Samudrasathi

বাজেটে ঘোষিত ‘সমুদ্রসাথী’ চালু হতে বছর কাবার

রাজ্য

এক অর্থবর্ষ পার হওয়ার মুখে বাজেটে ঘোষিত মৎস্যজীবীদের আর্থিক অনুদান প্রকল্প চালু না করার ব্যর্থতা মেনে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি!
প্রকল্পের নাম ‘সমুদ্রসাথী’। গত বাজেটে ঘোষণার পর ২০০কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাবও রাখা ছিল। এক বাজেটে ঘোষিত প্রকল্প আর এক বাজেট পেশের সামনে কার্যকর করা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী প্রায়শই বলে থাকেন, তিনি যা বলেন, তা করে দেখান!
এখনও পর্যন্ত সেই প্রকল্প রাজ্যে চালু না হওয়ার কথা জানালেন মমতা ব্যানার্জি। সোমবার সাগরে বাংলাদেশের জেলে বন্দি মৎস্যজীবীদের দেশে ফিরিয়ে আনার পর তাঁদের জন্য সরকারি এক সভার আয়োজন করেছিল রাজ্য সরকার। সেই অনুষ্ঠানেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা মৎস্যজীবীদের সামান্য সাহায্য করার জন্য সমুদ্রসাথী নামে একটি প্রজেক্ট তৈরি করেছি। এটা জেলার মৎস্যজীবীদের প্রত্যেকের প্রতি বছরে দু’বার ৫হাজার করে ১০হাজার টাকা দেওয়া হবে। এই প্রকল্প এখন চালু হবে। এতে ২ লক্ষ মৎস্যজীবী উপকৃত হবে।’’ 
ঘটনা হলো,গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি বিধানসভাতে রাজ্য বাজেট পেশ করে সরকার জানিয়েছিল, ‘‘আমাদের উপকূলবর্তী জেলাগুলি, বিশেষত পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তর ২৪ পরগনার মৎস্যজীবীরা তাঁদের জীবিকা অর্জনের জন্য প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে সমুদ্রে যান। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই দুই মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে।’’ তারজন্য রাজ্য সরকার সমুদ্রসাথী নামে নতুন প্রকল্প এনে এই তিন জেলার মৎস্যজীবীদেরর মধ্যে যাঁরা সরকারের কাছে নথিবদ্ধ হয়ে আছেন, তাঁদের জন্য প্রতি বছর দু’মাসের জন্য ৫ হাজার করে ১০ হাজার টাকা অর্থ সাহায্য করবে মৎস্য দপ্তর। প্রায় ২লক্ষ মৎস্যজীবীর কাছে এই অনুদানের টাকা তুলে দেওয়ার কথা রাজ্য বাজেটে ঘোষণা করে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল।
চলতি আর্থিক বছর শেষ হতে বাকি আর মাত্র দু’মাস। আগামী মাসেই রাজ্য সরকার নতুন বাজেট পেশ করতে যাবে। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, গত বাজেটে ফলাও করে মৎস্যজীবীদের সাহায্যের জন্য ঘোষিত অনুদান প্রকল্প চালুই করতে পারেনি রাজ্য সরকার। আসলে গত বাজেট পেশের পরই লোকসভা নির্বাচন ছিল। ফলে রাজ্য বাজেটে একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছিল। এখন এক বছরের মাথায় খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সরকারি সভায় বলতে হচ্ছে, সমুদ্রসাথী প্রকল্প চালু হবে!
রাজ্য বাজেটে ঘোষণার পর এপ্রিল মাস থেকে জুন মাস পার হয়ে গেছে। আবার নতুন বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞার সময় চলে আসছে। কিন্তু সরকারের ঘোষিত প্রকল্পের কোনও সুবিধাই বাজেটে বরাদ্দের পরও বাস্তবায়িত করা যায়নি। রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, রাজ্য সরকারের এই প্রকল্প কাগজে-কলমেই থেকে গেছে। শুধু পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেই মৎস্য দপ্তরের অনুমোদন প্রাপ্ত প্রায় ৭০ হাজারের ওপর মৎস্যজীবী আছে। কিন্তু গোটা রাজ্যের পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তর ২৪ পরগনা, এই তিন জেলায় সমুদ্রসাথী প্রকল্পের জন্য আবেদন করার কথা ছিল সমুদ্রগামী মৎস্যজীবীদের। কিন্তু প্রশাসনিক চূড়ান্ত ব্যার্থতায় আবেদনই করতে পারেননি মৎস্যজীবীরা।
গত রবিবার ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে জেলে আটক দু’দেশের মৎস্যজীবীদের আদান-প্রদান হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক জলসীমা লঙ্ঘন করে এরাজ্যের কাকদ্বীপের বাসিন্দা ৯৬ জন মৎস্যজীবী বাংলাদেশে ঢুকে পড়লে ওদেশের উপকূলরক্ষী বাহিনীর হাতে আটকে পড়ে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ থেকেও এদেশে বেআইনিভাবে ঢুকে জেলবন্দি ছিলেন ৮৯ জন মৎস্যজীবী। দু’পক্ষের মধ্যে মৎস্যজীবীর ছাড়ার পর এদিনই এরাজ্যে ছাড়া মৎস্যজীবীদের জন্য আর্থিক অনুদান কর্মসূচির আয়োজন করে রাজ্য সরকার। সেই অনুষ্ঠান থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া পাওয়া ৯৫জন ধীবরের হাতে ১০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় একজন মৃত মৎস্যজীবীর পরিবারের হাতে ২লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা করে রাজ্য সরকার। 
সেই অনুষ্ঠানেই মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশে জেলে আটক মৎস্যজীবীদের ওপর পুলিশের অত্যাচার নিয়ে সরব হয়েছেন। মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘‘কয়েকজনকে দেখলাম খুঁড়িয়ে, খুঁড়িয়ে হাঁটছে। এইভাবে হাঁটার কারণ জানতে চাইলে ওরা নিজেরা কিছু বলতে চায়নি। জানতে পারলাম, তাদের কয়েকজনকে মারধর করা হয়েছে। হাতদুটো দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। মোটা লাঠি দিয়ে মারা হয়েছে। কয়েকজনের কোমড় থেকে পা পর্যন্ত চোট।’’ এরাজ্যে আটকে থাকা বাংলাদেশের মৎস্যজীবীদের সঙ্গে রাজ্য সরকার ভালো ব্যবহার করেছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। 
গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি দেখতে ফি বছর মেলা শুরুর আগে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে সাগর দ্বীপে যান। এবারও তিনি সাগরে গিয়ে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, কপিলমুনির আশ্রম ঘুরে দেখেন। কপিলমুনির আশ্রমের অযোধ্যা থেকে আসা মূল পুরোহিত জ্ঞানদাসের সঙ্গে দেখা করে সাগর মেলা থেকে আশ্রম কর্তৃপক্ষের প্রাপ্য অর্থের ২৫ শতাংশ মন্দিরের পরিকাঠামো নির্মাণে খরচ করার অনুরোধ করেন। 
গত লোকসভা নির্বাচনের ভোট প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে গিয়েছিলেন দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মুড়িগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য সমীক্ষা, ডিপিআর (ডিটেলস প্রজেক্ট রিপোর্ট) তৈরি হয়ে গেছে। এদিনও সেই একই সুরে মুখ্যমন্ত্রী মুড়িগঙ্গার ওপর সেতু তৈরির কথা বলেছেন। তবে এবার সেতু নিয়ে তাঁর নতুন তথ্য, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও একজন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছিল। তারা সেতুটা করে দেবে বলেছিল। তিন চার বছর অপেক্ষা করেছি। এবার আমরাই করব।’’ ঘটনা হলো, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মুড়িগঙ্গার ওপর সেতুর শিলান্যাস করে গিয়েছিলেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment