Usthi panchayat election

আর চোখ রাঙানিকে ভয় নয়, মুখ খুলছেন উস্থির মানুষ

জেলা

দীপাঞ্জনা দাশগুপ্ত দে

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ইতিমধ্যে সন্ত্রাসের জন্য বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে রাজ্যের নাম। কিন্তু সেই সন্ত্রাসের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করেই মানুষ এবার সরাসরি মুখ খুলছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রথমত পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ টালবাহানার পরে অবশেষে চাপে পড়েই নির্বাচনের দিন ঘোষণা করতে বাধ্য হয় রাজ্য সরকার। ২০১৮’র পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস চালিয়েছিল তৃণমূল। তারপর দীর্ঘ পাঁচ বছর পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় থেকেও কিছুই করেনি মমতা ব্যনার্জীর সরকার সরাসরিই বলছে গ্রাম বাসীরা। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, রেগার কাজর বিপুল টাকা চুরি করেছে তৃণমূল কিন্তু গ্রামের মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা পুরন করেনি তৃণমূল।

ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে উস্থি গ্রাম পঞ্চায়েত। সারা রাজ্যের মধ্যে এখানেও দেদারচুরি করেছে তৃণমূল। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ পাঁচ বছরে আবাস যোজনা, রেগার কাজ থেকে টাকাই মেরে গেছে পঞ্চায়েত বললেন উস্থির গায়েন পাড়ার মহিলা বাসিন্দারা। সোমবার সকালে ৫৭ নম্বর উস্থি জেলা পরিষদ নির্বাচনের সিপিআই(এম) প্রার্থী শুভশ্রী মন্ডল প্রচারে যান গায়েন পাড়ায়। শুভশ্রীর সঙ্গে ছিলেন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী ঠাকুর দাসী গায়েন। শুভশ্রী বাংলায় স্নাকোত্তর, পিছিয়ে নেই ঠাকুর দাসীও। তিনিও লেখাপড়া যানা একজন গ্রামের বউ।

বৃষ্টিতে বেহাল অবস্থা গায়েন পাড়া গ্রামের। গ্রামের ভেতরে সে অর্থে রাস্তা বলে কিছুই বোঝার উপায় নেই। মাটির রাস্তায় পাশের পকুরের জল টইটুম্বুর। আবার তার সঙ্গে মিলেছে ড্রেনের জল। গ্রামের ভেতরে সরস্বতী গায়েনের বাড়ি। ছোটো মাটির বাড়ি। একটি থাকার ঘর তার সঙ্গেই গোয়াল ঘর। বৃষ্টিতে ঘরের চাল চুয়ে জল পড়ছে ঘরে। মাটির মেঝে বলে কিছু নেই সম্পূর্ণই কর্দমাক্ত। হত দরিদ্র এই পরিবার আবেদন করেও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাতে টাকা পায়নি। টাকা খেয়েছে তৃণমূল। তার সঙ্গে খাবার জলও নেই বলেন স্বরস্বতী।

স্বরস্বতীর বাড়ির সামনেই দুই বামফ্রন্ট প্রার্থীকে পেয়ে জড়ো হন গ্রামের অন্যান্য মহিলারা। তাঁকে ঘিরে ধরে পাড়ার মহিলা থেকে বৃদ্ধ সকলেই দাবি করেন এলাকায় ১ কিলোমিটারের মধ্যে একটি পানীয় জলের কল নেই। এ যেন রাজস্থানের কোনো এক গ্রামের ছবি। নদীমাতৃক পশ্চিমবঙ্গের একটি গ্রামে নেই একটি পানিয় জলের কল! নির্বাচনে জয়ী হলে সিপিআই(এম)’র একটি প্রধান কাজ হব পানীয় কলের ব্যবস্থা করা। 

তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতকে বহুবার বলেও আজ অবধি একটি পানীয় জলের কল মেলেনি বলে জানান গ্রামের সাধারণ মানুষ। এক কলসী জল আনতে গায়েন পাড়ার মেয়ে বউদের যেতে হয় পাশের গ্রাম পালপাড়ায়।এমনকি তাঁতি পাড়াতেও একই পরিস্থিতি। সেখানেও পানিয় জলের কল না থাকায় তারাও যায় সেই পাল পাড়ার একটি চাপাকলে জল আনতে। ওই একটি কলের ওপর নির্ভরশীল তিনটি গ্রাম। এই নিয়েই ক্ষোভ গ্রামের সাধারণ মানুষের। তাও যেকোনও সময় গেলে জল মেলে না। যে সময় পাল পাড়ার বাসিন্দারা কলের কাজ মিটিয়ে নেন, তারপরেই গায়েন পাড়ার মেয়ে বউরা জল আনতে সেখানে ছোটে জল আনতে। সব এলাকার মতো উস্থিতেও বেড়েছে জনবসতি। কিন্তু সেই মতো উন্নত হয়নি পরিষেবা। সমান্য পানীয় জলের জন্য কল পাওয়া যায়নি বিগত দশ বছরে। 

পানীয় জলের সঙ্গে রয়েছে বেহাল রাস্তার সমস্যা। গ্রামের ভেতরে কোনও রাস্তা নেই। এলাকাবাসীরাই নিজেদের টাকায় রাবিশ ফেলে কোনও মতে রাস্তা তৈরি করেছেন। এলাকার এক দোকানদার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) তিনি টেট উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাননি। পেট চালাতে মুদীর দোকান করেছেন। ‘তৃণমূল আমার চাকরি চুরি করেছে। সম্পূর্ণ শিক্ষা দপ্তর জেলে একদিন মমতা ব্যনার্জীও জেলে যাবে।’ গণশক্তি ডিজিটালের কাছে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে তিনি বলেন ‘এই এলাকাতে বিধায়ক গিয়াসুদ্দিন মোল্লার বাড়ি। অথচ গ্রামে একটা কলের জল নেই, রাস্তা নেই ড্রেন নেই আর কাজ তো নেই। গ্রামের সব ছেলে বাইরের রাজ্যে। গ্রামের জন্য বিধায়ক কিছুই করেনি বরং টাকা লুঠে গেছেন’। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর স্কুলের পোষাক পরিবর্তন করার বিষয়ে নিয়েও তিনি বলেন যে ‘এই বিশ্ব বাংলা লোগো দেওয়া স্কুল ড্রেসের পেছনেও তৃণমূলের চুরির ছক রয়েছে’। 

ক্ষোভের আগুনে ফুসছে গ্রাম। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলে পঞ্চায়েত পরিবর্তন করতে মরিয়া গ্রামের সাধারণ মানুষ। গ্রাম ফের চাইছে ‘পরিবর্তন’।  

Comments :0

Login to leave a comment