পেট্রোল, ডিজেল বা কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির পর্ব থেকে উত্তরণের সমঝোতা সই হলো আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে। দুবাইয়ের এই সমঝোতাকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছেন কোনও কোনও রাষ্ট্রনেতারা। তবে সমঝোতার বক্তব্য ঘিরে সংশয় রয়েছে পরিবেশ আন্দোলনের বড় অংশের। যার প্রধান কথা, কেবল কী কাগজে কলমে সই, নাকি কাজের কাজ কিছু হবে।
বুধবার চূড়ান্ত সমঝোতায় কাজের কাজ জানানো হয়েছে যদিও। লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। পৃথিবীর বাতাসে কার্বনের মতো উষ্ণতা বৃদ্ধিতে দায়ী গ্যাস ততটাই মিশবে যতটা পরিবেশের শুষে নেওয়ার ক্ষমতা আছে। বাতাসে বাড়তি কার্বন মিশবে না। এই ‘নেট জিরো’ পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে ২০৫০’র মধ্যে।
জ্বালানি তেল, গ্যাস এবং কয়লা ব্যবহার সম্পর্কে সমঝোতা তৈরির চাপ ছিল। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া পরিবেশ আন্দোলনের প্রভাব পড়ছে জনমতের গুরুত্বপূর্ণ অংশেও। রাজনৈতিক বিচারেও পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহ, সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি, খরা, হিমবাহ গলে যাওয়া বা বন্যার প্রকোপ বাড়তে থাকায়।
দুবাইয়ে ‘কপ-২৮’ সম্মেলনের সভাপতি সুলতান আল জাবের সমঝোতাকে ঐতিহাসিক বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর যুক্তি, চূড়ান্ত সমঝোতায় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দিষ্ট কথা বলা গিয়েছে। এর আগে রাষ্ট্রসংঘ আয়োজিত বার্ষিক ২৭টি পরিবেশ সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি সম্পর্কে এত স্পষ্ট করে বলা হয়নি।’’
সমঝোতায় বলা হয়েছে, ‘‘জীবাশ্ম জ্বালানি পর্বের রূপান্তর ঘটিয়ে শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিকল্পের দিকে যাওয়া হবে, এই রূপান্তর দ্রুত করা প্রয়োজন, যাতে ২০৫০ সালের মধ্যে ‘নেট জিরো’ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো যায়।’’
তবে অনেকেই মনে করছেন বিস্তর দরকষাকষির পর সমঝোতায় পৌঁছানো অগ্রগতি নিশ্চয়। তবে ‘ঐতিহাসিক’ নয়। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির সাত বছর পরও কাজ লক্ষ্যের তুলনায় অনেক কম।
পরিবেশ আন্দোলনের বিভিন্ন সংগঠনের মঞ্চ ‘অ্যালায়েন্স অব স্মল আইল্যান্ড স্টেটস’ সমঝোতা নিয়ে ‘অত্যন্ত উদ্বেগ’ জানিয়েছে। সমুদ্রের জলতল বেড়ে যাওয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্তাপ বেড়ে যাওয়ায় বিপর্যয়ের সবচেয়ে বিপন্ন ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্র। তারা বলেছে, ‘‘গতানুগতিক বোঝাপড়ার বাইরে বেরনোর ইঙ্গিত সমঝোতায় রয়েছে। তবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করার কথা বলা হয়নি। যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তাতে এই জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর জায়গা রয়েছে যথেষ্টই।’’
ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্কের প্রধান হরজিৎ সিং পুরি বলেছেন, ‘‘দশকের পর দশক বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান বিপদ জীবাশ্ম জ্বালানির প্রশ্নে চোখ বুঁজে থাক চলছিল। সেই তুলনায় অগ্রগতি। কারণ সমঝোতায় এই জ্বালানি থেকে রূপান্তরের লক্ষ্য জানানো হয়েছে।’’
সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘সমঝোতার বিভিন্ন বক্তব্যে একগুচ্ছ ফাঁকও রয়েছে। পেট্রোলিয়াম উৎপাদক ব্যবসার জন্য গলে বেরিয়ে যাওয়ার নানা উপায়ও রেখে দেওয়া আছে। অপ্রমাণিত, বিপজ্জনক প্রযুক্তির ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত রয়েছে।’’
COP-28 FOSSIL FUEL AGREMENT
পরিবেশ সমঝোতায় জীবাশ্ম জ্বালানি, ‘ঐতিহাসিক’ না ‘ফাঁকি’, চলছে বিতর্ক
×
Comments :0