Editorial

খোয়াব

উত্তর সম্পাদকীয়​

সামাজিক আন্দোলনের ক্ষেত্রেই হোক বা রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে হোক, আজ পর্যন্ত সব নেতারাই দৃঢ় প্রত্যয়ে ঘোষণা করেছিলেন যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন দেশে জন্য সমাজের জন্য কাজ করে যাবেন। এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম বিজেপি’র নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোদী বলেছেন পশ্চিমী দুনিয়ার মতো ভারতকে উন্নত দেশে পরিণত করার আগে তিনি থামবেন না বা বিশ্রাম নেবেন না। এক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যায় মৃত্যুর আগেই তিনি ভারতকে উন্নত দেশ বানিয়ে ছাড়বেন বলে ঘোষণা করে দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি ধরেই নিয়েছেন অথবা নিশ্চিত ভারত উন্নত দেশ না হওয়া পর্যন্ত তাঁর মৃত্যুর সম্ভাবনা নেই। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে রাজ্য ও কেন্দ্রের প্রশাসনিক প্রধানের (মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী) পদে ২৩ বছর অতিক্রম করার পর মোদী নিজেই তাঁর মনের কথা ব্যক্ত করেছেন। ২০০১ সালেই ৭ অক্টোবর তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৩ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকার পর ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেন। তারপর কেটে গেছে আরও দশ বছর। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান হিসাবে ২৩ বছর কাটানো মোদীর কাছে উদ্‌যাপনের বিষয় মনে হয়েছে। তাই তিনি দেশকে আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো উন্নত না করে থামবেন না বলে ঘোষণা করেছেন।
গত লোকসভা নির্বাচনের আগে এক সাক্ষাৎকারে মোদী নিজেকে অজৈবিক বলে জানিয়েছিলেন। অর্থাৎ তাঁর জন্মের ক্ষেত্রে তাঁর পিতা-মাতার ভূমিকাকে সরাসরি অস্বীকার করেছিলেন। মাতৃগর্ভে থেকে তিনি ভূমিষ্ঠ হননি। পরমাত্মার ইচ্ছায় এই ধরাধামে তাঁর আবির্ভাব হয়েছে। তিনি যেসব কাজ করেছেন এবং করছেন সেসব পরমাত্মাই নাকি তাঁকে দিয়ে করাচ্ছেন। সরাসরি না বললেও বোঝাতে চেয়েছেন ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানো, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে বিশ্বের উন্নত দেশের সমকক্ষ করার জন্যই নাকি পরমাত্মা তাঁকে পাঠিয়েছে। এইসব কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরমাত্মা তাঁকে ফিরিয়ে নেবেন না। জনগণকে নির্বোধ ধরে নিয়ে নিজেকে অবতার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার নিখুঁত পরিকল্পনা করেছেন। এটাও বোঝানোর চেষ্টা করেছেন সাধারণ মানুষের মতো জৈবিক প্রক্রিয়ায় তাঁর জন্ম হয়নি। তাই তাঁর মৃত্যুও হবে না। জৈবিকভাবে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো এই কথাগুলো তিনি তাঁর গর্ভধারিণী মা বেঁচে থাকতে বলেননি, বলেছেন মৃত্যুর পর।
এখন প্রশ্ন হলো হঠাৎ করে মোদীর এমন অবতার সাজার প্রয়োজন হলো কেন? মোদী যে অসম্ভব প্রচারপ্রিয়, আত্মসর্বস্ব, একমেব অদ্বীতিয়ম হবার প্রবল বাসনা আছে সেটা কমবেশি সকলেই জানেন। তেমনি ক্ষমতার পরিসরে তিনি কোনও প্রতিদ্বন্দ্বীকে রাখতে চান না। তাই প্রধানমন্ত্রী হয়েই ৭৫ বছরের পর সব নেতাকে অবসরে বাধ্য করেন। আদবানি যোশীদের মতো নেতাদের সরিয়ে মার্গদরশকে পরিণত করে একাই দলে ও সরকারে ছড়ি ঘোরানোর ব্যবস্থা করেন। এখন তাঁর বয়স ৭৪ বছর। তাঁরই তৈরি নিয়ম অনুযায়ী ২০২৯ সালে তাকে মার্গদর্শক হয়ে যেতে হবে। কিন্তু তিনি ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নন। ক্ষমতায় থেকে যাবার বাসনা থেকেই মাথা খাটিয়ে অবতারের গল্প বানিয়েছেন। তিনি যদি অজৈবিক হন তাহলে তাঁর বয়স নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে কোনও বাধা থাকবে না। সেকথা মাথায় রেখেই তিনি আমৃত্যু কাজ করে যাবেন বলেননি। দেশকে উন্নত/ বিকশিত না করে তিনি থাকবেন না বলেছেন। আগের ভাষ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই বার্তা দিয়েছেন ভারত উন্নত না হওয়া পর্যন্ত তিনি মরবেন না। তার জন্য ২০৪৭ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা থেকে যেতে চান।

Comments :0

Login to leave a comment