সর্বভারতীয় স্তরে বিরোধীরা আলোচনায় বসলেও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াই জারি থাকবে তা ফের স্পষ্ট করে দিলেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি তৃণমূলের দ্বিচারী অবস্থানকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘ওরা বিজেপি হটাতে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে। আবার সেই তৃণমূলই পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রকে উপেক্ষা করে হিংসার রাজনীতি করছে।’ সোমবার পলিট ব্যুরোর দু’দিনব্যাপী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইয়েচুরি স্পষ্ট করে দেন, ’তৃণমূল গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরছে পশ্চিমবঙ্গে। এটা মোটেই মেনে নেওয়া হবে না।’
কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে ২৩ জুন পাটনায় বৈঠক করে বিরোধী দলগুলি। সেই বৈঠকে অন্যান্য বিরোধী নেতাদের সঙ্গে সীতারাম ইয়েচুরির পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জিও উপস্থিত ছিলেন। সেকারণেই এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে পাটনার বৈঠকের পরে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তৃণমূল সম্পর্কে সিপিআই(এম)’র অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন আসে। ইয়েচুরি সর্বভারতীয় এবং পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি ভিন্ন সেকথা উল্লেখ করে জানিয়ে দেন যে, ‘‘এই মুহূর্তে দেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা সর্বোপরি সংবিধান রক্ষা করা জরুরি।
বিজেপি’র রাজত্বে এসবই ধ্বংসের পথে। ফলে এখন মূল লক্ষ্য, কেন্দ্রের ক্ষমতা থেকে বিজেপি-কে হটিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। দেশ বাঁচানোই প্রধান কাজ। এই প্রশ্নে যে সমস্ত বিরোধী দল সহমত পোষণ করেছে তারাই উপস্থিত ছিল সেদিনের বৈঠকে। এই বৈঠকে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে বিজপি’র বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে চলার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। পরে সিমলায় আবার আলোচনা হবে এবং এভাবেই পর পর বৈঠক চলতে থাকবে।’’
এরপরেই সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভিত্তিতে বোঝাপড়া গড়ে উঠবে, সেকথাও এদিন সাংবাদিকদের কাছে স্পষ্ট করে দেন ইয়েচুরি। পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস বোঝাপড়ার ভিত্তিতে তৃণমূল ও বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াই করছে সেকথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওখানে হিংসার রাজনীতি চালাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।
গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। ভোট ঘোষণার পর এর মধ্যেই হিংসায় প্রাণ হারিয়েছেন ১০ জন। এর মধ্যে সিপিআই(এম) কর্মী মনসুর আলমও আছেন। ফলে তৃণমূল কখনোই বলতে পারে না যে দেশে গণতন্ত্র নেই বলে বিজেপি-কে হটাতে চাই। আর পশ্চিমবঙ্গে সেই একই কাজ নিজেরা করে চলেছে। প্রতিদিন বিরোধী প্রার্থীদের হুমকি এবং হেনস্তার মুখে পড়তে হচ্ছে। প্রথমে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়। পরে মনোনয়ন তুলে নেওয়ার জন্য যে কোনও ধরনের চাপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ করলে অস্বীকার করছে তৃণমূল। পুলিশ-প্রশাসন-তৃণমূল সমার্থক হয়ে গিয়েছে ওই রাজ্যে। এরই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ফলে এমন একটি দলকে পরাস্ত করে ওই রাজ্যে জনগণের পঞ্চায়েত গড়ে তোলার লক্ষ্যে লড়াই চালাচ্ছে বাম-কংগ্রেস সহ ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি।
এক সাংবাদিক তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তোলা একটি অভিযোগ তুলে জানতে চান যে ওই রাজ্যে মমতা ব্যানার্জির দলকে হারাতে সিপিআই(এম)-কংগ্রেস-বিজেপি কি একসঙ্গে লড়ছে? ইয়েচুরি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, বিজেপি সম্পর্কে আমাদের কোনও দু’ধরনের অবস্থান নেই। ফলে ওই দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রশ্নই আসে না।
এদিকে, এদিনই সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো এক বিবৃতিতে এই প্রসঙ্গে বলেছে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন মানেই ব্যাপক হিংসা ও সন্ত্রাস। রাজ্যের আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই সিপিআই(এম) কর্মী কমরেড মনসুর আলম সহ ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এমন হিংসা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের মানুষ গণতন্ত্রের নিধনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন এবং জনগণের পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠা করতে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে আসছেন। এর আগের পঞ্চায়েত ভোটে নজিরবিহীন সন্ত্রাসের কারণে ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফলাফল নির্ধারিত হয়েছিল। এবারের নির্বাচনে সেই সন্ত্রাসকে অনেকটাই রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার আসনের সংখ্যাও প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে গিয়েছে।
Comments :0