গত দশ বছরে আরএসএস-বিজেপি’র শাসনে সংবিধানকে সমানে আক্রমণ করা হয়েছে। তাকে আড়াল করতেই হঠাৎ করে এখন জরুরি অবস্থা নিয়ে প্রচারে নেমেছে বিজেপি সরকার।
সোমবার সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে এই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত। সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে জরুরি অবস্থার সময় আরএসএস-র প্রধান বালাসাহেব দেওরস সরাসরি আপসের বার্তা দিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। জরুরি অবস্থার নীতি রূপায়নে সহযোগিতার আশ্বাস পর্যন্ত দিয়েছিলেন।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ঘোষণা করেছে যে প্রতি বছর ২৫ জুন, ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার দিনটিকে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। ‘নাগরিকদের ওপর আক্রমণ এবং জনজীবনে গভীর যন্ত্রণা নামিয়ে আনার’ স্মৃতি মনে করানো হবে। তার আগে লোকসভার অধ্যক্ষ পদে দ্বিতীয়বার শপথ নেওয়ার দিনই জরুরি অবস্থা প্রসঙ্গে প্রস্তাব পেশ করেন ওমবিড়লা। কোনও অধ্যক্ষকে শপথ নেওয়ার পর এমন প্রস্তাব পেশ করতে দেখা যায়নি।
কারাত বলেন, ‘‘আরএসএস-বিজেপি গত দশ বছর কিছু না বলে এখন নেমেছে কেন। কারণ, বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই ধারণা প্রবল যে গত দশ বছর কেন্দ্রে বিজেপি’র শাসনে সংবিধানে সমানে আক্রান্ত হয়েছে।’’
তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘যেভাবে আইন পাশ হয়েছে, যে নীতি নেওয়া হয়েছে এবং সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের চরম প্রয়োগ হয়েছে যে কায়দায়, সংবিধানের ওপর আক্রমণের ধারণা আরও গভীর হয়েছে। তার মোকাবিলায় আরএসএস-বিজেপি এখন হঠাৎ করে জরুরি অবস্থার বিরোধিতা সংক্রান্ত প্রচারে নেমেছে।’’
সদানিন্দিত জরুরি অবস্থার বিরোধিতা নতুন নয়। নাগরিক অধিকার খর্ব করে বিরোধীদের ওপর আক্রমণের সেই পদক্ষেপের বিরোধিতায় গত ২৫ জুন সিপিআই(এম) বলেছে, ‘‘গভীর অন্ধকারের সময়ে ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা প্রয়োগ করেছিলেন জনতা লড়াই করেছিল এবং স্বৈরাচারকে পরাজিত করেছিল। মোদীর নেতৃত্বাধীন কর্পোরেট-সাম্প্রদায়িক জোটের শাসনে, আজকের সময়ে, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং গণতন্ত্র রক্ষার শপথ নিচ্ছি।’’
আরএসএস-বিজেপি’র নতুন উদ্যোগে প্রশ্ন তুলেছেন তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনও। তিনি চেন্নাইয়ে বলেছেন, ‘‘জরুরি অবস্থার সময়ে শিক্ষাকে রাজ্য তালিকা থেকে কেড়ে সংবিধানের যুগ্ম তালিকায় নেওয়া হয়েছিল। এবার বিজেপি সরকার কি শিক্ষাকে রাজ্য তালিকায় ফিরিয়ে দিতে তৈরি?’’
১৯৭৫’র ২২ আগস্ট এবং ১৯৭৬’র ১৬ জুলাই বালাসাহেব দেওরস চিঠি পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। দেওরসের চিঠিতে কুখ্যাত ‘বিশ দফা কর্মসূচি’ রূপায়নে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। আরএসএস’র কর্মকর্তারা ক্ষমাভিক্ষা করে জেলের বাইরে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। দেওরসের এই চিঠি ‘হিন্দু সংগঠন এবং সত্যবাদী রাজনীতি’ নামে বইয়ে সংকলিত হয়। এই বইয়ের সম্পাদনা করেন দেওরস নিজে। জরুরি অবস্থার সময় গোয়েন্দা বিভাগ বা ইনটিলিজেন্স ব্যুরোর সহকারী প্রধান টিভি রাজেশ্বর একাধিক সাক্ষাৎকারে দেওরসের এই চিঠির প্রসঙ্গ জানিয়েছেন।
কারাত বলেন, ‘‘জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে চিঠি লিখেছিলেন আরএসএস’র প্রধান বালসাহেব দেওরস। আজ আরএসএস’র সব শাখায় সেই চিঠি পড়ানো উচিত। আরএসএস’র কর্মীদের নিজেদের ইতিহাস জানা উচিত।’’
কারাতের ব্যাখ্যা, ‘‘দেওরস সে সময়ে সবচেয়ে আপসমূলক চিঠিটি লিখেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীকে। জরুরি অবস্থার সময় আরএসএস’র সহায়তা নেওয়ার আবেদন পর্যন্ত জানানো হয়েছিল ওই চিঠিতে।’’
EMERGENCY BRINDA KARAT
সংবিধানের ওপর আক্রমণ আড়াল করতেই 'জরুরি অবস্থা'র প্রচারে সঙ্ঘ পরিবার: বৃন্দা কারাত
×
Comments :0