New Parliament Building

রাষ্ট্রপতি আমন্ত্রিতই নন! সংসদ ভবন উদ্বোধন বয়কটের পথে বিরোধীরা ?

জাতীয়

New Parliament Building


নবনির্মিত সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করতে পারে কংগ্রেস সহ বিরোধীরা। বিরোধী দলের কোনও নেতাই অবশ্য এব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি সোমবার। তবে বয়কটের প্রস্তাব নিয়ে তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন বলে জানা গিয়েছে। 
আগামী ২৮ মে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন হওয়ার কথা। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি-আরএসএস সরকার যে কায়দায় সংসদ ভবন উদ্বোধনের ছক কষেছে, তা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে দেশে। স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতাদের বাদ দিয়ে, হিন্দুত্ববাদের অন্যতম উদ্গাতা সাভারকারের জন্মদিনটিকেই সংসদ ভবন উদ্বোধনের জন্য বেছে নিয়েছে কেন্দ্র! এতেই শেষ নয়, ভারতীয় সংসদের প্রধান স্বয়ং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে সংসদ ভবন উদ্বোধন করতে দিচ্ছেন না মোদী! এমনকি তাঁকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণও জানানো হচ্ছে না! শিলান্যাস অনুষ্ঠানের মতো ভবন উদ্বোধনও মোদী নিজেই করবেন বলে ঠিক করেছেন। সেই মতো লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লাকে দিয়ে ‘উদ্বোধক’ হিসাবে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণও করিয়ে নিয়েছেন মোদী। ভারতের সংসদীয় ইতিহাসে এমন বেনজির এবং লজ্জাজনক ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে ছি ছি পড়ে গিয়েছে

বিরোধীদের সাফ বক্তব্য, সংসদের প্রধান হিসাবে একমাত্র রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুরই নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করা উচিত। এব্যাপারে চব্বিশ ঘণ্টা আগে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বক্তব্যের সুরেই সোমবার মোদী সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রধান বিরোধী দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। এদিন একের পর এক টুইট করে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, এর আগে নয়া সংসদ ভবনের শিলান্যাসও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে করতে দেননি প্রধানমন্ত্রী মোদী। এমনকি শিলান্যাস অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর সৌজন্যটুকুও দেখায়নি তাঁর সরকার! এবার উদ্বোধনী পর্বেও একই অমর্যাদা ও অভব্যতার পুনরাবৃত্তি করতে চলেছেন মোদী। এই অবস্থায় কংগ্রেসের সাংসদরা কি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাবেন? জবাবে কংগ্রেসের এক শীর্ষনেতা সর্বভারতীয় এক সংবাদপত্রের সাংবাদিককে বলেন, ‘‘আমার সন্দেহ আছে।’’ প্রসঙ্গত, রবিবারই টুইটারে রাহুল গান্ধী স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নন, স্বয়ং রাষ্ট্রপতিরই নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করা উচিত।’’

মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, বি আর আম্বেদকর বা জওহরলাল নেহরুর মতো নেতাদের বাদ দিয়ে, ব্রিটিশ শাসকদের কাছে মুচলেকা দেওয়ার জন্য কুখ্যাত বিনায়ক দামোদর সাভারকারের জন্মদিবসে সংসদ ভবন উদ্বোধন এবং উদ্বোধকের দায়িত্ব থেকে বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধানকে বাদ দেওয়া, দুই প্রশ্নেই জোরালো সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি-আরএসএস সরকার। বিরোধীরা বলছেন, সরকার যেভাবে সাংবিধানিক রীতিনীতি ও সৌজন্য পদদলিত করে চলেছে, তা নিয়ে উপযুক্ত প্রতিবাদ প্রয়োজন। তাছাড়া ‘আদিবাসী সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে দেশের রাষ্ট্রপতি পদে বসানো হয়েছে’ বলে দীর্ঘদিন ধরে শোরগোল চালালেও, সংসদ ভবন উদ্বোধনে তাঁকে ঘেঁষতে না দেওয়ায় বিজেপি-আরএসএসের মুখোশ খসে পড়েছে।

মল্লিকার্জুন খাড়গে এদিন তাঁর উপর্যুপরি টুইটে বলেন, ‘‘রকমসকম দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে যে, শুধুমাত্র ভোটে ফায়দা কুড়োনোর জন্যই দলিত ও আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে রাষ্ট্রপতি ঠিক করেছে বিজেপি সরকার। এর আগের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে সংসদ ভবনের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণটুকুও জানায়নি সরকার। এখন বর্তমান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকেও ভবন উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না।’’ কংগ্রেস সভাপতি মনে করিয়ে দেন, ‘‘সংসদ হলো ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের শীর্ষতম আইনসভা। ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন সর্বোচ্চ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ। একমাত্র তিনিই একাধারে সরকার, বিরোধী এবং প্রতিটি নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনিই দেশের প্রথম নাগরিক।’’ খাড়গের কটাক্ষ, ‘‘অথচ দেশের প্রথম নাগরিকই সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্রাত্য!’’ মোদী সরকারের নির্লজ্জতাকে তীব্র আঘাত হেনে তিনি বলেন, ‘‘একের পর এক পদক্ষেপে দেশের সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে অমর্যাদা করে চলেছে সরকার। বিজেপি-আরএসএস আমলে ভারতের রাষ্ট্রপতির দপ্তরকে প্রতীকী পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে।’’

পরে এদিনই কংগ্রেস সদর দপ্তরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘ভারতের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের রক্ষক এবং গর্ব হলো সংসদ। সংসদের গরিমা কোনভাবেই ম্লান হতে দেওয়া যায় না। সংবিধানের ৭৯ ধারার স্পষ্ট নির্দেশ, রাজ্যসভা ও লোকসভা মিলিতভাবে ভারতীয় সংসদের প্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি। আবার ৮৫ নম্বর ধারায় বলা রয়েছে, সংসদের অধিবেশন ডাকার অধিকারী একমাত্র রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র লোকসভার নেতা। সুতরাং সংবিধানের প্রতি সম্মান থাকলে রাষ্ট্রপতিকেই সংসদ ভবন উদ্বোধন করতে দেওয়া উচিত ।’’
তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কংগ্রেস হাজির থাকবে কিনা জানতে চাওয়া হলে স্পষ্ট জবাব এড়িয়ে যান শর্মা। তিনি শুধু বলেন, ‘‘যা চলছে তাতে করে সাংবিধানিক অগ্রাধিকারকেই মান্য করা উচিত। ভারতীয় সংসদের প্রধান হিসাবে মাননীয় রাষ্ট্রপতিকেই ভবন উদ্বোধন করতে দেওয়া উচিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও সেখানে উপস্থিত থাকার যথেষ্ট অধিকার রয়েছে। সাংবিধানিকভাবে যা সঠিক, আমরা সেটিই বলছি।’’


 

Comments :0

Login to leave a comment