বুধবার ইডেনে কখনও ঝলমলে রোদ। কখনও ছায়া। বাংলার ওপেনিং জুটির মতোই। এ মরশুমে জুটিতে ভরসা দিতে পারেননি বাংলার ওপেনাররা। জুটি বদল হয়েছে, সমস্যা মেটেনি। কোয়ার্টার ফাইনালে অভিমন্যু ঈশ্বরণের সঙ্গে ওপেনিং করতে নেমেছিলেন কাজি জুনেইদ সইফি। বাকিদের মতোই তিনিও ভরসা দিতে পারলেন না বাংলার টিম ম্যানেজমেন্টকে। কাজি দ্রুত ফেরায় দিনের শুরুতেই আতঙ্কের ছায়া নেমে এসেছিল বাংলা শিবিরে। ওডিশা ম্যাচের মতো প্রথম ইনিংসে ফের ব্যাটিং বিপর্যয় হবে না তো? সেই আশঙ্কা দূর করলেন অভিজ্ঞ অভিমন্যু ও সুদীপ ঘরামি। প্রথমে থিতু হলেন। তারপর বিচক্ষণ ব্যাটিং করে ভিত গড়লেন। তাঁদের দু’জনের ১৩৬ রানের লিডের জন্যই বাংলা দিনের শেষে ৬৫ রানে এগিয়ে।
বাংলা ৮১ ওভার ব্যাটিং করার পর স্কোরবোর্ডে তুলেছে ৫ উইকেটের বিনিময়ে ২৩৮। মাঠ ছাড়ার আগে প্রধান কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লা লিড নেওয়ার ক্ষেত্রে কৃতিত্ব দিয়ে গেলেন অভি ও সুদীপের জুটিকেই। আরও বলেছেন, ‘প্রথম ইনিংসে লিড নিতে পারায় খুশি। ক্রিকেটে যা কিছু হতে পারে। আমাদের তৃতীয় দিন সকালে বড় লিড নেওয়ার জন্য খেলতে হবে।’ এদিনও খারাপ আলোর কারণে ১২ওভার কম হয়েছে। আম্পায়ার যখন খেলা বন্ধ করলেন ঘড়িতে বিকেল চারটে বারো। তখনও সূর্য অস্ত যায়নি। যথেষ্ট আলো ছিল। আরও কয়েকটা ওভার খেলা চালানোই যেত!
অনূর্ধ্ব ২৫ বাংলার হয়ে ভালো খেলার সুবাদে সিনিয়র দলে ডাক পেয়েছিলেন কাজি। ২৪ বল ক্রিজে দাঁড়িয়ে ছিলেন। করেছেন মাত্র এক রান। যদিও তাঁর এলবিডব্লিউ নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। আশিস কুমার ফেরান তাঁকে। অভিমন্যু ও সুদীপ যতক্ষণ ব্যাটিং করলেন, অনায়াসেই রান করেছেন। দু’জনেই পরিকল্পিত ব্যাটিং করলেন। কোনোরকম হারাকিরি করেননি। বেশ কয়েকবার আশিস কুমার ও রাহুল শুক্লার বল তাঁদের সমস্যায় ফেলেছিল। সামলে নিয়ে নিজেদের সহজাত ভঙ্গিমায় রান করে গিয়েছেন তাঁরা। মধ্যাহ্নভোজ বিরতির আগেই অর্ধশতরান পূর্ণ করেন অভি। সুপ্রিয় চক্রবর্তীর বলে এক রান নিয়ে। লাঞ্চের পর স্ট্রেট ড্রাইভ মেরে পঞ্চাশ করেন সুদীপও।
যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন, মনে হচ্ছিল জোড়া শতরান আসা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। তখনই মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে সুদীপের। নাদিমের বলে খোঁচা দিয়ে আউট হন সুদীপ (৬৮)। বন্ধু সুদীপ ফেরার কিছুক্ষণ পর অভিও (৭৭) আউট। সুপ্রিয় চক্রবর্তীর বলে। ভরসা দিতে পারেননি মিডল অর্ডার। চা বিরতির পর বাংলা শিবিরে ফের ধাক্কা দেন সুপ্রিয়। ফুলটস বলে এলবিডব্লিউ মনোজ (১৩)। অনুষ্টুপ (২৫) অনুকূল রায়ের সোজা বলে বোল্ড হন। আউট হওয়ার আগে অবধি তাঁকে ছন্দেই দেখাচ্ছিল। ১৪৭/১ থেকে ব্যাটিং বিপর্যয়ে ২০৭/৫।
যতটা না ঝাড়খণ্ডের বোলাররা ভালো করেছেন, তার চেয়ে বাংলার ব্যাটাররা নিজেদের দোষে উইকেট ছুঁড়ে দিয়েছেন। সাময়িক চাপ কাটান অভিষেক পোড়েল। পালটা আক্রমণে ৩৭ বলে ২৫ রানের ইনিংস খেলে। পড়ন্ত বিকালে চোখ জুড়ানো দু’টি কভার ড্রাইভ মারেন অভিষেক। মাঠে যে ক’জন দর্শক উপস্থিত ছিলেন, ওই দু’টি শট চাক্ষুষ করে তাঁরা তৃপ্তি পেয়েছেন নিশ্চিত। অভিষেককে যোগ্য সহায়তা করেছেন শাহবাজও। দু’জনেই অপরাজিত আছেন। ম্যাচ এখনও ওপেন রয়েছে। যা কিছু হতে পারে। আশাবাদী ঝাড়খণ্ডও। হ্যাঁ, এবার বাংলা যদি বৃহস্পতিবার লিডটাকে ২০০+ করতে পারে তখন অ্যাডভান্টেজ বলা যেতে পারে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর— ঝাড়খণ্ড প্রথম ইনিংস ১৭৩ অলআউট
বাংলা — ২৩৮/৫ (অভিমন্যু ৭৭, সুপ্রিয় ২/৬৮)
৬৮ রানে এগিয়ে বাংলা
Comments :0