প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অধীন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই’র দক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠে গেছে আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের তদন্তকে কেন্দ্র করে। চার মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও তদন্ত যে এক চুলও এগয়নি, যে তিমিরে ছিল সেখানেই আছে, তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। ৯০ দিনের মধ্যে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা না দেওয়ায় বা দিতে না পারায় জনসমক্ষে ধিক্কৃত ও ঘৃণিত অভিযুক্ত সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলের জামিন হয়ে গেছে। ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পরই কলকাতা পুলিশ সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করে। তারপর সিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে চার মাস ধরে আর এক পাও এগতে পারেনি। কলকাতা পুলিশ যেভাবে মামলা সাজিয়ে একজনকে ধর্ষণ-খুনি হিসাবে গ্রেপ্তার করে ক্রাইম সিনের যে ছবি এঁকে দিয়েছিল সিবিআই তাকেই আঁকড়ে ধরে চার মাস কাটিয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রাথমিক যে চার্জশিট পেশ করেছে তাতে কলকাতা পুলিশের বক্তব্যকেই মান্যতা দিয়ে একজনকেই অভিযুক্ত করেছে। যদি এমনটাই হবার ছিল তাহলে চার মাস ধরে সিবিআই’র ঘোড়ার ঘাস কাটার দরকার ছিল না।
সিবিআই’র এই অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং হাস্যকর ভূমিকায় পুরোপুরি আস্থা হারিয়ে নিহত ডাক্তারের বাবা-মা ৪২টি সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন তুলেছেন, তারা মনে করেন তদন্তের নামে শুধু প্রহসন চলছে, আসল ঘটনা এবং অপরাধীদের আড়াল করার জন্য। ধর্ষিতা-নিহত তরুণীর বাবা-মায়ের তোলা সঙ্গত প্রশ্নগুলি থেকে যেটা বেরিয়ে আসছে সেটা হলো, হয় সিবিআই এধরনের তদন্তে অদক্ষ, অযোগ্য, অপদার্থ অথবা কেন্দ্র-রাজ্য সরকার তথা শাসকদলের গোপন বোঝাপড়ার ভিত্তিতে কেন্দ্রের নির্দেশে সিবিআই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। বাইরে তদন্ত তদন্ত ভাব দেখালেও আসলে কিছুই করছে না। বাস্তবে কোনও এক অতি বড় উপরওয়ালার নির্দেশে তদন্তের নামে নাটক করে যাচ্ছে।
সবচেয়ে যেটা ভয়ঙ্কর তা হলো কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে পেয়েও সিবিআই চার্জশিটে তা উল্লেখ করেনি। ফরেন্সিক রিপোর্ট গোপন রেখে কলকাতা পুলিশের সাজিয়ে দেওয়া গল্প অনুযায়ী চার্জশিট তৈরি করেছে। যদি ফরেন্সিক রিপোর্ট ব্যবহার করা হতো তাহলে চার্জশিটের বয়ান বদলে যেত। ফরেন্সিক রিপোর্ট বলছে সেমিনার রুমে ধর্ষণ-খুন হয়নি। অন্য কোথাও ধর্ষণ-খুন করে দেহ সেমিনার রুমে পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল। একাজ একজন ব্যক্তির পক্ষে করা কোনও মতেই সম্ভব নয়। সিবিআই কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক রিপোর্টকে সরিয়ে রেখে কলকাতা পুলিশের বয়ানকে ব্যবহার করেছে। বোঝাই যাচ্ছে সিবিআই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। হয়তে খাঁচা বন্দি তোতা পাখির মতো হুকুম তালিম করছে।
RG KAR and CBI
কাকে, কেন আড়াল করছে সিবিআই?
×
Comments :0