Note ban consequences

সরকারের একটি ঘোষণাও মেলেনি, শুধু মানুষ আজও কাঁপেন দুঃস্বপ্নে

জাতীয়

Note ban consequences

বাবার টাকা রয়েছে ব্যাঙ্কে, কিন্তু মেয়ের বিয়ের খরচ জোগাতে পারছেন না। ছোট দোকানদারের ব্যবসা গুটিয়ে গেছে। দু-তিন মাস মাইনে পাননি গৃহসহায়িকা। ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘ লাইনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন পেনশনার। এমন অজস্র কাহিনি ফের উঠে এসেছে সোমবার। নোটবাতিল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে কেন্দ্র করে। ১ হাজার ও ৫০০ টাকার নোট বিনা নোটিসে বাতিল করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ২০১৬-র ৮ নভেম্বরের সেই ঘোষণাকে আইনি পদ্ধতিতে বৈধ বললেও তার পরিণতিকে ভালো বলতে রাজি হয়নি সর্বোচ্চ আদালত। 


সরকার বলেছিল, কালো টাকার বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। আসলে তা ক্ষেপণাস্ত্রের মতো আঘাত করেছিল দিনমজুর, গরিব মানুষকে। ৩৮ বছরের পরভেশ ‘নোটবন্দি’ শব্দ শুনলেই এখনও কেঁপে উঠছেন। ৩৮ বছরের মা, তাঁর সন্তান রয়েছে ২০ বছরের। লোকের বাড়ি কাজ করতেন। ‘দু-মাস মাইনে পাইনি, দিনের পর দিন না খেয়ে থেকেছি’, বলছেন পরভেশ। ‘আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়। এমনকি কোভিডের থেকেও খারাপ। কোভিডের সময়ে সরকার কিছু সাহায্য করেছিল, লোকজনের সাহায্যও পাওয়া গেছে। নোটবাতিলের সময়ে আমাদের কথা কেউ ভাবেনি’, তাঁর আক্ষেপ। 


শুধু গরিব মানুষই নন, অনেক ছোট ব্যবসায়ী এখনও সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সুরাটের খুচরো ব্যবসায়ী মনীশ শাহ বলেছেন, ‘নগদের ওপরে আমাদের ব্যবসা চলে। যেটুকু নগদ হাতে ছিল তা ব্যাঙ্কে জমা দিতে সরকার খুব অল্প সময় দিয়েছিল। ব্যবসা চালাব না ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়াবো? গোটা দেশের ব্যবসাই মার খেয়ে গেল।’ 


জম্মুর রাজেন্দ্র গুপ্তের মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। যারা জিনিসের জোগান দেবে, তাদের পয়সা দিতে পারছিলেন না। ‘ জিনিস কেনার মতো টাকা ঘরে ছিল না। আমারই পরিশ্রমে আয় করা টাকার জন্য ব্যাঙ্কে গিয়ে ভিক্ষা চাইতে হয়েছে। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার বিধিনিষেধ ছিল। তারপরেও একেক বার নিয়ম বদলাচ্ছিল’, দুঃস্বপ্নের মতো সেই দিনগুলির কথা মনে করছেন গুপ্ত। 


বিপরীত দিকে নয়াদিল্লির এক ব্যাঙ্কে শিক্ষানবীশের কাজে যোগ দেওয়া তানিয়া শর্মার অভিজ্ঞতা: ‘মারপিট হচ্ছে, লোকে কাঁদছে, কেউ কেউ অচেতন হয়ে পড়ে যাচ্ছেন। ওইসব দৃশ্য এখনও আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। ওই সময়ের শিকার মানুষজনের জন্য এই রায়ে কী পাওয়া গেল ?’ 


মোদী কী বলেছিলেন আর ছ’বছর পরে কী হলো? 
প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, অর্থনীতি থেকে নগদ উধাও হয়ে যাবে। বাস্তবে ২০১৬-র ৪ নভেম্বর চালু নগদের পরিমাণ ছিল ১৭.৭৪ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২২-এর ২৩ ডিসেম্বর তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৩২.৪২ লক্ষ কোটি টাকা। নোটবাতিলের ঘোষণার দিন থেকে ৮৩ শতাংশ বেশি আর যেদিন এই প্রক্রিয়ার অবসান হয়েছিল সেই ২০১৭-র ৬ জানুয়ারি থেকে ২৬০ শতাংশ বেশি! লোকসভায় প্রশ্নোত্তরে অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন নিজেই জানিয়েছিলেন, ২০১৭-র মার্চ থেকে বাজারে নগদের পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে গেছে। এমনকি গত ডিসেম্বরের তুলনায় এ বছরের ডিসেম্বরে তা ৮ শতাংশ বেড়ে গেছে।  
শুধু মূল্যেই নয়, টাকার সংখ্যাতেও বৃদ্ধি ঘটেছে। ৯০২৬৬০লক্ষ নোট ছিল, হয়ে গেছে ১৩০৫৩৩০লক্ষ। 


মোদী বলেছিলেন, কালো টাকার বিরুদ্ধে অভিযান। যাদের কাছে কালো টাকা রয়েছে তারা আর তা ব্যবহার করতে পারবে না। দেখা গেল, ২০১৬-র ৮ নভেম্বরে বাতিল হওয়া টাকার মূল্যে মোট ১৫.৪ লক্ষ কোটি টাকা বাজারে ছিল। তার ১৫.৩ লক্ষ টাকাই ফেরত চলে এল ব্যাঙ্কে। ৯৯.৩ শতাংশ। তাহলে কালো টাকার কী হলো? কোথায় গেল কালো টাকা? আজও এর কোনও উত্তর সরকার দেয়নি। বরং এই অভিযোগ উঠেছে সরকারি নির্দেশের ফাঁকে কালো টাকা সাদা হয়ে গেছে। 


মোদী দাবি করেছিলেন, জাল টাকার কারবার একদিনেই ধ্বংস হয়ে যাবে। ন্যাশনাল ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো জানিয়েছে, ২০১৬-র ওই ঘোষণার পর থেকে গত ছ’বছরে ২৪৫.৩৩ কোটি মূল্যের জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি— ৯২.১৭ কোটি টাকার জাল নোট। নতুন করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ৫০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়ার পরে জাল নোটও বাড়তে থাকে। ২০২১-২২-এ এমন ৭৯,৬৬৯ টি নোট ব্যাঙ্ক চিহ্নিত করে। যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। 
সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ সোমবারের রায়ে বলেছে, সরকারের অর্থনৈতিক নীতি বিচারবিভাগ ঠিক করে দিতে পারে না কিন্তু এমন নীতি রূপায়ণের সময়ে যথেষ্ট সংযম দেখাতে হয়। বিচারপতি বি ভি নাগরত্না সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের সঙ্গে ভিন্নমত হয়ে বলেছেন, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল কোনও নোটিস দিয়ে করা যায় না, এর জন্য সংসদে আইন করতে হয়। যা করা হয়নি। দেশের এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সংসদে আলোচনা না করে অনুমোদন করা যথার্থ হয়নি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বাধীন ভাবে চিন্তাও করেনি, তাদের অভিমত চাওয়া হয়েছিল কিন্তু তাদের তরফে কোনও সুপারিশ ছিল না।

Comments :0

Login to leave a comment