৩৫ দিন ফেরার থাকার পরে ‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দে’-র প্রধান, খালিস্তানের সমর্থক অমৃতপাল সিং পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। রবিবার সকালে পাঞ্জাবের মোগা জেলার রোড় গ্রামে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। আসামের ডিব্রুগড়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা থাকায় এদিনই তাঁকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিব্রুগড় জেলেই তাঁকে রাখা হয়েছে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে।
তবে, অমৃতপাল আত্মসমর্পণ করেছেন বলেই দাবি করেছেন। পুলিশের হাতে আটক হবার আগে একটি ভিডিও-তে তিনি জানান, গত একমাসের বেশি লুকিয়ে থাকার পরে তিনি আত্মসমর্পণ করাই বেছে নিয়েছেন। একটি গুরুদ্বারের মধ্যে তোলা সেই ভিডিও-তে অমৃতপাল বলেন, এই রোড় ‘সন্ত’ ভিনদ্রানওয়ালের জন্মস্থান। এখানেই তাঁর নিজের ‘দস্তর বন্দি’ ( পাগড়ি পরার অনুষ্ঠান) হয়েছিল। সরকার চাইলে আমাকে অন্যভাবে গ্রেপ্তার করতে পারত। তার বদলে ‘বাড়াবাড়ি’ করেছে। এই জমি ছেড়ে আমরা কোথাও যাব না। অকাল তখতের প্রাক্তন জাঠেদার যশবীর সিং রোড় সাংবাদিকদের জানান, অমৃতপাল নিজেই ধরা দিয়েছেন। শনিবার রাতে তিনি গুরুদ্বারে আসেন। পুলিশকে তিনিই জানান রবিবার সকাল ৭ টায় আত্মসমর্পণ করবেন। আত্মসমর্পণের সময়ে তিনি নিজেও ঘটনাস্থলে ছিলেন।
পাঞ্জাব পুলিশের ভাষ্য অন্যরকম। রাজ্য পুলিশের আইজি সুখচরণ সিং গিল সাংবাদিকদের বলেছেন, অমৃতপাল এই গ্রামে আছে জেনে পুলিশ গোটা গ্রাম ঘিরে ফেলেছিল। তাঁর পালানোর কোনো পথ ছিল না। পুলিশ ইচ্ছা করেই গুরুদ্বারে ঢোকেনি। অমৃতপাল বুঝেছিল পুলিশ ঘিরে ফেলেছে। গুরুদ্বারের ভিতরে কী ঘটেছে, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করা ঠিক নয়।
১৮ মার্চ থেকে পুলিশ অমৃতপালকে খুঁজছিল। একাধিক রাজ্যে তিনি লুকিয়ে ছিলেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। ২৯ বছরের অমৃতপালকে এদিন সকাল পৌনে সাতটায় আটক করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে মামলা রয়েছে। পাঞ্জাব পুলিশই তাঁকে প্রথমে ভাতিন্ডা, পরে বিমানে ডিব্রুগড় নিয়ে যায়। ডিব্রুগড় কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি বিশেষ সেলে তাঁকে বন্দি রাখা হয়েছে। পাঞ্জাব পুলিশের একটি দলও জেলের মধ্যেই রয়েছে। এই জেলেই বন্দি রয়েছেন অমৃতপালের ৯ জন সহযোগী। তাঁরা আগেই গ্রেপ্তার হয়েছেন।
‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দে’ তৈরি করেছিলেন অভিনেতা দীপ সিং সাঁধু। অমৃতপাল থাকতেন দুবাইয়ে, সেখান থেকে ফিরে গত অক্টোবরে তিনি এই সংগঠনের প্রধান নিযুক্ত হন। খালিস্তানের পক্ষে প্রচার করছিলেন। ১৯৮৪ সালে অমৃতসর স্বর্ণমন্দিরের ভিতরে সংঘর্ষে নিহত জার্নেইল সিং ভিনদ্রানওয়ালের কাজে সমর্থন করে ভাষণ দিচ্ছিলেন। ফেব্রুয়ারিতে দলের এক সমর্থককে পুলিশ আটক করলে অমৃতপাল ও তাঁর সমর্থকরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অমৃতসরের শহরতলি আজনালায় থানার ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারপর থেকেই তাঁর দলের সঙ্গে পাঞ্জাব পুলিশের সংঘাত বাড়তে থাকে। ১৮ মার্চ থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারের একটানা চেষ্টা চালিয়ে যায়। অমৃতপালের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো, হত্যার চেষ্টা, পুলিশের ওপরে আক্রমণের মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশের তাড়া খেলেও নানা কায়দায় গ্রেপ্তারি এড়িয়ে যাচ্ছিলেন অমৃতপাল। কখনো পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে, কখনো ছদ্মবেশে, কখনো সহযোগীর স্কুটারে চড়ে পুলিশকে ফাঁকি দিচ্ছিলেন তিনি। অন্যদিকে পাঞ্জাব পুলিশ তাঁকে বারংবার আত্মসমর্পণ করতে বলছিল। অকাল তখতের তরফ থেকেও অমৃতপালকে আত্মসমর্পণ করার অনুরোধ করা হয়েছিল।
অমৃতপাল গ্রেপ্তার হবার পরে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান ভিডিওতে একটি ভাষণে বলেন, শনিবার রাতেই আমি খবর পেয়েছিলাম। পুলিশের শীর্ষ অফিসারদের সঙ্গে সারা রাত ঘন ঘন যোগাযোগ রেখেছি। আমরা চেয়েছিলাম এই গ্রেপ্তারি শান্তিপূর্ণ হোক। মান বলেন, দেশের বিরুদ্ধে কাজ করলে আইন ব্যবস্থা নেবে। পাঞ্জাবের যুবকদের বিপথে পরিচালিত করার চেষ্টা প্রতিহত করা হবে। অমৃতপাল যুবকদের অস্ত্র ধরতে বলছিলেন বলে মান অভিযোগ করেন।
Comments :0