গল্প | মুক্তধারা
অন্য ভারত
মনীষ দেব
ক্লাস এইটের কাজল ক্লাসে ছবি আঁকাতো, মাটির মুর্তি গড়ত। খুশি হয়ে সেভেন ক্লাসের কাজলের দুগ্গা প্রতিমা পুজো করে ছিল, পাড়ার খুদেরা — সেই পুজোয় নেই আচার, শুধু উৎসব, নেই ধর্ম, কী আনন্দ।
বাবার বিয়োগে — যে ইস্কুলের চৌকাঠ কাজল ক্লাস এইটেই পেরিয়ে গিয়ে ছিল। সেই ইস্কুলের চৌকাঠ কালের অন্তিম যাত্রায় বন্ধ। এখন ইস্কুলের পর ইস্কুলের এই অন্তর্জলীযাত্রায় সাথী প্রতিদিন সবাই — কী আনন্দ।
কিন্তু কাজল — যার দশ ক্লাস পড়া হল না, বছর দশেক আগেই পড়া ছেড়ে পরিযায়ী। তবে মাস দশেকেই জোগান থেকে মিস্ত্রি — পাঞ্জাব, গুজরাট, মাদ্রাজে। গাঁয়ের ইস্কুলে এখন তালা এক এক করে গ্রামটাই পরিযায়ী হয়ে উড়ে গেছে — কী আনন্দ।
এবং আজ কাজল গাঁয়ে ফিরবে; শিল্পী কাজল! — তাই সাজো সাজো রব। মন্ত্রী, সান্ত্রী, এস পি, ডি এস পি, ডি এম সব হাজির — কাজলকে অভিবাদন জানাতে, অপরাহ্নের আলোয় কাজল ফিরল কফিন বন্দী। কান্নায় পাথর গ্রাম, স্তব্ধ নিরুত্তর —
কেন এমন হল?
— উপসী কাজল।
পবিত্র ঈদের নমাজ পড়ে ছিল — কাজল।
সূর্যাস্তের শেষ আলোয়।
কেউ বা প্রথমবারের জন্য জেনে ফেলে ছিল — কাজল শেখ — কাজল বিধর্মী — তাই পিটিয়ে লাশ করে দিতে সময় নষ্ট করেনি অন্ধধর্ম। রাষ্ট্র বলছে এহি আসলি ভারত — কী আনন্দ।
রমজান — কাজলের লাশ — আকাশে ঈদের চাঁদ — এক অন্য ভারত।
Comments :0