Youth Death

৪ হাসপাতাল ঘুরেও মেলেনি চিকিৎসা, রাস্তায় মৃত্যু যুবকের

রাজ্য জেলা

ছবি- অভীক ঘোষ

ফের রেফার ‘রোগে’ প্রায় বিনা চিকিৎসায় যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ। চার হাসপাতাল ঘুরেও মিললো না চিকিৎসা। মৃত যুবকের পরিবারের অভিযোগ হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে রাস্তাতেই মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। মৃত যুবকের নাম বিকাশ দুলে। হুগলীর হরিপালের আশুতোষ পঞ্চায়েত এলাকার চৌতারা তেঁতুল তলা এলাকার বাসিন্দা তিনি। 
তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বুধবার, ভাইফোঁটার দিন মাথা যন্ত্রণা নিয়ে হরিপাল হাসপাতালে ভর্তি হন বিকাশ। সেখান থেকে সেদিনই চুঁচুড়া হাসপাতালে রেফার করা হয় তাঁকে। শুক্রবার সেখান থেকে ফের ওই যুবককে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। সেখানে মাথায় স্ক্যান করা হয়। তারপর তাঁকে বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিতে রেফার করা হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি নেননি বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের লোকজনেরা। রাস্তাতেই সারারাত শুয়ে থাকতে হয় বিকাশ ও তাঁর পরিবারকে। শনিবার সকালে মৃত্যু হয় তরতাজা যুবক বিকাশের। বিনা চিকিৎসাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। 
মৃত যুবকের মা চায়না দুলের দাবি, ‘‘তাঁর ছেলেকে ভর্তির জন্য কয়েকজন এসে পাঁচ হাজার টাকা চেয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা দেওয়া আমাদের সামর্থ্য ছিল না। রাতে ছেলের পাশেই আমি শুয়েছিলাম, সকাল ৬টা নাগাদ ঘুম ভাঙলে দেখি ছেলে আর নেই’’।
বিকাশের জেঠিমা আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘‘ভর্তি করে চিকিৎসা করালে বেঁচে যেতে। হাসপাতাল থেকে কুকুরের মতো তাড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশও তাড়িয়ে দিয়েছে। চিকিৎসা না পেয়েই তো মারা গেল। তাহলে এত বড় বড় হাসপাতাল কিসের জন্য। ছেলেটাকে একটু জায়গাও দেয়নি যে শুইয়ে রাখবে। তাকে নিয়ে রাস্তায় শুতে হয়েছিল।’’
গত কয়েক বছর ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রকাশ্যে বলে চলেছেন, রেফার কেস চলবে না। হাসপাতালগুলিতে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো রাখতে হবে রোগী পরিষেবার জন্য। না হলে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিতে গিয়ে মারা যাবে রোগী। নবান্নের তরফে জারি হয় নির্দেশিকাও। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর অন্য সব বাগাড়ম্বরের মতো এক্ষেত্রেও দেখা যায় তাঁর নির্দেশ কার্যক্ষেত্রে শূন্যগর্ভ। রেফার-রোগ বিন্দুমাত্র কমেনি। চলছে রাজ্যজুড়েই। ভুক্তভোগী পরিবারের আক্ষেপ, মুখে তর্জন গর্জনই সার, রেফার সমস্যা সামলাতে ব্যর্থ নবান্ন। মাঝে কোভিড পরিস্থিতিতে ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে যায় রেফার কেস। অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনে। কিন্তু এখনও অবস্থা যে কে সেই।
মাত্র সাত মাস আগে কলকাতার তিনটি প্রথম সারির সরকারি হাসপাতাল থেকে ‘রেফার’ হওয়ার পর চতুর্থ হাসপাতালে মৃত্যু হয় দুর্ঘটনায় আহত এক যুবকের। বাইক দুর্ঘটনার পর টালিগঞ্জের বাসিন্দা মেঘনাদ চন্দ্রকে জখম অবস্থায় প্রথমে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে ভর্তি না করে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে আবার অসুস্থ বোধ করায় প্রথমে এসএসকেএম হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে রেফার করা হয় চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে। সেখান থেকেও ওই যুবককে রেফার করা হয় এনআরএস হাসপাতালে। প্রথম সারির তিন হাসপাতাল ঘুরে শেষ পর্যন্ত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় যুবকের। এদিন সামনে এসেছে হুগলি হরিপালের আশুতোষ পঞ্চায়েত এলাকার চৌতারা তেঁতুল তলা এলাকার ঘটনা। 
রাজ্যের চিকিৎসক সংগঠনগুলির বক্তব্য, উপযুক্ত সংখ্যক চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে ভুগছে গ্রাম-শহরের প্রতিটি হাসপাতাল। বেড, ওষুধপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং পরিকাঠামোর বেহাল দশা  বিভিন্ন হাসপাতালে। দিনের পর দিন চলছে এই অবস্থা। এসব ঠিকঠাক করার কোনও চেষ্টাই রাজ্য সরকারের নেই। আসল গলদ এই গোড়াতেই। সমস্যা নিরসনের উদ্যোগ না নিয়ে শুধু ওপর থেকে নানান ‘নির্দেশিকা’ আর বাগাড়ম্বরেই ক্ষান্ত দিচ্ছে প্রশাসন!
এর মধ্যেই হাসপাতালগুলিতে ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া’র মতো চেপে রয়েছে দালালরাজের রমরমা। অসহায় রোগীরা এবং তাঁদের পরিবারগুলি। হাসপাতালে নজর রাখলেই বোঝা যায়, এই দালালদের প্রশ্রয়দাতা শাসকদলের ছোট-বড় নেতারা। এই নেতাদের মদতেই দালালচক্রের এত দাপট। কোথাও যেন কেউ দেখার নেই! সব মিলিয়ে গত দশ বছরে বেসামাল হয়ে পড়েছে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। বহু ক্ষেত্রেই পুলিশ বা হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানোর পরও কোনও সুরাহা নেই। কোনও একটি ঘটনা জানাজানি হলে কয়েকদিন ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘নজরদারি’ চলে। ফের যথারীতি আলগা হয়ে যায় রাশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, ডাক্তার, নার্স থেকে পর্যাপ্ত স্থায়ী কর্মীর মারাত্মক অভাব। ফলে সব ক্ষেত্রে নজর রাখা সম্ভব হচ্ছে না। নেই পর্যাপ্ত অস্থায়ী কর্মীও। অন্যদিকে বহু সময়েই দেখা যাচ্ছে হয় প্যাথলজি বা রেডিওলজি পরীক্ষার টেকনিশিয়ানের অভাব, নতুবা মেশিন খারাপ। এসবের সুযোগ নিয়েই সক্রিয় দালালরাজ।
 

Comments :0

Login to leave a comment