প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর প্রয়ানে শোকপ্রকাশ করলো সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। শুক্রবার দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রয়ানে গভীর শোক প্রকাশ করছে সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো। দীর্ঘ দশ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ভারতের গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষতা যেই কাঠামো তা বজায় রাখতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।’’
বিবৃতিতে লেখা হয়েছে যে, তিনি এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা দেশের জন্য ভালো হবে মনে করে নিয়েছিলেন।
প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে সিপিআই(এম)। মনমোহন সিং নেতৃত্বাধীন প্রথম ইউপিএ সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন দিয়েছিল বামপন্থীরা। সেই সময় ১০০ দিনের কাজ, বন সংরক্ষণ অধিকার আইন, সর্বশিক্ষা মিশনের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আইন তৈরি হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির এআইআইএমএস হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান এই নেতা। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
মনমোহন সিং ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে ডঃ সিং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৫৭ সালে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক হন। এর পরেই, ১৯৬২ সালে ডঃ সিং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নাফিল্ড কলেজ থেকে অর্থনীতিতে ডি. ফিল পান। অর্থনীতিবিদ হিসাবে জীবন শুরু। সেখান থেকেই তাঁর রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ।
১৯৭১ সালে ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রকের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসাবে যোগ দেন। ১৯৯২ সালে তিনি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হন। এরপর অর্থ মন্ত্রকের সচিব, যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান, ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান। ১৯৯১ – ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ভারতের অর্থমন্ত্রী ছিলেন।
১৯৮৭ সালে পদ্মভূষণে, ১৯৯৫ সালে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের জওহরলাল নেহরু জন্ম শতবার্ষিকী পুরস্কার পান। ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তিনি পান অর্থমন্ত্রীদের জন্য ‘এশিয়া মানি’ পুরস্কার। ১৯৯৩ সালেই তিনি বছরের সেরা অর্থমন্ত্রী হিসাবে পান ‘ইউরো মানি’ পুরস্কার। ১৯৫৬ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডঃ সিং পান অ্যাডাম স্মীথ পুরস্কার’। ১৯৫৫ সালে পান কেমব্রিজ – এর সেন্ট জনস কলেজের রাইট্স পুরস্কার অর্থনীতিতে তাঁর অসাধারণ কাজের স্বীকৃতিতে।
১৯৯১ সালে পি ভি নরসিমা রাও সরকারের অর্থ মন্ত্রী হিসাবেই তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ। সেই বছরই তিনি রাজ্যসভার সদস্য হন। পাঁচ বছর অর্থ মন্ত্রী থাকাকালীন বিতর্ক সবসময় তাড়া করে বেড়িয়েছে তাঁকে। দক্ষিণপন্থী অর্থনীতির সমর্থকরা দু’হাত তুলে তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কারের নীতিকে প্রশংসা করতেন। আবার তাঁর কড়া সমালোচক ছিলেন বামপন্থীদের পাশাপাশি মধ্যপন্থীরাও, যাঁরা বিশ্বাস করেন দেশের মৌলিক ক্ষেত্র থেকে রাষ্ট্রের হাত গুটিয়ে নেওয়া মোটেই দেশ তথা দেশের পক্ষে সুখকর নয়। বস্তুত, তাঁর সময়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়।
২০০৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। এর আগে ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি বিরোধী দলনেতা ছিলেন। ২০০৪ সালের ২২ মে তিনি প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। এই বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা পর পর দু’বার প্রধানমন্ত্রীর পদে ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি ২০০৯ সালের ২২ মে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন।
CPIM
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়ানে শোকপ্রকাশ করলো পলিট ব্যুরো
×
Comments :0