ANAYAKATHA — PALLAV MUKHOPADHAYA | HUL DIBAS — MUKTADHARA | 30 JUNE 2024

অন্যকথা — পল্লব মুখোপাধ্যায় | হুল দিবস — ইতিহাসের পাতা থেকে — মুক্তধারা | ৩০ জুন ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

ANAYAKATHA  PALLAV MUKHOPADHAYA  HUL DIBAS  MUKTADHARA  30 JUNE 2024

অন্যকথা

হুল দিবস — ইতিহাসের পাতা থেকে
পল্লব মুখোপাধ্যায়

মুক্তধারা 

১৮৫৫ সালের ৩০ জুন সাঁওতাল পরগণার ভাগনাডিহি গ্রামের মাঠে এক সভায় সাঁওতাল
নেতা সিধু ও কানুর আহ্বানে ইংরেজ সরকার, ব্যবসায়ী, মহাজন, জমিদারদের শাসন-
শোষণ ব্যবস্থার পরিবর্তে স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার শপথ নেন দশ হাজার
সাঁওতাল। জমিদার, গোমস্তা, সরবরাহকার, পিওন, মহাজন, পুলিশ, নায়েব, সাজোয়াল ও
আদালতের কর্মচারীগণ সবাই মিলে সাঁওতালদের ওপর শোষণ, জোর করে সম্পত্তি
দখল, অপমান, নির্দয়ভাবে প্রহার ও নানাভাবে উৎপীড়নের এক ভয়ঙ্কর ব্যবস্থা
কায়েম করেছিল। ঋণের সুদ বাবদ শতকরা ৫০ থেকে ৫০০ শতাংশ অর্থ আদায় করা হত। 
সহজ-সরল, লেখাপড়া না জানা, সাঁওতালদের ঠকানোর জন্য ভুয়ো দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার
করা হত। ব্যবসায়ীরা দলে দলে সাঁওতাল অঞ্চলে ঢুকে ঋণের দায়ে সমস্ত শস্য টেনে
বের করে নিয়ে যেত। এ কাজে তাদের সহায়ক হত পুলিশ। আদতে পুলিশ কর্মচারীরাই
ছিল এ অঞ্চলের প্রকৃত শাসক।
ভাগনাডিহির মাঠের ওই সভা থেকে ঘোষণা করা হয় যে কুমার, তেলি, কামার, মোমিন
সম্প্রদায়ের জোলা, চামার ও ডোমেরা তাঁদের সহযোগী। এ দিনই বিশাল এক বাহিনী
কলকাতার দিকে এগোতে থাকে। পথে তাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষে বহু অত্যাচারী মহাজন,
দারোগা নিহত হয়। মনে করা হয়, অবস্থার প্রতিকারের জন্য সাঁওতালদের যে আবেদন
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ক্রমাগত অগ্রাহ্য করছিল, তাই বড়লাটের কাছে পেশ করাই তাঁদের
কলকাতা অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল। ৭ জুলাই কুখ্যাত মহেশ দারোগা হত্যার পর তাঁরা
স্থির করেন যে সাঁওতালদের "হুল" বা বিদ্রোহ শুরু হয়ে গেছে। কোম্পানির রাজত্ব উচ্ছেদ
করাই তাঁদের লক্ষ্য। ফলে তাঁদের হাতে আরও অনেক অত্যাচারী দারোগা, মহাজন নিহত
হয়।
সাঁওতালদের অভিযানের গতিরোধের জন্য মেজর বারোজ বহু সৈন্য ও হাতি নিয়ে চেষ্টা
করেন কিন্তু পাঁচ ঘন্টা লড়াইয়ের পর বেশ কিছু মৃতদেহ ফেলে রেখে পরাস্ত হয়ে পালাতে
বাধ্য হন। এর পর বহু মহাজন ও গোমস্তাও নিহত হয়। সাঁওতাল বিদ্রোহীরা পাকুড়
অবরোধ করে। প্রাণরক্ষার জন্য ইংরেজ সৈন্য পাকুড় দুর্গে আশ্রয় নেয়। ১৮৫৫
সালের ১২ জুলাই সিধু ও কানু সাঁওতাল বাহিনী নিয়ে পাকুড় রাজবাড়ি দখল করেন। সেখান
থেকে তাঁরা মুর্শিদাবাদের দিকে অগ্রসর হন। ওদিকে বীরভূম জেলার প্রায় অর্ধেক
এলাকায় ইংরেজ শাসন কার্যত লোপ পায়। সাঁওতাল মহা অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত পর্বে
বীরভূম থেকে বিহারের ভাগলপুর জেলা পর্যন্ত বিশাল এক ভূখণ্ডে ইংরেজ শাসন
বিপর্যস্ত হয়।

Comments :0

Login to leave a comment