মুক্তধারা : প্রবন্ধ
বিশ্বের অদ্ভূত সুন্দরী নদী
তপন কুমার বৈরাগ্য
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি শিশিরবিন্দু কবিতায়
আছে--দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপর
একটি শিশুর বিন্দু।
একেবারে ধ্রুব সত্য।আমরা বহু টাকা ব্যয় করে ,বহু দূর দেশে
যাই আশ্চর্য সব জিনিস দেখতে।অথচ আমাদের বাড়ির
পাশে একটি ধানের শিষের উপর একটি ধানের শিশির
বিন্দুকে কখনো হৃদয় দিয়ে দেখতে চাইনি।যদি দেখতাম
তবে দেখতাম আমাদের আশেপাশে কতো অদ্ভূত সব
জিনিস আছে।যা পৃথিবী ঘুরে এলেও এইরকম সৌন্দর্যের
স্বাদ কোথাও পাবো না। এইরকম একটি অদ্ভূত সুন্দরী
নদী যাদুকাটা নদী।বাংলাদেশ এবং ভারতের একটি
আন্তঃসীমান্ত নদী।নদীর নাম যাদুকাটা হলো কেন।
এর পিছনে একটি লোককাহিনি জড়িয়ে আছে।
একদিন এক অল্পবয়সি মহিলা তাঁর কোলের যাদুকে নিয়ে
মাছ কাটছিল ।হঠাৎ কোলের সন্তানকে মাছ ভেবে ভুল করে
কেটে ফেলে। যখন জানতে পারে তখন বেদনায় বিদির্ণ
হয়ে যায়। কাটা ছেলেকে জলে ফেলে দিল।কি আশ্চর্য
ছেলেটা আবার বেঁচে উঠে জলে ভেসে উঠল। মা আনন্দে
তাঁকে কোলে তুলে নিল।সেই থেকে নদীটির নাম হয়েছে
যাদুকাটা।নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৭কিলোমিটার। প্রস্থে ৩৭ মিটার।
গভীরতা ৮মিটার।ভারতের খাসিয়া জয়ন্তিয়া পাহাড় থেকে
সৃষ্টি হয়েছে।এর প্রাচীন নাম রেণুকা। এই নদী বৃষ্টিএবং
বরফগলা জলে পুষ্ট বলে এই নদীতে সারাবছর জল
থাকে।অদ্ভূত সুন্দরী বলার অনেক কারণ আছে। এই নদীর
জল ঘন নীল।যা অন্য কোন নদীতে দেখা যায় না।
এই নদীর একপাড় জুড়ে আছে খাসিয়া জয়ন্তিয়া পাহাড়।
অন্যপ্রান্তে বিচিত্র সব গাছগাছালি। একবার দেখলে সবার
জীবন যেন সার্থকতায় ভরে ওঠে। এই নদীর গতিপথ সর্পিলাকার।
সাপের মতন এঁকে বেঁকে বয়ে গেছে।এই নদীর জলে
প্রচুর খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়। এখানকার দু'পাড়ের
লোকেদের জীবিকা এই নদী গর্ভ থেকে খনিজ সম্পদ
আহোরণ। এই খনিজ সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়লা,পাথর লোহার আকরিক।
আশ্চর্যের বিষয় এই নদীর জলের রঙ নীল সারাবছর অপরিবর্তিত থাকে।এই নদীর
অববাহিকার আবহাওয়া খুবই মনোরম।এই নদী বাংলাদেশের সুরমা নদীতে গিয়ে
মিশেছে।বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার প্রধান নদী।
এই নদীতে বিচিত্র বর্ণের সব মাছ আছে।মাঝে মাঝে বর্ষার
জলে নদীটা স্বল্প প্লাবিত হয়। এই নদী পাতালগঙ্গা ভগবতীকেও যেন হার মানায়।
Comments :0