UN Israel

নির্লজ্জের ভাষণ

সম্পাদকীয় বিভাগ

রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেছে গণহত্যাকারী ইজরায়েল শুধু এক ঘরে হয়ে যায়নি, কার্যত নিঃসঙ্গ হয়ে গেছে। একমাত্র আমেরিকাই এখনও ইজরায়েলকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে এবং মদত দিয়ে যাচ্ছে। অ‍‌ধিবেশনে বক্তৃতা দেবার জন্য যখন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নাম ঘোষণা হয় সঙ্গে সঙ্গে প্রবল ধিক্কারের স্লোগানে গোটা হল গমগম করতে থাকে। গণহত্যার নায়ক বেঞ্জামিনের কথা শুনতে অস্বীকার করে এক এক করে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা হল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে থাকেন। যেতে যেতে অনেকেই ইজরায়েলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। এক সময় হল প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। যে কয়জন বসেছিলেন তাঁরা কেউই তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। সেই ফাঁকা হলে বক্তৃতা দিয়ে নির্লজ্জের মতো নেতানিয়াহু দাবি করেন তাঁরা মোটেই গণহত্যা করছেন না। তাঁরা শুধু হামাস সদস্যদের নিকেশ করছেন।
ইজরায়েল তথা আমেরিকার ভাষ্যে হামাস সন্ত্রাসবাদী। ইজরায়েলের অস্তিত্ব নির্মূল করা তাদের ঘোষিত লক্ষ্য। কিন্তু আরব দুনিয়ায় প্রধানত প্যালেস্তিনীয়দের চোখে মুক্ত ও স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হামাস হলো সশস্ত্র বিপ্লবী যোদ্ধা। দখলদার ও আগ্রাসী ইজরায়েলের গ্রাস থেকে পিতৃভূমি রক্ষা করতেই জীবন পণ করে যুদ্ধ করছে। যুগ যুগ ধরে স্বাধীন-সার্বভৌম প্যালেস্তান রাষ্ট্রের দাবি অবহেলিত ও অস্বীকৃত হবার ফলে প্যালেস্তাইনবাসীদের ক্ষোভ চরমে পৌঁছে গেছে। আমেরিকা এবং তার পশ্চিমী সহযোগী দেশগুলি ছিল স্বাধীন প্যালেস্তাইন গড়ায় প্রধান অন্তরায়। ইজরায়েলের জায়নবাদকে সাহায্য করার জন্য বার বার স্বাধীন প্যালেস্তাইনের বিরোধিতা করে গেছে। সেই সুযোগে বলা ভালো পরোক্ষ সহায়তায় একের পর এক প্যালেস্তাইন ভূখণ্ড দখল করে প্যালেস্তাইনবাসীদের প্রান্তিক করে কেবলমাত্র গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে সঙ্কুচিত করে ফেলে। ইজরায়েলের অন্তিম লক্ষ্য এভাবে সমগ্র প্যালেস্তাইন ভূখণ্ড দখল করে বৃহত্তর ইজরায়েল গঠন করা। এই লক্ষ্য নানা প্রসঙ্গে একাধিকবার প্রকাশ্যে ঘোষণা করাও হয়েছে। আর এই সমগ্র পরিকল্পনায় ইজরায়েলের প্রধান ভরসা আমেরিকার নিঃশর্ত সমর্থন।
সম্প্রতি পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। গত দু’বছর ধরে ইজরায়েল যেভাবে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র চালিয়ে নির্বিচারে নিরপরাধ প্যালেস্তিনীয়দের হত্যা করে চলেছে এবং তাতে বিশ্বজুড়ে ইজরায়েলী গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠতে শুরু করেছে সেই আবহে মার্কিন সহযোগী বন্ধু দেশগুলিও ইজরায়েলের নিন্দা করতে বাধ্য হচ্ছে। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলি অমানবিক ইজরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছিল। এখন ইউরোপের উন্নত দেশগুলিও বিরোধিতার সুর চড়াতে শুরু করেছে। ইউরোপের প্রায় সব দেশই এখন স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের অধিবেশনেই বেশিরভাগ দেশ সোচ্চারে ইজরায়েলের বিরোধিতা করে প্যালেস্তাইনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। এতদসত্ত্বেও নির্লজ্জভাবে নেতানিয়াহু প্যালেস্তিনী গণহত্যাকে বৈধতা দিয়ে ভাষণ দিয়েছেন ফাঁকা হলে। গাজায় প্রায় ৭০ হাজার মানুষ খুন করে, লক্ষাধিক মানুষকে জখম ও পঙ্গু করে, কয়েক লক্ষ মানুষকে বিতাড়িত করে নেতানিয়াহু দাবি করছেন তিনি মোটেই গণহত্যা করছেন না। তিনি নাকি সন্ত্রাসবাদী নিকেশ করছেন। নিহতদের মধ্যে যে ৪০-৫০ হাজার শিশু ও মহিলা তারাও ট্রাম্পের বন্ধু নেতানিয়াহুর ভাষ্যে সন্ত্রাসবাদী। নিজে সন্ত্রাসবাদী না হলে উন্মাদ প্রলাপ বকা সম্ভব নয়।

Comments :0

Login to leave a comment