Adani Scam

২০১৮-তে সেবি বিধি শিথিল করেছিল কেন, উঠল প্রশ্ন

জাতীয়

Adani

আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে সমস্ত শিখণ্ডী সংস্থার পরিচয় গোপনের জন্য কি শেয়ারবাজারের বিধি বদল হয়েছিল? মোদী তাঁর প্রিয় আদানির জালিয়াতি গোপনে কি সেবির কড়া বিধি বদল করে শিথিল বিধির উদ্যোগ নেন? মোদীকে তার জবাব দিতে হবে বলে বৃহস্পতিবার দাবি করলেন কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ। সেবি বুধবার সেই শিথিল বিধি ফের আরো কড়া করার প্রস্তাব এনেছে। কেন সেবির বিধি কড়া থেকে শিথিল আবার শিথিল থেকে কড়া হচ্ছে তারই জবাব চাইছেন রমেশ।

সেবির শেয়ার বিধি বদল প্রসঙ্গে রমেশ দেশের শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি) বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিধি বদল করতে বুধবার যে প্রস্তাব পেশ করেছে তা উল্লেখ করেন। প্রস্তাবে শেয়ার বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বা ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্ট (এফপিআই) বিধি আরো কড়া করার প্রস্তাব পেশ করেছে সেবি। প্রস্তাবে স্পষ্ট জানানো হয়েছে ২০১৮ সালে এফপিআই বিধি শিথিল করা হয়েছিল। আগে এই বিধি কড়া ছিল। তাতে বিদেশি লগ্নিকারক বা এফপিআই’র সমস্ত নথি লিপিবদ্ধ করা বাধ্যতামূলক ছিল। তা বিলোপ করে শিথিল করা হয় বিধি। এই বিধি শিথিলের ফলে এফপিআই’র কারা মূল মালিক, কাদের স্বার্থ এতে রক্ষা হচ্ছে তা বিশদ জানানোর কোন  দরকার হতো না। শেয়ার বিনিয়োগে জালিয়াতি নিয়ে মূল অভিযোগ ছিল এই বিদেশি বিনিয়োগকারীর পরিচয় নিয়ে। সকলেই আদানির নিজস্ব বিদেশি শিখণ্ডী সংস্থা বলেই তথ্য ফাঁস করে দেয় আমেরিকার সংস্থা হিন্ডেনবার্গ। এবারে সেবি সেই এফপিআই বিধি কঠোর করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পরিচয় বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব এনেছে। এদিন এফপিআই সংক্রান্ত বিধি সংশোধনের উল্লেখ করে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, মোদী জমানায় কেন এফপিআই বিধি শিথিল হলো, তার তো এবার জবার তো দিতে হবে কেন্দ্রকে। রমেশের কথায় মোদীর প্রিয় আদানির স্বার্থেই যে বিধি শিথিল হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার লগ্নিতে যুক্ত সমস্ত শিখণ্ডী বিদেশি বিনিয়োগকারীর পরিচয় প্রকাশে অবিলম্বে যৌথ সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান রমেশ।

এদিন সেবির এফপিআই বিধি কঠোর করা এবং বিদেশি বিনিয়োগাকারীর সমস্ত পরিচয় নথিভুক্ত করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে রমেশ বলেন, সেবি আজকে বিধি কঠোর করার প্রস্তার এনেছে। তা আগে তো কঠোর ছিল। ২০১৮ সালে কেন শিথিল করা হলো? এতে কার স্বার্থ দেখা হয়েছে তা জানাক সেবি। তিনি বলেন নতুন প্রস্তাবিত বিধিতে এফপিআই’র এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীর সমস্ত পরিচয় প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। যারা ২০১৮ সালের পর বিধি শিথিল হওয়ায়  বিনিয়োগের গোপন লেনদেনের কারবার চালিয়েছে, সেবি  এবারে তাদের সব পরিচয় প্রকাশ করুক। তাতেই পরিষ্কার হয়ে যাবে আদানি গোষ্ঠীর শিখণ্ডী সংস্থা কিভাবে বেআইনি লেনদেন চালিয়েছে।

এদিন সেবির এফপিআই বিনিয়োগ বিধি কঠোর করার প্রস্তাব নিয়ে রমেশ বলেন, গত ৫-৬ বছরে সেবির এই বিধি শিথিল হওয়ায় কোন কোন সংস্থার লাভ হয়েছে তা এবারে প্রকাশে  সেবির উদ্যোগী হওয়া উচিত। বর্তমানে সেবি বিধি বদলে ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগকে বেশি ঝুঁকির বিনিয়োগ বলে চিহ্নিত করেছে। এই বেশি ঝুঁকির বিনিয়োগকারীর সমস্ত পরিচয় আগামী দিনে নিয়মিত প্রকাশ করা উচিত বলে তিনি জানান। রমেশ সেবির এফপিআই বিধি বদল নিয়ে  প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে  বলেন, আশা করব বিধি বদলের পর আদানি লেনদেনের বেনিয়ম প্রকাশে তৎপর হবে সেবি। তারা নিছক চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য  এই উদ্যোগ নেবে না।
প্রসঙ্গত এবছরের শুরুতেই মোদী ঘনিষ্ঠ আদানির শেয়ার বাজারে কারচুপি জালিয়াতির তথ্য ফাঁস করে দেয় হিন্ডেনবার্গ সংস্থা। এতে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দর ধসে যায়। শেয়ার বাজার থেকে আদানি গোষ্ঠী ১৩ লক্ষ কোটি টাকা উবে যায়। হিন্ডেনবার্গ তার রিপোর্টে আদানি গোষ্ঠীর বিদেশে বিভিন্ন সেল কোম্পানি বা শিখণ্ডী সংস্থার মারফত জালিয়াতি করে অর্থ লোপাটের তথ্য প্রকাশ করে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক সংস্থার অর্থ বিদেশে পাচারের পর শিখণ্ডী সংস্থার মাধ্যমে আদানির বিভিন্ন সংস্থায় বিনিয়োগ হতো। এতে দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক সংস্থার বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এনিয়ে বিরোধী দল তদন্তে যৌথ সংসদীয় কমিটির দাবি জানালেও তা মানেনি কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্টেও এনিয়ে মামলা দায়ের হয়।

সুপ্রিম কোর্ট তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করে। ছয় জনের কমিটি ইতিমধ্যে তাদের রিপোর্ট পেশ করেছে। সেবি তার রিপোর্ট প্রকাশে আরও তিনমাস সময় পেয়েছে। ছয়জনের কমিটি তাদের রিপোর্টে সেবির বিধি বদলের কথা উল্লেখ করেই জানিয়েছিল, সেবির আইনের ফলে শিখণ্ডী সংস্থার পরিচয় জানার ক্ষেত্রে একটা অলঙ্ঘনীয় প্রাচীর তৈরি হয়েছে। সেবির আইন বদল আদানির শেয়ার বাজারে বেনিয়মের তথ্য গোপনে সহায়ক হয়। তা লেনদেনের সব নথির নাগাল পাওয়া এতে খুব কঠিন হয়ে পড়ে। গতকাল সেবির বিদেশি বিনিয়োগকারির যাবতীয় পরিচয় বাধ্যতামূলক লিপিবদ্ধ করার কড়া বিধি আরোপের প্রস্তাব নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠেছে।

Comments :0

Login to leave a comment