দীপশুভ্র সান্যাল: জলপাইগুড়ি
এক সময় শারদীয়া উৎসবের আগে জলপাইগুড়ির দিনবাজার, কদমতলা, কামাড়পারা মোড় ভিড়ের চাপে মুখর থাকত। মেটেলি, মালবাজার, নাগরাকাটা, ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, বেলাকোবা থেকে চা-বাগানের শ্রমিকরা হাতে নগদ বোনাস নিয়ে বাজার করতে আসতেন। নগদ টাকার কারণে কেনাকাটার আনন্দও আলাদা ছিল, দোকানপাটে ঠেলাঠেলি, আলো-ঝলমলে সাজ ও উৎসবের আবহ শহরকে প্রাণবন্ত করত।
দিনবাজারের শাড়ির দোকান মদনলাল, ব্রীজমোহন, বিজয় ক্লথ স্টোর্স, অনিল ক্লথ স্টোর্স, ন্যাশনাল, পবন ক্লথ স্টোর্স, উল হাউস এখনও পরিচিত। পুরনো জুতোর দোকান ভারত সু ও বাটা আছে, বাকি অনেক দোকান বিক্রি হয়েছে। নতুন দোকান তৈরি হলেও শপিংমল ও অনলাইন শপিংয়ের দৌরাত্ম্যে জুতোর ব্যবসাও মার খাচ্ছে।
একসময় নামী-দামী টেলারিং দোকানগুলো ভোর থেকে রাত অবধি সেলাই মেশিনের আওয়াজে মুখর থাকত। মেয়েদের টেলারিং দোকানে এখনো ভিড় থাকে, কিন্তু ছেলেদের দোকানে নেই। অধিকাংশ ছেলে রেডিমেড জামাকাপড় পরায় এবং পরিবারের বয়স্কদের জন্যও রেডিমেড কেনায়, প্রথাগত দর্জিরা কাজ হারাচ্ছেন। শহরের পুরনো টেইলার দোকান শিল্পী টেইলার্স, স্মার্টনেস টেইলার্স, মডার্ন টেইলার্স, গৌরীশংকর টেইলার্স এবং খলিফা দর্জিরা একসময় অত্যন্ত পরিচিত ছিলেন।
শহরের প্রবীণ দর্জিরা জানান, “আগে শারদীয়া উৎসবের আগে এত কাজ থাকত যে হাত সামলানো যেত না। এখন রেডিমেড জামাকাপড়ের ভিড়ে কাজ নেই।” ব্যবসায়ী রাজীব আগরওয়াল বলেন, “বাজার না বসলে অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়াবহ হবে। একসময় খলিফারা আমাদের দোকানের প্রাণ ছিলেন।”
সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও শারদীয়া উৎসবের বাজার শহর ও গ্রামকে একত্রিত করত। নগদ বোনাস হাতে পেলে চা-বাগানের শ্রমিকরা সরাসরি বাজারে আসতেন, যা ব্যবসা ও সামাজিক মিলন দুটোই বর্ধিত করত। এখন ব্যাংক ট্রানজাকশন ও অনলাইন শপিং-এর কারণে এই মিলনও কমে গেছে।
পূজোর বাজার ও দর্জিশিল্প— দুটোই জলপাইগুড়ির ঐতিহ্যের অংশ। যদি নগদ বোনাসে ক্রেতাদের আগমন ফিরিয়ে আনা যায়, তবে হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টানো সম্ভব; নইলে ধীরে ধীরে এগুলো স্মৃতির পাতায় স্থান পাবে।
Comments :0