Census

ছকের পর ছক কষতেই নাজেহাল অবস্থা

সম্পাদকীয় বিভাগ

আগামী লোকসভা নির্বাচনেও যাতে যেনতেন প্রকারে ক্ষমতা ধরে রাখা যায় তার জন্য এখন থেকেই নিখুঁত পরিকল্পনায় ছকের পর ছক  কষে চলেছে আরএসএস-বিজেপি। আর এই বৃহত্তর সাজানো ছকের মধ্যে রয়েছে জনগণনা, লোকসভা-বিধানসভার আসন পুনর্বিন্যাস এবং মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ। সেই ব্রিটিশ জমানা থেকেই দশ বছর অন্তর জনগণনা হয়ে থাকে। জনগণনা থেকেই মেলে সবচেয়ে বিস্তৃত পরিসরে, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য পরিসংখ্যানই প্রধান অবলম্বন। করোনা মহামারীর কারণে ২০২১ সালের জনগণনা শুরু করা যায়নি ঠিক কথা। কিন্তু সেটা কেটে যাবার পরও দীর্ঘ সময় অজানা কারণে তা স্থগিত রেখে দিয়েছে মোদী সরকার। নানা মহল থেকে বিশেষ করে বিরোধীদের তরফে বার বার দাবি করা সত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে কিছুই বলা হচ্ছে না। কবে থেকে জনগণনা শুরু হবে অথবা আদৌ হবে কিনা কিছুই স্পষ্ট করে জানায়নি সরকার। এখন শোনা যাচ্ছে ২০২৫ সালে নাকি গণনার কাজ শুরু হবে। সেটাও সরকারের কোনও প্রতিনিধি স্পষ্ট করে জানায়নি। অর্থাৎ জনগণনা নিয়ে গোড়া থেকেই নানা গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা তথা ঢাক ঢাক গুড় গুড় চলছে। এটা সর্বজনজ্ঞাত যে মোদী সরকার প্রকৃত তথ্য পরিসংখ্যানে স্বস্তিবোধ করে না। তারা বরাবরই সত্যিকারের তথ্য গোপন করে মনগড়া তথ্য বা কারচুপি করে বানানো তথ্যকে গুরুত্ব দেয় সরকারের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য এবং মানুষের ক্ষোভকে চাপা দেবার জন্য। তাদের মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে জনগণনার তথ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই জনগণনাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতেই তারা চাইছিল।
চাইলেই সব সময় সবটা করে ওঠা যায় না। পরিস্থিতির চাপে জনগণনা বেশিদিন আটকে রাখা যাবে না। তাই একে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের ফন্দি আঁটা হয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে জনতার যা মতিগতি দেখা গেছে তাতে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় ফেরা যে অসম্ভব তাতে মোদী-শাহদের কোনও সন্দেহ নেই। সেই জন্যই ছক কষা হয়েছে জনগণনা, ডিলিমিটেশন ও মহিলা সংরক্ষণকে কাজে লাগিয়ে হাওয়া কিছুটা বদল করার। বাজপেয়ী জমানায় সংবিধান সংশোধন অনুযায়ী ২০২৬ সালের আগে ডিলিমিটেশন হবে না। সর্বশেষ জনগণনার তথ্যের ভিত্তিতে হবে ডিলিমিটেশন। তাহলে ২০২৬ সালের আগেই করতে হবে জনগণনা। তেমনি ডিলিমিটেশন হলে হিন্দি বলয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহারের সুবাদে দক্ষিণ ভারতে আসন সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।‍‌ হিন্দি বলয়ে হিন্দুত্ববাদীদের প্রভাব বেশি। ফলে বেশি আসনে জেতা সহজ হয়ে যাবে। তার সঙ্গে মহিলা আসন সংরক্ষণ চালু করে বাড়তি ফায়দা মিলতে পারে। এইসব ছক কষে নীরবে প্রস্তুতি চালাচ্ছেন মোদী-শাহ’রা। কিন্তু সমস্যা জাতভিত্তিক জনগণনার জোরালো দাবি। জাত গণনা হলে ওবিসি সংখ্যা বিপুল ধরা পড়বে এবং তাদের জন সংরক্ষণ করতে হবে। আরএসএস এবং বিজেপি’র উচ্চবর্ণের নেতারাও ওবিসি সংরক্ষণের বিরোধী। তেমনি হলে আরএসএস বৃহত্তর হিন্দু ঐক্যের ডাক দিয়ে বৃহত্তর হিন্দু ভোটে ভাগ বসাতে চাইছে। জাতগণনা তাদের সেই পরিকল্পনা জল ঢেলে দিতে পারে। এমন নানা জটিলতার মধ্যে ভোটের বাজারে নিজেদের প্রাধান্য যথাসম্ভব বজায় রাখতে সঙ্ঘ ওবিসি নেতারা ছকের পর ছক কষে চলেছেন। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কোথাকার জল  কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।

 

Comments :0

Login to leave a comment