ব্র্যান্ডেড এবং পেটেন্ট করা ওষুধ আমদানির উপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা করলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে একথা ঘোষণা করা হয়েছে। মার্কিন শুল্কের জন্য ভারতের ওপর প্রভাব পড়তে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন ১ অক্টোবর থেকে এই নতুন শুল্ক নীতি চালু হবে।
উল্লেখ্য ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন যেই জিএসটি কাঠামো চালু হয়েছে তাতে বিভিন্ন ওষুধের দাম কমার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন জিএসটিতে ওষুধের দাম কমায় কিছুটা সুবিধা হয়েছিল সাধারণ মানুষের, কিন্তু ওষুধ তৈরি জিনিসের যদি দাম বেড়ে যায় তাহলে কি ভাবে ওষুধের দাম কমবে সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
আমেরিকা ভারতের ওষুধজাত পণ্যের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। শিল্প সংস্থা ফার্মাসিউটিক্যালস এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ২৪ অর্থবছরে ভারতের ২৭.৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ওষুধ রপ্তানির ৩১ শতাংশ বা ৮.৭ বিলিয়ন ডলার (৭৭,১৩৮ কোটি টাকা) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেছে। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে আরও ৩.৭ বিলিয়ন ডলার (৩২,৫০৫ কোটি টাকা) মূল্যের ওষুধ রপ্তানি করা হয়েছে।
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত ৪৫ শতাংশেরও বেশি জেনেরিক এবং ১৫ শতাংশ বায়োসিমিলার ওষুধ সরবরাহ করে। ডঃ রেড্ডি'স, অরবিন্দ ফার্মা, জাইডাস লাইফসায়েন্সেস, সান ফার্মা এবং গ্ল্যান্ড ফার্মার মতো সংস্থাগুলি তাদের মোট রাজস্বের ৩০-৫০ শতাংশ আমেরিকান বাজার থেকে আয় করে বলে বিভিন্ন পরিসংখ্যান সূত্রে খবর।
ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ভারতীয় আমদানির উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যার মধ্যে রাশিয়ান তেল ক্রয় অব্যাহত রাখার জন্য ২৫ শতাংশ 'জরিমানা'ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে গতকাল ট্রাম্প লিখেছেন, ‘২০২৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে, আমরা যে কোন ব্র্যান্ডেড বা পেটেন্ট করা ওষুধ পণ্যের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করব, যদি না কোনও কোম্পানি আমেরিকায় তাদের ওষুধ উৎপাদন কারখানা তৈরি করে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে ট্রাম্পের এই মন্তব্য আরোপে হুমকি। মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কোন ওষুধ তৈরি সংস্থা যদি আমেরিকায় তাদের কোন কারখানা খোলে তবে তাদের ওপর শুল্ক চাপানো হবে না। এখানেই স্পষ্ট ওষুধ তৈরি সংস্থা গুলোকে কার্যত বাধ্য করা হচ্ছে মার্কিন চাপের কাছে মাথা নত করার জন্য।
ফেডারেশন অফ মেডিকেল অ্যান্ড সেল্স রিপ্রেজেন্টেটিভস "অ্যাসোসিয়েশন" অফ ইন্ডিয়ার (FMRAI) -সহ সভাপতি শুভ্রাংশু ভট্টাচার্যের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বায়নের যেই প্রভাব উন্নয়ন শীল দেশের ওপর পড়ছে তা মার্কিন আগ্রাসন থেকে বোঝা যাচ্ছে। এই আগ্রাসনের প্রভাব ভারতের ওপর পড়ছে। আমরা এই শুল্ক মেনে নিচ্ছি না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন ভাবে ভারতের ওপর বোঝা চাপাচ্ছে আর ভারত সরকার আত্ম সম্পর্ণ করছে তাদের কাছে। ভারত সরকার বিদেশি ওষুধ তৈরি সংস্থাদের ক্ষেত্রে বাজার খুলে দিয়েছে। তারা এখানে এসে ওষুধ তৈরি করে লুঠে নিচ্ছে দেশের মানুষের কাছ থেকে। আর ভারতের সংস্থা বিদেশে ব্যবসা করতে গেলে সর্তের মুখে পড়তে চাইছে। আসলে ভারতের যেই ওষুধ তৈরি সংস্থা আছে সেই গুলোকে শেষ করে দেওয়া চক্রান্ত চলছে। বাজার দখল করতে চাইছে আমেরিকা, আর তাতে সাহায্য করছে এই সরকারের নীতি।’’
Comments :0