‘’শান্তিতে ভোট দিন। শান্তির জন্য ভোট দিন। শান্তি রক্ষা করতে সম্প্রীতি, ঐক্য দরকার।’’ মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন থেকে রাজ্যবাসীর কাছে এই আবেদন রাখলেন মহম্মদ সেলিম।
সেলিমের কথায়, ‘‘দাঙ্গা বাঁধাতে চাইছে বিজেপি এবং তৃণমূল। মানুষ চাইছে চোর চোট্টাদের হারাতে।’’ তিনি স্পষ্ট করেছেন যে বিজেপি বিরোধী দলগুলির মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ নীতিগতভাবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ’র বিরোধী। আর মমতা ব্যানার্জিরা এখন সিএএ-কে সমর্থনের কথা বলছেন।
উল্লেখ্য, সিএএ-তে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের কথা বলা রয়েছে। যা ধর্মনিরপেক্ষতার বোঝাপড়ার বিরোধী।
সেলিম বলেন, ‘‘চতুর্থ দফার নির্বাচনে তৃণমূল মরিয়া হয়ে হিংসার পথ ধরার চেষ্টা করেছে। ভোটদানে বাধা দিচ্ছে, তৃণমূল তৃণমূলকে খুন করছে। বিজেপি এবং তৃণমূল দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে। সাম্প্রদায়িক হিংসার চেহারা দিতে চাইছে।’’
চতুর্থ দফা নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে সেলিম বলেন, ‘‘বিজেপি এবং তৃণমূলের নেতারা হিন্দু মুসলমানে মানুষকে ভাগ করে একে অপরের মধ্যে ভোট চালাচালি করার চেষ্টা করছে। প্রকাশ্যে নোংরামিতে নেমে এসেছে দুই দল। ভোটের দিন বোঝা যাচ্ছে না কে বিজেপি-কে তৃণমূল। অথচ বর্ধমানে দুই দলের নেতারা বলতে পারছে কে হিন্দু কে মুসলিম।’’
সম্প্রতি অভিষেক ব্যানার্জি বলেছেন তিনি সিএএ-কে সমর্থন করেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘ভাইপো এখন বলছে সিএএ-কে সমর্থন করেন। প্রথম থেকে বিজেপি-আরএসএস এবং তৃণমূল মনে করেছিল এনআরসি’র ভয় দেখিয়ে ২০২১’র বিধানসভার পুনরাবৃত্তি হবে। সিএএ’কে সমর্থন করলে কেন তখন ক্যা-ক্যা ছি-ছি করল? সিএএ আসলে আরএসএস-বিজেপি’র স্লোগান। দেশভাগের ক্ষতকে তুলে ধরে বাঙালি জাতিসত্ত্বাকে বিভাজিত করতে চায় বিজেপি-আরএসএস।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘মমতা ব্যানার্জি ভোটার লিস্ট নিয়ে ডেপুটি স্পিকার আটওয়ালের মুখে ছুঁড়ে মেরেছিলেন। বলেছিলেন বাংলাদেশিদের নাম আছে। তখন অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে ছিলেন। নির্বাচনের সময় কি ভাবে এই স্ফুলিঙ্গ কি ভাবে দাবানলে পরিনত হয় তা আসামে দেখেছি এনআরসি ডিটেনশন ক্যাম্পের মাধ্যমে। বাংলাকে সেই পথে নিয়ে যেতে চাইছে মমতা। রাজ্যের মানুষ তাঁকে ক্ষমা করবেন না।’’
সেলিম স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন ‘ইন্ডিয়া’ নীতিগত ভাবে সিএএ’র বিরোধী।
তিনি বলেন, ‘‘নীতির কথা মমতা বলতে পারেন না। কাজ, শিক্ষা, মানুষের জীবনযন্ত্রণার কথা না বলে তামাশা করছেন মমতা।’’
কয়লা পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ‘লালা’ মঙ্গলবার জামিন পেয়েছেন। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে জামিন পেয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। এই দুই ঘটনা প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘মমতা ব্যানার্জি সেটিং করে ভাইপোর নাম কয়লা পাচারের চার্জশিট থেকে বাদ দিলেন। লালাকে জামিন করানো হলো বাঁকুড়ায় ভোট করানোর জন্য। আর সিএএ’কে সমর্থন করায় জীবনকৃষ্ণ জামিন পেয়েছেন। ভাইপোকে বাঁচাতে গোটা রাজ্যটাকে বাজি রেখেছেন মমতা।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘একজন ব্যাক্তির দুটো সচল প্যান কার্ড আধার কার্ড থাকা বেআইনি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী চৌকিদারকে এমন তুষ্ট করেছে যে ভাইপো বউয়ের দুটো সচল প্যান কার্ড থাকা সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’’
এদিন ফলতা, বিষ্ণুপুরে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআই(এম) প্রার্থী প্রতীক উর রহমানের সমর্থনে মিছিল করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ দিয়ে ডায়মন্ড হারবারে পোস্টার লাগাতে দিচ্ছে না তৃণমূল। গণতন্ত্রের সর্বনাশ করছে। মানুষ গোটা রাজ্যের চোর দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে লড়ছেন। প্রতিদিন তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ্যে আনছেন তারা।’’
মঙ্গলবার রাজ্যপালের নামে নতুন করে শ্লীলতাহানির অভিযোগ সামনে এসেছে। এই নিয়ে সেলিমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘হাঁসখালি, পার্কস্ট্রিট কান্ডের তদন্ত হয়নি। ফেক ভিডিও নিয়ে তৃণমূল বিজেপি দড়ি টানা টানি করছে। যখনই কাজের প্রশ্ন, রুটি, রুজির সমস্যা, মানুষের জীবনজীবিকার কথা সমানে আসছে তখনই সেই সব ভুলিয়ে দিতে অনেকে এই কৌশল নিচ্ছে।’’
Salim
দাঙ্গা চাইছে তৃণমূল-বিজেপি, চোর-দাঙ্গাবাজদের হারাতে চাইছেন মানুষ: সেলিম
×
Comments :0