Cyclone-'Mocha'

আগামী সপ্তাহে রাজ্যে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মোগা’

রাজ্য

Cyclone-Mocha

চলতে থাকা ঝড়বৃষ্টির মধ্যে ফের ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত মিললো। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে পারে ঘূর্ণিঝড়। মঙ্গলবার ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (‌আইএমডি) টুইট করে এমন খবর দিয়েছে।
জানানো হয়েছে ৬ মে, শনিবার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে নতুন একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হতে চলেছে। সেই ঘূর্ণাবর্তটি আরও দু’দিন পর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। আর এরপর থেকে নিম্নচাপের উদবর্তন ঘটতে থাকবে। প্রথমে গভীর, অতিগভীর নিম্নচাপ হয়ে তা ঘূর্ণিঝড় পরিণত হতে পারে। তবে এখনই তা হলফ করে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। ঘূর্ণাবর্তটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর সে বিষয়ে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হবে।


যদি তা হয়, তাহলে সোমবার ৮ মে ঘূর্ণিঝড়ের দেখা মিলতে পারে। ভারতীয় উপকূলের দিকে ধেয়ে আসতে থাকা ওই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মোগা’। আবহবিদরা বলছেন, উদীয়মান ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আমফানের পূর্বাভাসের একাধিক মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। আইএমডি তরফে এই খবর পাওয়ার পর রাজ্য প্রশাসনের তরফে বিপজ্জনক নদী বাঁধগুলির পরিস্থিতি দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবারের ঘূর্ণিঝড়ে নদী বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।  
ঘূর্ণিঝড় ‘মোগা’ আসুক বা নাই আসুক, ওই ঘূর্ণাবর্তের জেরে চলতি সপ্তাহে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির আশঙ্কা থাকছে দক্ষিণবঙ্গে। বৃষ্টির সঙ্গে চলতে পারে ঝোড়ো বাতাস। এই খবরের জেরে মঙ্গলবার দক্ষিণবঙ্গের ৬টি জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা পুরুলিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ায়। বাকি দক্ষিণবঙ্গের জেলায় জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা।  


পশ্চিমবঙ্গের দিকে ঘূর্ণিঝড় আসার আশঙ্কার সঙ্গে সঙ্গে ঘোর গরমে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার রয়েছে বলে জানাচ্ছে আইএমডি। একথা বলতে গিয়ে আর একটি সুখবর দিয়েছে দিল্লির মৌসম ভবন। দেশের কোনও প্রান্তে নতুন করে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতির আশঙ্কা নেই। পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, উত্তরাখণ্ড, তেলাঙ্গানা, দিল্লি, তামিলনাড়ু, পঞ্জাব, গোয়ায় গত সোমবার ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। নিয়ম ভেঙেই গ্রীষ্মে রাজস্থান, বিহার এবং মধ্য প্রদেশ সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে শিলাবৃষ্টি হতে দেখা গেছে।
মে মাসে ভরা গ্রীষ্মে এমন মেঘকোমল পরিবেশের তৈরি করেছে হরিয়ানা এবং আশপাশের অঞ্চলে ওপরে দাঁড়ানো একটি ঘূর্ণাবর্ত। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা থেকে ওই ঘূর্ণাবর্ত। উত্তর ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বৃষ্টির মূলে ওই ঘূর্ণাবর্তটি। হারিয়ানার পাশাপাশি রাজস্থান ও দক্ষিণ পাকিস্তানের ওপর অবস্থান করছে আর একটি ঘূর্ণাবর্ত। পশ্চিম বিদর্ভ থেকে কর্ণাটকের ওপরেও দেখা মিলেছে অপর একটি ঘূর্ণাবর্তের। তাই প্রখর দিনে বর্ষার ঘনঘটার দেখা মিলছে দেশজুড়েই। আগামী পাঁচ দিন উত্তর-পশ্চিম ভারতে বজ্রঝড় ও বজ্রবিদ্যুৎ সহ ব্যাপক বৃষ্টিপাত হবে। উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, দিল্লি, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তর প্রদেশ সহ রাজ্যগুলিতে শিলাবৃষ্টি হবে। কর্ণাটক, উপকূলীয় অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কেরালা এবং তামিলনাড়ু সহ দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে আগামী পাঁচ দিনে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হবে বলে জানা গেছে।


এদিকে, গত দুই দিন ধরে কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের জেলায় জেলায় আকাশ কালো করে ঝড়বৃষ্টির দেখা মিলেছে। প্রখর গরমে বৃষ্টি হলেও তা বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে হয়। তাই রাজ্যে ব্যাপক বাজ পড়তে দেখা গেছে। বাজ পড়ে এই সময়ে ২০ জনের মৃত্যু ঘটে গেছে এরাজ্যে। গ্রীষ্মের চলতি সময়ের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম এবং ওড়িশা সহ পূর্ব ভারতের কিছু অংশে বজ্রপাত এবং বজ্রবিদ্যুৎ সহ ব্যাপক ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকছে। অরুণাচল প্রদেশ, আসাম এবং মেঘালয় সহ সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু অংশে চলতি সপ্তাহ জুড়েই বৃষ্টিপাত হবে। 
মঙ্গলবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এই সময়ে গড় সর্বোচ্চ থেকে ১ ডিগ্রি নেমে গিয়ে হয়েছে ৩৪.৮ ডিগ্রি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি কমে হয়েছে ২৩.৩ ডিগ্রি। ঘূর্ণাবর্তের ঘনঘটার জেরে বৃহস্পতি ও শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, হাওড়া, কলকাতা, হুগলী, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বাঁকুড়া ও  পুরুলিয়ায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।


উত্তরবঙ্গে আগামী চার দিন বৃষ্টি চলবে। অতিভারী বৃষ্টির আশঙ্কা থাকছে দার্জিলিঙ, আলিপুরদুয়ার এবং কালিম্পঙে। উত্তরের সব জেলায় বজ্রপাত সহ ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। উত্তরবঙ্গে ঝড়ের বেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিঙ, আলিপুরদুয়ার এবং কালিম্পঙে জারি করা হয়েছে কমলা সতর্কতা। উত্তরবঙ্গের বাকি পাঁচ জেলায় জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা। 


 

Comments :0

Login to leave a comment