GK — TAPAN KUMAR BIRAGAYA | NAZRUL — NATUNPATA | 31 MAY 2024

জানা অজানা — তপন কুমার বৈরাগ্য | নজরুলের জীবনে দুই মহান শিক্ষক — নতুনপাতা | ৩১ মে ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

GK  TAPAN KUMAR BIRAGAYA  NAZRUL  NATUNPATA  31 MAY 2024

জানা অজানা

নজরুলের জীবনে দুই মহান শিক্ষক
তপন কুমার বৈরাগ্য

নতুনপাতা

নজরুলের জীবনে দুজন মহান শিক্ষকের কথা ভুলবার নয়।
এদের মধ্যে একজন হলেন পল্লীকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক।
কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের জন্ম ১৮৮৩খ্রিস্টাব্দের ৩রা
মার্চ পূর্ববর্ধমান জেলার কোগ্রামে।তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলো
হলো -শতদল,উজানী,একতারা,বীথি ইত্যাদি। বর্ধমান জেলার
মঙ্গলকোট থানার অন্তর্গত মাথরুন । এই গ্রামে জন্মগ্রহণ
করেছিলেন কাসিমবাজারের  মহারাজা মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী।
তিনি তাঁর পিতার নামে এই গ্রামে একটা বিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠা করেন।পিতার নাম অনুসারে নাম দেন মাথরুন
নবীনচন্দ্র ইনস্টিটিউশন । তেইশ বছর বয়েসে কুমুমদরঞ্জন
মল্লিক এই বিদ্যালয়ে ইংরাজীর শিক্ষক পদে যোগ দেন।
সালটা ১৯০৬। ১৯১৩খ্রিস্টাব্দে নজরুল এই বিদ্যালয়ে
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র হিসাবে যোগ দেন।প্রথমদিন ভর্তি হয়েই
তিনি কুমুদরঞ্জন মল্লিককে প্রণাম করতে যান।কুমুদরঞ্জন
মল্লিক তখন এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।প্রথম দেখাতেই
কুমুদরঞ্জন মল্লিক বুঝেছিলেন এই ছেলেটার মধ্যে আছে
এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ।তাই প্রথম দিনই নজরুলকে বুকে
টেনে নিয়েছিলেন। একবছর নজরুল এই বিদ্যালয়ে 
পড়াশুনা করেছিলেন।প্রত্যেকদিনই এই লাজুক প্রকৃতির
ছেলেটা প্রধান শিক্ষকমহাশয়কে প্রণাম করে ক্লাসে গিয়ে
বসতেন। মাঝে মাঝে কুমুদরঞ্জন মল্লিক তাঁকে নিজের
লেখা কবিতাও শুনাতেন। নজরুল একবছর পর যখন
এই বিদ্যালয় ত্যাগ করে চলে আসেন তখন কুমুদরঞ্জন
মল্লিক খুবই ব্যথা পেয়েছিলেন। ১৯২২সালে ৬ই জানুয়ারি
শুক্রবার সাপ্তাহিক বিজলী পত্রিকায় নজরুলের বিদ্রোহী
কবিতাটা প্রকাশিত হয়।সারাদেশে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে।
কুমুদরঞ্জন মল্লিক নিজে এসে কাজী নজরুল ইসলামের সাথে
দেখা করে যান এবং প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেন।
১৯৪২খ্রিস্টাব্দের ৯ই জুলাই যখন কাজী নজরুল ইসলাম
বাকশক্তি হারান তখন স্বয়ং কুমুদরঞ্জন মল্লিক তাঁর
সাথে দেখা করতে এসে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিলেন।
নজরুলকে নিয়ে তিনি যে কবিতাটা লিখেছিলেন তার
নাম 'দেবদূত'। যেখানে তিনি লিখেছেন--স্বর্গ থেকে দেবদূত
এলো মুক্তির বাণী লয়ে।
নজরুলের আর একজন মহান শিক্ষক ছিলেন নিবারণ চন্দ্র
ঘটক। তিনি ছিলেন একজন বিপ্লবী।জন্ম ১৮৮৭খ্রিস্টাব্দের
৩০শে মার্চ।রানিগঞ্জের সিয়ারসোলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
এই গ্রামের সিয়ারসোল রাজস্কুলের তিনি শিক্ষক ছিলেন।
নজরুল তখন দশম শ্রেণিতে পড়েন। তিনি ছিলেন নজরুলের
বিপ্লবী চেতনার প্রেরণাদাতা। এখানে নিবারণচন্দ্রের প্রেরণায়
যুগান্তর দলের কেন্দ্র গড়ে ওঠে। বিপ্লবী কার্যকলাপের জন্য
বিদ্যালয়ের পরিচলন সমিতি ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে বরখাস্ত করেন।এরপর তিনি ইংরেজদের হাতে ধরা পড়েন।বিচারে
তাঁর পাঁচবছর সশ্রম কারাদন্ড হয়। ২২শে ডিসেম্বর
১৯৬০খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়। এই অগ্নিস্ফুলিঙ্গের প্রেরণা
পেয়েছিলেন বলেই নজরুলের কলম থেকে বেড়িয়ে এসেছিল-
বিদ্রোহী,কারার ওই লৌহকপাট,কান্ডারী হুঁশিয়ারের মতন
কবিতাগুলো। নজরুল তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছেন---
আপনাকে ভোলা যায় না--আপনাকে ভুলতে পারিনা---ভুলতে
পারবো না--আপনি আমার গর্ব--আমি আপনার গৌরব।

Comments :0

Login to leave a comment