STORY — TUSHAR BOSE | MOLLAR SANGE DEKHA — NATUNPATA | SUNDAY 7 JULY 2024

গল্প — তুষার বসু | মোল্লার সঙ্গে দেখা — নতুনপাতা | রবিবার ৭ জুলাই ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

STORY  TUSHAR BOSE  MOLLAR SANGE DEKHA  NATUNPATA  SUNDAY 7 JULY 2024

গল্প 


মোল্লার সঙ্গে দেখা   

তুষার বসু

নতুনপাতা

আষাঢ়ের মাঝামাঝি এসেও আকাশটার কিপটেমিতে ঘরে বসে ভিজতে ভিজতে খুবই বিরক্ত লাগছিল, তাই ধুত্তোর বলে দুপুরের কটকটে রোদের মধ্যেই বেরিয়ে পড়েছি। পাড়ার পার্কটায় ঢুকে গাছতলার নিচে ফাঁকা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। কাছে-পিঠে জনমনিষ্যির দেখা নেই। একটা কুকুর বেঞ্চের নিচেটায় বসে জিভ বের করে হ্যা হ্যা করে হাঁফাচ্ছে।
গাছের নিচে একটু ঠান্ডা ভাব আছে দেখে আমি বেঞ্চে শুয়ে পড়লাম। তবে বেঞ্চটা বেশ তেতে আছে। চোখদুটো লেগে এসেছে, একটা ঠুক ঠুক আওয়াজ শুনে মাথা তুলে দেখি অবাক কান্ড। একটা বেঁটেখাটো মানুষ গাধায় চড়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। মাথায় তার একটা ঢাউস পাগড়ি, গায়ে রংবাহারি জোব্বা। গোলগাল মুখটির থুতনির কাছে একটুখানি দাড়ি। যদিও লোকটাকে কোনওদিন দেখেছি বলে মনে হচ্ছেনা অথচ খুব চেনাচেনা লাগছে। আমি আর বিস্ময়টা চেপে রাখতে পারলুম না। জিগ্যেস করে ফেললাম-  
আচ্ছা আপনার নামটা কি বলুন তো? 
আপনাকে খুব চেনাচেনা লাগছে।
আমার কোন নামটা জানতে চাও বল দেখি? 
বাপ-মার দেওয়া নাম, না মক্তবের মৌলভীর দেওয়া নাম, না আমার বিবির দেওয়া নাম, না পাওনাদারের দেওয়া নাম, না যারা আমাকে নিয়ে গল্প লিখেছে তাদের দেওয়া নাম, না….
  আমি আর থাকতে পারলাম না। তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম - আহা, মানুষের তো একটা পরিচয় থাকে? 
-কেন? মানুষের পরিচয় কি নামে হয়? সে হয় তার আচার-ব্যবহারে, তার কাজকর্মে, তার কথায় বার্তায়…..
- সে যাকগে। আপনাকে নিয়ে গপ্পো লেখার কি একটা কথা বলছিলেন না? তা কে লিখলো? 
- অনেক দেশের অনেক লোকই লিখেছে।  এমন কি তোমাদের সত্যজিৎ রায় পর্যন্ত। 
  এবার আমার মনে পড়লো, আরে এ তো মোল্লা নাসিরুদ্দিন! আমি একটু ওস্তাদি করে বললুম
 -আপনার সঙ্গে যে এই গাধাটা আছে এতেই বোঝা যায় আপনি কে।
 - কিন্তু আমার সঙ্গে তো গাধাটা নেই। আমি বরং গাধাটার সঙ্গে আছি।
আমি একটু থমকে যাই।এ মোল্লা না হয়ে যায় না। বলি -  মোল্লাসাহেব, আপনার দু-একটা গল্প বলুন শুনি।
-সে গল্প কি তুমি আগে শোনোনি? মোল্লা বলেন।
-হ্যাঁ, কয়েকটা পড়েছি।
-বেশ। দু'একটা বলো শুনি।
-ঐ যে আপনার ঘরে একটা  ধপাস করে আওয়াজ হওয়ায় আপনার বিবি পাশের ঘর থেকে জিজ্ঞ্যেস করলেন কিসের আওয়াজ হলো? আপনি বললেন আমার জোব্বাটা পড়ে গেল কিনা তাই। আপনার বিবি অবাক হয়ে জানতে চাইলেন জোব্বাটা পড়ার আওয়াজ এতো জোর? তখন আপনি বললেন যে জোব্বার ভিতর আপনিও ছিলেন।  খুব মজার গল্প।
-এটা মজার গল্প! জোব্বাটার ভিতর যদি তুমি থাকতে তাহলে বুঝতে পারতে এটা মজার নয়, মাজার গল্প। পড়ে গিয়ে আমার মাজায় যে কি ব্যথা হয়েছিলো সেটার কথা কেউ বলেনি।
-তার মানে আপনি সত্যি সত্যিই সেই নাসিরুদ্দিন? 
-না তো। আমি এই নাসিরুদ্দিন। - বলে গাধার পেটে পায়ের গোঁত্তা লাগিয়ে হেলতে দুলতে মাঠের ওপর দিয়ে চলে গেলেন। আমি ছুটে মোল্লাকে আটকাতে গেলাম, আর বেঞ্চ থেকে ধপাস করে মাটির ওপর পড়ে গেলাম। মাথাটা ঠুকে গেল। মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে দেখলাম কেউ কোত্থাও নেই। শুধু কুকুরটা বেঞ্চের নিচে বসে আমার জুতোটা নির্বিকারভাবে চিবিয়ে চলেছে।

 

Comments :0

Login to leave a comment