Assam SC BJP

আসামে বি জে পি’র ছক ভেস্তে গেছে

সম্পাদকীয় বিভাগ

মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানোর হিন্দুত্ববাদী অনুপানে বি জে পি’র রাজনৈতিক ভিত্তি দৃঢ় করা সহজ হচ্ছিল না। তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার গদি ধরে রাখাও কঠিন হয়ে পড়ছিল। এই অবস্থায় হিন্দুত্বের রাজনীতির পাশাপাশি উগ্র জাতীয়তাবাদ, প্রাদেশিকতাবাদ এবং অসমীয়া জাতিবাদকে ব্যবহার করে বিভাজনের রাজনীতিকে আরও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে বি‍‌জেপি সরকার উঠেপড়ে নেমেছিল নাগরিকত্ব পাবার ভিত্তিবর্ষ বর্তমানের ১৯৭১ সালের বদলে ১৯৫১ সাল করতে। একই সঙ্গে ছক কষেছিল ছ’বছর আগে করা এনআরসি রিপোর্টকে বাতিল করে ১৯৫১ সালকে ভিত্তিবর্ষ করে নতুন করে এনআরসি করার। তাহলে বর্তমানের বাতিল হওয়া ১৯ লক্ষ মানুষের জায়গায় বহুগুণ বেশি মানুষকে বিদেশি বলে দাগিয়ে দিয়ে অনাগরিক করে দেওয়া হবে। সন্দেহ নেই এইভাবে অনাগরিক করে দেওয়া মানুষের সকলেই প্রায় হবেন বাংলাভাষী এবং মুসলিম। এইভাবে বিদেশি তকমা দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমস্ত ধরনের অধিকার কেড়ে নেওয়ার রাজনীতিই আসামে বিজেপি’র টিকে থাকার একমাত্র উপায়। বিজেপি’র সেই প্রধান হাতিয়ারকে ভোঁতা করে দিয়ে পথে বসিয়ে দিয়েছে দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ তাদের রায়ে স্পষ্ট করে দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত তথা বি জে পি’র আবদার মেনে নাগরিকত্বের ভিত্তি বর্ষ কোনও অবস্থাতেই ১৯৭১ থেকে ১৯৫১ সাল করা যাবে না। সারাদেশের জন্য ভিত্তিবর্ষ ১৯৫১ হলেও শুধুমাত্র আসামের ক্ষেত্রে বিশেষ ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক কারণে ১৯৭১ সালই যুক্তিযুক্ত ও বাস্তব সম্মত। তাই নাগরিকত্ব আইনের ৬(এ) ধারার কোনও পরিবর্তন হবে না। ১৯৭০-র দশকের শেষ থেকে টানা ছ’বছর হিংসাত্মক ‘বাঙালি খেদা’ আন্দোলনের ইতি টানা হয় ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তির মাধ্যমে। এই ঐতিহাসিক চুক্তিই আসামে অনুপ্রবেশ সমস্যাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত অসন্তোষের রাজনৈতিক সমাধান। সেই রাজনৈতিক সমাধান বৈধতা পায় নাগরিকত্ব আইনে ৬(এ) ধারা যুক্ত করার মধ্য দিয়ে। সেই সময় বিজেপি এটা সমর্থন করলেও এখন ক্ষমতা ধরে রাখার তাগিদে অসমীয়া জাতিগত ভাবাবেগকে উসকে দিতে ৬(এ) ধারা বাতিলের দাবি তুল‍‌তে থাকে। তাহলে নাগরিকত্বের ভিত্তিবর্ষ ১৯৫১ সাল হয়ে যাবে। তাতে আরও বহু লক্ষ মানুষকে বিদেশি বলে দাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা যাবে। তেমনি সদ্য সংগঠিত এনআরসি রিপোর্ট বাতিল করে দিয়ে ১৯৫১ সালকে ভিত্তি বর্ষ করে নতুন করে এনআরসি করারও হিড়িক তোলে। এখন সবটাই বিশ বাঁও জলে। ফলে ভার্ষিক সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অনেকটাই স্বস্তিতে। অবশ্য এনআরসি করে যে ১৯ লক্ষ মানুষকে অনাগরিকের তালিকায় ফেলা হয়েছে তাদের নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যাচ্ছে। এদের মধ্যে সিংহভাগই ভারতের নাগরিক হলেও নানা কারণে কাগজপত্র জোগাড় করতে না পারায় এবং ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বাদ পড়েছেন। এই তালিকা নতুন করে যাচাই করে প্রকৃত নাগরিকদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment