Editorial

কেন এই নীরবতা

সম্পাদকীয় বিভাগ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সাহায্য করতে পারে এমন কিছু বৈদ্যুতিন যন্ত্রাংশ রাশিয়ায় রপ্তানি করা অ‍‌ভিযোগে ১৯টি ভারতীয় বেসরকারি সংস্থা এবং দু’জন ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে এই সংস্থা ও ব্যক্তির আ‍‌মেরিকায় যে সম্পদ এবং ব্যাঙ্কে যে অর্থ আছে তা বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এদের সঙ্গে কোনও মার্কিন সংস্থা বা নাগরিক কোনোরকম আর্থিক ও বাণিজ্যিক লেনদেন করতে পারবে না। এমনকি আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে এমন কোনও বিদেশি সংস্থাও নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলির সঙ্গে লেনদেন করতে বিপদে পড়বে। এই নিষেধাজ্ঞা শুধু ভারতের ক্ষেত্রে নয়, একই সঙ্গে চীন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমীরশাহীর মোট ৪০০ সংস্থা ও ব্যক্তির বিরুদ্ধেও জারি হয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো নিষেধাজ্ঞার পর ৭২ ঘণ্টা কেটে গেলেও ভারতের তরফে কোনোরকম প্রতিক্রিয়া শোনা যায়নি। মোদী সরকার নীরবে মার্কিন এই একতরফা পদক্ষেপ হজম করে নিচ্ছে। যেসব যন্ত্রণাংশ রপ্তানির কারণে এই নিষেধাজ্ঞা সেগুলি প্রধানত অসামরিক ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়। তবে প্রয়োজনে সামরিক প্রয়োজনেও ব্যবহার করা যায়। আমেরিকার মতে রাশিয়া এসব যন্ত্রণাংশ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো ভারতীয় বহু সংস্থা যখন একইভাবে সামরিক সরঞ্জাম এবং যন্ত্রণাংশ ইজরায়েলে সরবরাহ করছে তখন কিন্তু আমেরিকা কোনোরকম আপত্তি করছে না। বরং খুশিই হচ্ছে। ইজরায়েল ভারত থেকে পাওয়া সমর-সরঞ্জাম ও যন্ত্রণাংশ গাজা এবং লেবাননে গণহত্যায় ব্যবহার করছে। এখানেই শেষ নয় দীর্ঘদিন ধরে সামরিক আগ্রাসন চালাতে গিয়ে ইজরায়েলে কর্মীর অভাব দেখা দিলে ভারত থেকে হাজার হাজার বেকার যুবককে পাঠিয়েছে মোদী সরকার। আক্রমণকারী রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন যাতে টক্কর দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে তার জন্য আর্থিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব রকমের সাহায্য লাগাতার ইউক্রেনকে করে যাচ্ছে আমেরিকা। তেমনি গাজায় ও লেবাননে নিরীহ মানুষের গণহত্যাকারী ইজরায়েলকেও সবরকমের আর্থিক ও সামরিক সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা। বস্তুত মার্কিন অস্ত্র ও অর্থের জোরেই গণহত্যা চালিয়ে যেতে পারছে ইজরায়েল। এবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই রুশ আক্রমণে ইউক্রেনে যতটা মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে তার থেকে শতগুণ বেশি মানবিক বিপর্যয় ঘটে চলেছে গাজা ও লেবাননে। এতদ্‌সত্ত্বেও আমেরিকা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলেও ইজরায়েলের পক্ষে অর্থাৎ গণহত্যাকে বৈধতা দিয়ে চলেছে সর্বশক্তি দিয়ে। এটাই সাম্রাজ্যবাদী দ্বিচারিতা। নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে তারা গণহত্যায় বা ধ্বংসাভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধা করে না।
মার্কিন ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে বাড়াতে ভারতও এখন নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে সঙ্কীর্ণ স্বার্থে দ্বিচারিতার পথ বেছে নিচ্ছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা করে আমেরিকা। ভারত সেটা এড়িয়ে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল আমদানি করে বিপুল লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে মানবতাবাদের শান্তির বাণী মুখে ছড়িয়ে গণহত্যাকারী ইজরায়েলকে গণহত্যার সরবরাহ করে যাচ্ছে। আমেরিকার সঙ্গে গোপন বোঝাপড়ার ফলেই এই এটা সম্ভব হচ্ছে বুঝতে অসুবিধা হয় না। ভারত-মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের আলোচনার পর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ভারতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা। অথচ ভারত চুপ। কানাডায় খালিস্তানপন্থীদের বিরুদ্ধে হামলার নেপথ্যে অমিত শাহ থাকার অভিযোগ ওঠার পর আমেরিকা একে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করলেও ভারতের মুখে রা নেই। মোদী সরকার কি ভারতকে মার্কিন অধঃস্তন করবে বলে পণ করেছে?
 

Comments :0

Login to leave a comment