‘কংগ্রেস সরকার রামমন্দির হতে দিচ্ছিল না, নরেন্দ্র মোদী সেই কাজ সম্পূর্ণ করেছেন।’’ বাস্তবে সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘদিন মামলা চলেছে বাবরি মসজিদ ভেঙে রামমন্দির তৈরি নিয়ে। রায়ে মন্দিরের অনুমতি মিললেও শীর্ষ আদালত মসজিদ ভাঙাকে অপরাধ বলেই চিহ্নিত করেছিল।
কলকাতায় দাঁড়িয়ে রাম মন্দিরের প্রসঙ্গ টেনে ধর্মীয় মেরুকরণকে যে আরও স্পষ্ট করতে চাইলেন কেন্দ্রীব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তা স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, ‘‘২০২৪’র ২২ জানুয়ারি প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন নরেন্দ্র মোদী।’’
দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করলেও তদন্তের অগ্রগতিতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভূমিকা নিয়ে নীরব থেকেছেন তিনি। শাহ বলেছেন, ‘‘তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি বাংলাকে সারা দেশের কাছে বদনাম করেছে। সোনার বাংলা গড়তে পারে কেবল বিজেপি।’’ লোকসভা ভোটে সমর্থনের আহ্বান জানান শাহ।
বামপন্থীরা বারবারই প্রশ্ন তুলেছেন যে ২০১৪’র পরে তৃণমূলের দুর্নীতি বাড়ল কেন। কেনই বা আদালতের নির্দেশে তদন্তে কেন্দ্রীয় সংস্থা নামলেও আটকে যাচ্ছে অগ্রগতি। এমনকি কলকাতা হাইকোর্টে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে ইডি সিবিআই’কে।
এদিনের সভা থেকে ২০২৬ এর লোকসভা নির্বাচনে ২০০ পার করার স্লোগান ফের শোনা গিয়েছে শাহের মুখে। ২০২১ সালেও বিজেপি একই স্লোগান দিয়েছিল। কিন্তু ৭৭-এ আটকে যেতে হয়। তারপর অনেক বিধায়ক বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গেলেও, বিধানসভার খাতায় তাঁরা বিজেপি। যেমন মুকুল রায়।
এদিন সভাস্থলে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা একটি চিঠি পূরণ করানো হয়। বাংলায় লেখা ফরমটিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে যারা নিজেদের বঞ্চিত বলে দাবি করছেন, সমাবেশে আসা বিজেপি সমর্থকরা সেটি পূরণ করেন। কয়েকটি ড্রপ বক্স রাখা হয়। সেখানে ফরম গুলি পূরণ করে ফেলেন সভায় আসা বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা।
Comments :0