ONION FARMERS

কৃষক দাম পেয়েছেন কেজিতে ৫টাকা, বাজারে পেঁয়াজ এখন ৮০

রাজ্য

হুগলির বলাগড় এবং নদীয়ার চাঁদুড়িয়া সান্যালচড়ের কৃষকরা গত ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৫ টাকা কেজি দরে। তাঁদেরই এখন খাবার জন্য পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে কেজি প্রতি ৮০ টাকা দিয়ে। রাজ্যে হুগলি,নদীয়া, মুর্শিদাবাদ পেঁয়াজের ফলন ভালই হয়। অন্যান্য জেলাগুলিতেও পেঁয়াজ চাষ হয়। ফাল্গুন মাসে পেঁয়াজ জমি থেকে উঠলেই ফড়েরা জলের দামে জমি থেকেই পেঁয়াজ কিনে নিয়ে চলে যায়। শুধুমাত্র জেলাগুলিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের হিমঘর না থাকায় কম দামে কৃষকরা পেঁয়াজ বিক্রি করে দেন। ফসলের দাম পাননা। সেই কৃষকদের এখন ৫টাকার পেঁয়াজ ৮০টাকা দিয়ে কিনতে হয়।
বলাগড় ব্লকের অন্যতম অর্থকরী ফসল পেঁয়াজ। শুধু বলাগড় নয় রাজ্যের  মধ্যে সব থেকে বেশি পেঁয়াজ চাষ হয় হুগলির বলাগড় ব্লকে। ব্লকের ডুমুরদহ ১, ডুমুরদহ ২ , সিজা-কামালপুর, এক্তারপুর ,বাকুলিয়া-ধোবাপাড়া ও জিরাট গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়েই পেঁয়াজ চাষ হয়।যখন বাজারে পেঁয়াজ কেজি  লাফিয়ে বেড়ে ৭০-৮০ টাকা হয়েছে। তখন বলাগড়ের চাষীরা দাম পাচ্ছে না পেঁয়াজের। গ্রামের পেঁয়াজ চাষি ভরত দাস  জানান, এ বার ১ বিঘা জমিতে চাষ করেছিলেন তিনি।খরচ হয়েছিল প্রায় ২৮  হাজার টাকার কিছু বেশি। পেঁয়াজ ওঠে ফাল্গুন মাসে। প্রথম দিকে এক বস্তা পেঁয়াজ বেচে দাম পেয়েছি ৪৮০ টাকা। পরে সেই দাম অর্ধেকে এসে ঠেকে। পরে এক বস্তা পেঁয়াজ ২০০-২২০ টাকাতেও বেচতে হয়েছে। তার মানে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৫ টাকা কেজিতে। আর এখন কার দাম ৭০ টাকা।মহাজনের কাছ থেকে ধার করে চাষ করতে হয়। আমাদের নেই সরকারি সুযোগ-সুবিধা।তার উপর ফোড়েদের দাপটে বাজার শেষ। তিনি আরো জানান, ফড়েরা এসে এখানকার 'সুখসাগর' পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যান। তাঁদের ঠিক করা দামেই পেঁয়াজ বেচতে হয়। সব সময়ে উপযুক্ত দাম মেলে না। পেঁয়াজের সময় ফোড়েরা মাঠ থেকে কম দামে পেঁয়াজ কিনে নেয়।তার অধিকাংশই যায়  উওর বঙ্গে।এখানে সংরক্ষণের পরিকাঠামো সেভাবে নেই। থাকলে এই অবস্থা হয় না। আমরা যদি পেঁয়াজ রেখে বিক্রি করতে পারতাম।তাহলে কিছু দাম ও পেতাম। পেঁয়াজ চাষী সুখদেব রায়  জানান, মাস চারেক আগে ১০ কেজি সুখসাগর বেচেছি ২৪-২৫ টাকায়। তা পরে ৪০ টাকা হয়। আর এখন আকাশ ছোঁয়া দাম। বাড়ির খাওয়ার পেঁয়াজ ও কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। ২০১৪ সালে দ্বাড় পাড়া গ্রামে বামেদের পঙ্চায়েত সমিতি পেঁয়াজ রাখার জন্য হিমঘর স্ করেছিল , পরে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। সরকার যদি চাষীদের দিকে না তাকায়  তাহলে এমনি চলবে,মার খাবে চাষীরা।
বলাগড়ের সহ-কৃষি অধিকর্তা সোমনাথ পাল বলেন, বলাগড় ব্লকে গত বছর আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। সংরক্ষণের জন্য বাড়িতেই ঘর করে পেঁয়াজ ঝুলিয়ে রাখেন চাষিরা।যদিও সেটা সংখ্যায় খুব কম। তবে সব চাষি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে উঠতে পারেননি বলে জানিয়েছেন কৃষিকর্তারা।
হুগলি জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে জেলায় তিন হাজার আটশ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়। যার মধ্যে বলাগর ব্লকেই সবচেয়ে বেশি।প্রায় ৭৪ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়।হুগলি ছাড়াও মুর্শিদাবাদ জেলায় ভালো পেঁয়াজ হয়।রাজ্যে যতটা পরিমান পেঁয়াজের দাহিদা তার থেকে কম চাষ এবং উৎপাদন হওয়ায় নাসিক নির্ভরতা থেকেই যায়।হুগলিতে সুখসাগর প্রজাতির পেঁয়াজ চাষ হয়।সেই পেঁয়াজ বেশি দিন সংরক্ষন করা যায় না।উৎপাদনের পর মাস পাঁচেক সেই পেঁয়াজ বাজারে যোগান থাকে।
নদীয়া জেলায় খুচরো বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। জেলায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা মধ্যে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে গত বছর পিয়াজের চাষ সে রকম হয়নি। যারা বাড়িতে ঝুলিয়ে পেঁয়াজ স্টোর করে রেখেছে। তারাই এবছর কিছুটা দাম পেয়েছে। শিমুরালি বাজারের সবজি ব্যবসায়ী টোকন সরকার বলেন, বাইরের থেকে পেঁয়াজ না আসার কারণে এবারের পেঁয়াজের দাম অতিরিক্ত বেশি।আমরা পাইকারি কিনে খুচরো বিক্রি করতে গিয়েই সমস্যা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ  বুঝতে পারছে না।  ভাবছে আমরাই বেশি নিচ্ছি। অথচ একশ্রেণীর ব্যবসায়ী পেঁয়াজ কিনে বাড়িতে স্টোর করে রেখে দিয়েছেন। পরবর্তীকালে বেশি  বেশি দাম পাবার লোভে। । একই কথা বললেন চাদুরিয়া দু'নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষক হরি সরকার তিনি বলেন,আমরা কিছুটা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখতে পেরেছি বলেই,আজ দুটো পয়সার মুখ দেখতে পাচ্ছি। বর্তমান পাইকারি পেঁয়াজের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, দর টা আমরা পাচ্ছি এবং খুচরো বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। তবে এই পেঁয়াজ আমাদের আগে বিক্রি করতে হয়েছে জলের দামে।

Comments :0

Login to leave a comment