ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে দলের নেতাদের কুকীর্তি ভালভাবেই জানতেন মুখ্যমন্ত্রী। দশ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য। তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি এবং জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মা্যক্ষ দেবাশিস প্রামাণিকের বিরুদ্ধে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ জেনে ব্যবস্থা নিয়েছেন, বিষয়টি মোটেই এমন নয়।
দেবাশিস প্রামণিকের গ্রেপ্তারি ঘিরে এই প্রতিক্রিয়া দিয়েছে সিপিআই(এম)। বুধবার রাতে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সদস্য তথা ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবের ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কংগ্রেসের এই নেতার গ্রেপ্তারির পরই শহর জুড়ে ব্যাপক শোরগোল পড়েছে। বৃহস্পতিবার তাঁকে সাতদিনের হেপাজতে নিয়েছে পুলিশ।
দেবাশিস প্রামাণিকের পাশাপাশি ওই রাতে একই অভিযোগে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের নিউ জলপাইগুড়ি থানা ও স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ যৌথ অভিযান চালিয়ে শিলিগুড়ি সংলগ্ন রাজগঞ্জ ব্লকের পাঘালুপাড়ার বাসিন্দা বিমল রায় ও জলডুমুর এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ কালামকে গ্রেপ্তার করে। ধৃত এই দু’জনও তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত বলেই জানা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার শাসকদল ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা দেবাশিস প্রামাণিক সহ ধৃত তিনজনকে জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে সাত দিনের পুলিশ হেপাজতে নেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার হবার পরে দেবাশিস প্রামাণিকের কোনও মন্তব্য পাওয়া না গেলেও অপর ধৃত বিমল রায় বলেন, ‘‘কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা জানি না। দেবাশিস প্রামাণিকের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তাঁকে আমি চিনি না।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, রাজগঞ্জ ব্লকের ভোরের আলো সংলগ্ন পাঘালুপাড়ার বাসিন্দা জুলাপি রায় নিউ জলপাইগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জুলাপি রায়ের অভিযোগ, জমি দখলের জন্য জমি মাফিয়ারা ২০২৩ সাল থেকে তাঁর পরিবারের ওপর ধারাবাহিক অত্যাচার চালাচ্ছে। দেবাশিস প্রামাণিক ও ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি যুব তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা তথা এসজেডিএ’র বোর্ড সদস্য গৌতম গোস্বামীর নির্দেশে বিমল রায়, মহম্মদ কালাম, যদু রায়, ঋষিকেশ রায়, দেবাশিস রায় নামে জমি মাফিয়ারা জুলাপি রায়ের প্রায় ২.৬ ডেসিমেল জমি জোর করে দখলের চেষ্টা করে। সম্প্রতি তার পরিবারের ওপর হামলাও চালিয়েছে জমি মাফিয়ারা। প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়।
সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘এত কিছুর পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করছেন তাঁর দলে তোলাবাজ, দুর্নীতিপরায়ণ, জমি মাফিয়ারা আছে। তবে এসব নতুন বিষয় নয়। ২০১১ থেকে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে দিদির সরকার চলছে। ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি অঞ্চলে জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য নিয়েও তিনি অবহিত। মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।’’
হকার উচ্ছেদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে পৌর এলাকায় হকারদের জন্য ভেন্ডার কমিটি গড়তে হবে। আমরা বলছি, পথচারীদের সুবিধার্থে হকারদের জন্য বিকল্প পুর্নবাসন ব্যবস্থা করতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের এই অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’’
প্রাক্তন মেয়র এবং প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘’দেবাশিস প্রামাণিক ওই এলাকার সবচেয়ে বড় মাফিয়া। কোটি কোটি টাকার মালিক। দীর্ঘ দিন ধরে নানারকমভাবে ওই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। ওই এলাকায় যে কোন ধরনের সরকারি থেকে পঞ্চায়েতের ঠিকাদারি ঠিক করেন তিনি। সব কিছুই মুখ্যমন্ত্রী জানেন।’’
হঠাৎ করে ব্যবস্থা কেন? এই আলোচনায় উঠে এসেছে লোকসভা ভোটের বিশ্লেষণও। একাংশের বক্তব্য, লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে তৃণমূল পরাজিত হয়েছে। হেরেছে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতেও। সেখানে তৃণমূলের একাশল বিজেপি’র হয়ে ভোট করিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। আচমকা প্রশাসনিক তৎপরতার সঙ্গে ফলাফলের যোগাযোগ আছে বলে মনে করছেন জলপাইগুড়ির অনেকেই।
TMC LEADER ARREST
ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির জমি লুট অনেক আগে থেকে জানতেন মুখ্যমন্ত্রী, বলল সিপিআই(এম)
×
Comments :0