চলতি অর্থবর্ষে মোট ৪৮ লক্ষ ২০ হাজার ৫১২ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্য জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেই সঙ্গে কৃষি, কর্মসংস্থানের মতো একাধিক অগ্রাধিকার ক্ষেত্রের উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বাজেটে বরাদ্দ এবং খরচের তুলনা করলে বোঝা যাচ্ছে জনগণের ওপর বোঝাই চাপাবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের এই বাজেটও।
সীতারামন জানিয়েছেন, আগের অর্থবর্ষে কোষাগারীয় ঘাটতি মোট জাতীয় উৎপাদনের ৫.৬ শতাংশে নেমে দাঁড়াবে। চলতি অর্থবর্ষ, ২০২৪-২৫’র জন্য কোষাগারীয় ঘাটতি মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপি’র ৪.৯ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্যও জানানো হয়েছে বাজেটে। সেক্ষেত্রে কোষাগারীয় ঘাটতির অঙ্ক হবে ১৬ লক্ষ ১৩ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।
কিন্তু কিভাবে?
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনতার বিপুল অংশগ্রহণ থেকে আয় বাড়িয়ে ঘাটতি বেঁধে রাখার পরিকল্পনা নেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের। বরং, জনতার প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলিতে চেপে দেওয়া হবে খরচ।
ফেব্রুয়ারিতে ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশের সময় সরকারি তথ্যেই দেখা গিয়েছিল যা বরাদ্দ করা হচ্ছে তা খরচ করা হচ্ছে না। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আসলে খরচ চেপে দিয়ে টাকা বাঁচাচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আদায় হচ্ছে জনতার থেকে বাড়তি হারে। ফলে অর্থনীতিতে চাহিদার ঘাটতি হতে বাধ্য। যার প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে।
পণ্য ও পরিষেবা কর বা জিএসটি থেকে ১০ লক্ষ ৬১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য জানিয়েছে বাজেট। আগের অর্থবর্ষে এই পরোক্ষ কর ব্যবস্থা থেকে লক্ষ্যের বেশি টাকা আদায় করেছিল বিজেপি সরকার। আগের অর্থবর্ষ, ২০২৪-২৫’র লক্ষ্য ছিল জিএসটি থেকে ৯ লক্ষ ৫৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা। আদায় করা হয়েছিল ৯ লক্ষ ৫৭ হাজার ৩২ কোটি টাকা।
লক্ষ্যণীয়, হিরের জিএসটি ৫ শতাংশ হলেও স্বাস্থ্যবিমার জন্য নাগরিকদের দিতে হয় ১৮ শতাংশ হারে এই পরোক্ষ কর। এই হারেই নেওয়া হয় মোবাইলে রিচার্জের ওপর জিএসটি। যার দায় মুখ্যত চাপে আমজনতার ওপর।
অথচ অর্থমন্ত্রীই বাজেট ভাষণে বলেছেন, জিএসটি সরলীকরণ এবং করের হার ‘যুক্তিসঙ্গত’ করার চেষ্টা চলবে!
স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা, বা গ্রামীণ রাস্তা থেকে নিম্নবিত্তের আবাসের প্রকল্প সবই কেন্দ্রীয় সহায়তা প্রাপ্ত প্রকল্প। যার একটি অংশ কেন্দ্র দিলেও বাকি অংশ দিতে হয় রাজ্যকে। এই বাজেটে ১৫ লক্ষ ১৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে তার জন্য। এই খরচ করবে কেন্দ্র। কিন্তু গত অর্থবর্ষেই কেন্দ্রের এই বাবদ খরচ ১৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ১৫২ কোটি টাকা ছিল বলে অনুমান করা হয়েছে বাজেটে। সেবারও বরাদ্দের তুলনায় কম খরচ হয়েছিল এই খাতে। দেখা যাচ্ছে বরাদ্দ বৃদ্ধির আয়তন ১০ শতাংশের কাছে। বাস্তবে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বৃদ্ধির হার প্রায় সমান। ফলে বাড়তি অংশকে আওতায় আনার লক্ষ্য বাধা পাবে।
গত বাজেটে মুলধনী খাতে খরচ বা পরিকাঠামো খাতে কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ ছিল ১০ লক্ষ ৯৬১ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে তার চেয়ে কম, ৯ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। এবার এই খরচের লক্ষ্য ১১ লক্ষ ১১ হাজার ১১১ কোটি টাকা করেছেন সীতারামন। কিন্তু বাস্তবে এই অঙ্কে খরচ পৌঁছাবে কিনা প্রশ্ন তুলছে গতবারের হিসেবই।
Budget Financing
বাজেট: ঘাটতি কমাতে চাপ সেই জনতার ঘাড়েই
×
Comments :0