ফের রাজ্যসভার অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করা হলো তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ওব্রায়নকে। এদিন রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার সাথে সাথে ডেরেক সহ বিরোধী সাংসদরা বুধবার সংসদের ভিতর ঘটে যাওয়ার ঘটনার ওপর আলোচনা চেয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদ্বীপ ধনখড় সাংসদদের বসতে বললে ডেরেককে চেঁচাতে দেখা যায়। চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে প্রতিবাদ দেখাতে থাকেন ডেরেক। বিরোধী সাংসদরা স্লোগান দিতে থাকে আলোচনা চেয়ে।
ধনখড় তাদের শান্ত হতে বললেও তারা স্লোগান দিতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘দেশের মানুষ আমাদের দেখছেন এই ধরনের ব্যবহার কাম্য নয়।’’ সেই সময় ডেরেক চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে কথা বলেন। ধনখড়ের চেয়ারের সামনে এসে হাত নাড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায় তৃণমূলের দলনেতাকে। সেই সময় চেয়ারম্যান দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘ডেরেক ওব্রায়নকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য।’’ তিনি বলেন, ‘‘ডেরেক বলছেন যে তিনি চেয়ারকে সম্মান করেন না, হাউসের নিয়ম মানবেন না। তিনি স্বাধিকার ভঙ্গ করেছেন। সংসদের অভ্যন্তরে অভব্য আচরণের জন্য তাকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে।’’
বুধবার ছিল ২০০১ সালে সংসদ ভবন হামলার ২২তম বর্ষপূর্তি। তারমাঝেই দেখা যায় ১ যুবক লোকসভার দর্শক গ্যালারি থেকে লাফ দিয়ে সংসদের মধ্যে প্রবেশ করেন। লোকসভা টিভি’র সম্প্রচারে গোটা দৃশ্য ধরা পড়ে। দেখা যায় সেই যুবক জুতোর ভিতর থেকে স্মোক বোম্ব ব্যবহার করে গোটা হলজুড়ে ঝাঁঝালো হলুদ ধোঁয়া ছড়িয়ে দিতে শুরু করেন।
লোকসভায় ঢুকে স্মোক বোম্ব ব্যবহারকারী ২ যুবকের পরিচয় সামনে এসেছে। একাধিক সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, তাঁদের নাম সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি। জানা যাচ্ছে সাগরকে লোকসভার দর্শক গ্যালারিতে ঢোকার সুপারিশপত্র দিয়েছিলেন কর্ণাটকের মাইসোরের বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহা। অপরদিকে মনোরঞ্জন ডি পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার বলে উঠে এসেছে।
অপর যুবক গ্যালারির রেলিং ধরে ঝুলতে থাকেন। সংসদের হলের মধ্যে ঢুকে পড়া যুবককে ধরতে তৎপর হন সাংসদরা। কাবাডি খেলার মত করে এক বেঞ্চ থেকে অপর বেঞ্চে লাফিয়ে স্পিকারের দিকে এগোতে থাকেন এক যুবক। কিছুক্ষণের চেষ্টায় তাঁকে ধরে ফেলেন উত্তর প্রদেশের বিজনোরের বিএসপি সাংসদ মালুক নাগর এবং রাজস্থানের নাগৌরের আরএলপি’র সাংসদ হনুমান বেনিওয়াল।
এই ঘটনার জেরে আতঙ্কিত হয়ে ছুটোছুটি শুরু করে দেন সাংসদরা। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ ডিম্পল যাদব জানিয়েছেন, ‘‘কার্যত একে অপরকে ডিঙিয়ে হলের বাইরে বেরিয়েছি আমরা। পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।’’
এর কিছু পরে লোকসভার মার্শালরা এসে দুই যুবককে আটক করেন। দু’জনে দিল্লি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরই মাঝে লোকসভার বাইরে এক মহিলা এবং এক যুবক স্মোক বোম্ব ফাটান। তাঁদেরও গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ। এই দুজনের নাম নীলম এবং আনমোল শিন্ডে। নীলম হরিয়ানার বাসিন্দা এবং আনমোলের বাড়ি মহারাষ্ট্রের লাতুরে।
ধৃতদের ‘জয় ভীম’ স্লোগান দিতে শোনা যায়। একইসঙ্গে মোদী সরকারের ‘তানাশাহি’ বা স্বৈরাচারী আচরণের বিরোধীতাও করেন তাঁরা। একইসঙ্গে মণিপুরের মহিলাদের জন্য ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েও স্লোগান দিয়েছেন তাঁরা।
পেশার সূত্রে নিয়মিত লোকসভায় যেতে হয় সাংবাদিকদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, ৫-৬ দফায় নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে তবেই সংসদের মূল কক্ষে ঢোকা যায়। পেন, মানিব্যগের খুচরো পয়সা, মোবাইল সহ বহু জিনিস নিয়ে ঢোকা যায়না সদনের ভিতরে। দর্শকাসনে বসতে গেলে কোনও না কোনও সাংসদের সুপারিশ লাগে। সুপারিশ পত্রে সাংসদের সই এবং তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিতে হয়। এত দফার সুরক্ষা বলয় থাকার পরেও এই ঘটনা ঘটল। এরফলে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
Comments :0