মিনাখাঁয় নিহত শিশু, কেশপুরে জখম তৃণমূলী

রাজ্য

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP মিনাখাঁয় বোমার আঘাতে মৃত কিশোরী

বোমায় কিশোরী খুন হয়ে যাচ্ছে মিনাখাঁয়। হাত, আঙুল উড়ে যাচ্ছে তৃণমূল কর্মীর কেশপুরে।
দিনেদুপুর অথবা সন্ধ্যায় গ্রামে দেদার বোমা পড়ছে। তৃণমূলের সশস্ত্র গোষ্ঠীসংঘর্ষে আতঙ্কিত মানুষ যে যেখানে পারছেন আশ্রয় নিচ্ছেন। কী বলছে তৃণমূল? মিনাখাঁয় বুধবার সন্ধ্যায় কিশোরী সোহানা খাতুনের খুনের পরে তৃণমূলের বিধায়ক ঊষা রানি মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া,‘‘আমি অল্প অল্প শুনেছি। পুরোটা জানি না। কে কী করেছে জানি না। আপনি আমার স্বামীকে ফোন করুন।’’ 


আর কেশপুরে দুপুর সাড়ে ১২টার ঘটনায় সেখানকার বিধায়ক, রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী শিউলি সাহা জানিয়েছেন,‘‘কারা করেছে তা পুলিশকে নিরপেক্ষ তদন্ত করে দেখতে বলেছি। সিপিএম করেছে, না তৃণমূল করেছে তদন্তের পরে বোঝা যাবে। শুধু বলি কিছুদিন হলো সিপিএম আবার মাথা তোলার চেষ্টা করেছে। এখন ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে।’’ সিপিআই(এম) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ কেশপুরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন,‘‘ওরা বলেন সিপিআই(এম) শূন্য। এখন তোলাবাজির কোটি কোটি টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে এবং গ্রাম দখলে রাখতে এক গোষ্ঠী আর এক গোষ্ঠীকে কায়দা করতে বোমা বন্দুকের গড় বানিয়েছে। নিজেদের সংঘর্ষের ঘটনাতেও সিপিআই(এম)’র ভূত দেখছে ওরা।’’


গ্রামে গ্রামে কাজ, বকেয়া মজুরি, ফসলের দামের দাবিতে কিংবা তৃণমূলের গরিব মানুষের টাকা লুটের বিরুদ্ধে মানুষ যখন পদযাত্রা করছেন, মুখ্যমন্ত্রীর দলের বাহিনী তখন গ্রামকে অস্ত্রের ভাঁড়ারে পরিণত করেছেন।

 
বুধবার, আর একবার প্রমাণ হয়েছে — মমতা-শাসনে পশ্চিমবঙ্গের জীবন, জীবিকা, শান্তি বিপন্ন। 
বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁয় তৃণমূলের মজুত করে রাখা বোমা ফেটে যায়। প্রচণ্ড শব্দ হয়। মানুষ আতঙ্কে ছুটোছুটি করেন। দেখা যায় বোমার আঘাতে ছিটকে পড়ে গেছেন সোহানা খাতুন(১০)। আরও গুরুতর আহত হন দুজন। বুধবার সন্ধ্যার ঘটনায় মুহূর্তে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে মিনাখাঁ থানার পুলিশ। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা সোহানা খাতুনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং থানার আঠারোবাঁকি এলাকায়। সে মায়ের সঙ্গে মামাবাড়িতে এসেছিল। 


এই ঘটনায় গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তৃণমূলের নেতা আবুল হোসেন গাইনের বাহিনীই বোমা মজুত করেছিল। গাইনের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। ‘ভয়ঙ্কর’ হিসাবেই এলাকায় পরিচিত এই তৃণমূলী। তাই গ্রামবাসীরা কেউই নিজেদের নাম বলতে চাননি। মিনাখাঁ থানার বকচোরা গাইনপাড়ার বাসিন্দা আবুল হোসেন গাইন। স্থানীয় বিধায়ক ঊষা রানি মণ্ডল এবং ব্লক সভাপতি আইয়ুব গাজি, তৃণমূল নেতা আইজুল গাজির ঘনিষ্ঠ ছায়াসঙ্গী গাইন। অভিযোগ সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। গ্রামে গ্রামে কাজ-মজুরির অভাব, তৃণমূলের দুর্নীতি, হাঙ্গামার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। সেকারণেই আতঙ্কের পরিবেশ কায়েম করতে নিজের বাড়িতে বোমা মজুত করে রেখেছিল আবুল হোসেন। এদিন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বিকট শব্দে কেপে ওঠে গোটা এলাকা। মজুত বোমা ফেটে গাইনের বোন জোহরা বিবির মেয়ে সোহানা মারা গিয়েছে। ঘটনার পরই গাইন পালিয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। তবে তার আগে গাইন পালানোর ‘সুযোগ’ পেয়েছে।
এদিনই দুপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে কেশপুরের চড়কায় তৃণমূলের এক কর্মীর ডান হাতের কবজির কিছু অংশ উড়ে গেছে। তার নাম রফিকুল আলি। আর একজন, সেখ মুন্নার ডান হাতের ৫টি আঙুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই ঘটনাটি ঘটে।

 স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, বোমের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছে সাতজন। রফিকুল আলির কবজি, শেক মুন্না নামে এক জনের হাতের পাঁচটি আঙুল বোমের আঘাতে উড়ে গিয়েছে। তাদের মেদিনীপুর মেডিক্যাআলে চিকিৎসা চলছে। গত ৩ নভেম্বর কেশপুর কলেজের দখলদারি নিয়েও তৃণমূল ছাত্রপরিষদ নামধারী বহিরাগত দুই দুর্বৃত্ত গোষ্ঠীর ব্যাপক মারপিট হয়। আহত হন তিন কলেজ পড়ুয়া। এদিনের সংঘর্ষের পিছনে আছে জগন্নাথপুর, বাঁশগেড়িয়া, শাঁকপুরসহ কিছু এলাকায় তোলা আদায়ের টাকা ও পঞ্চায়েতের বিভিন্ন খাতের বরাদ্দ টাকার কাটমানির ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে সংঘর্ষ হয়। এর সঙ্গে সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন, এলাকা দখল সহ নিজেদের গোষ্ঠীর প্রার্থীপদ দখলদারি রাখতে এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে গ্রামবাসীদের দাবি।


গ্রামবাসীরা বলেন, বিধায়ক শিউলি সাহাসহ পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশ মতো এখন গ্রামের সবাই তৃণমূল করে। আর গ্রামের তৃণমূলের কনভেনর হয়েছে শেখ আফগনি। শিউলি সাহা গোষ্ঠীর নেতা আফগনি। সঞ্চয় পান গোষ্ঠীর সঙ্গে বিধায়ক-আফগনি গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়েছে এদিন। তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে মমতা ব্যানার্জির শাসনে কেশপুর ব্লকে ১১জনের মৃত্যু হয়েছে। ২২০০-র বেশি সিপিআই(এম) কর্মী, সমর্থক জরিমানার চাপে ও সাজানো মামলায় ঘরছাড়া হয়। দুর্যোধন সামন্ত, উত্তম দোলই, বিনয় মান্ডি তিনজন সিপিআইএম সদস্য শহীদ হয়েছেন। একজন নিখোঁজ এখনেও। 
প্রসঙ্গত, গত সোমবার তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বীরভূমের সাঁইথিয়া থানার বহরাপুর গ্রামে জখম হয়েছে চোদ্দ বছরের এক বালক ও আঠাশ বছরের এক যুবক। জখম বালকের মা সাবিনা বিবি জানান,‘‘আমরা তৃণমূল করি। আমরা তুষার মণ্ডলের দল করি। যারা মেরেছে তারা সাবেরের লোক। আমার স্বামীকে মারতে এসেছিল। ওকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ছেলে, ভাইপোকে বোমা মেরেছে।’’ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা স্বীকারও করে নিয়েছে সাবের আলিও। বলেছেন, ‘‘দলের জেলা স্তরের একাংশ নেতাদের মদতেই এই গন্ডগোল চলছে।  দলের নেতারাই দলকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছে।’’ ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার ও গ্রাম থেকে বেশ কিছু বোমা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

Comments :0

Login to leave a comment