নির্বাচনে যে দলই জিতুক না কেন, তিনি প্রশ্ন করা এবং ক্ষমতার বিরুদ্ধে সত্যি বলা অব্যাহত রাখবেন। সোশ্যাল মিডিয়ার এই ইনফ্লুয়েনসার ধ্রুব রাঠীর রাজনৈতিক ভিডিওগুলি এই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে। প্রতিটি নতুন ভিডিওর মাধ্যমে ধ্রুব রাঠী মোদী সরকারের যাবতীয় মিথ্যাচারকে দুমরেমুচরে ফেলেছেন, লক্ষ লক্ষ সাধারণ ভোটারের কাছে পৌঁছেছেন এবং একটি বড় অংশের মনকে পরিবর্তন করেছেন।
ভোট গণনা শুরুর আগে শেষ ভিডিওতে নিজের এই নতুন যাত্রার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন রথি। চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচনে কাগজের ব্যালটে নির্লজ্জ কারচুপির কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার এবং আয়কর বিভাগ কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিজ করার পরে তাকে ট্রিগার করেছিল। রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়ার দৃঢ় অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধে, তাই তিনি কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
ঘোড়া কেনাবেচা, দলত্যাগ এবং গোদি মিডিয়ার ভাষ্যের কাছে নতজানু হওয়া তার পীড়াদায়ক ছিল। জার্মানিতে বসবাসকারী হরিয়ানার তরুণ ইউটিউবার ভিডিওতে বলেছেন, চূড়ান্ত মুহূর্ত ছিল গণতন্ত্র এবং একনায়কতন্ত্রের মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়া, যা তাকে ফের রাজনৈতিক কনটেন্ট বানাতে বাধ্য করেছিল। ‘হোয়াটসঅ্যাপ মাফিয়া’ এবং বিজেপির আইটি সেল এবং ট্রোলদের বিরুদ্ধে লড়াই করা একটি কঠিন কাজ ছিল। তাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে, অনলাইনে অপদস্থ করা হয়েছে এবং পাকিস্তান ও চীনের দালালির অভিযোগ আনা হয়েছে।
রাঠী বলেছেন যে তিনি ভগৎ সিং এবং আগস্ট ল্যান্ডমেসারের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পান। তিনি বলেন, ভগৎ সিং ভাবেননি যে ১৯৩১ সালে ফাঁসির মঞ্চে নিজের জীবন উৎসর্গ করা ভারতকে স্বাধীন হতে সাহায্য করবে কিনা। অ্যাডলফ হিটলারকে নাৎসি স্যালুট দিতে অস্বীকার করার জন্য নাৎসি সমর্থকদের ভরা স্টেডিয়ামে একমাত্র ব্যক্তি হওয়ার পরিণতি সম্পর্কে ল্যান্ডমেসার দু’বার ভাবেননি।
‘ডিক্টেটর’ শিরোনামে তার ‘নতুন’ সিরিজের প্রথম ভিডিওটি ভারতবাসীকে অবাক করে দিয়েছিল তার ইউটিউব চ্যানেলে ২১ মিলিয়ন গ্রাহক যুক্ত করে। এর আগেই তার চ্যানেলে গ্রাহকের সংখ্যা ছাড়িয়েছিল প্রায় ৭০ মিলিয়ন!
তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, তার একমাত্র ইউটিউব চ্যানেলটি ভারতের সাত শতাংশ ভোটারের কাছে পৌঁছেছে। যদি ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলি যুক্ত করা হত, তবে ভিডিওগুলি ২০-২৫ শতাংশ ভোটারের কাছে পৌঁছে যেত।
তার বেশিরভাগ দর্শক পাকিস্তান থেকে এসেছে- এই অভিযোগের বিপরীতে, দর্শকদের প্রোফাইলে দেখা গেছে যে তার দর্শকদের ৮১ শতাংশই ভারতীয়। তিনি বলেন, ক্রিকেট স্টেডিয়ামে একজন দর্শক খেলা চলাকালীনও তার ভিডিও দেখার জন্য মগ্ন দেখে তিনি খুশি। তিনি একটি মন্তব্যও লক্ষ্য করেছেন যে কেউ তার একটি ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে ৮৫০ জনের কাছে ফরোয়ার্ড করেছে।
অনেক সেলিব্রিটিরা তাকে ধন্যবাদ জানান এবং বলিউডের একজন অভিনেতা দাবি করেছিলেন যে রাঠীর ভিডিওগুলি তাকে ভোট দেওয়ার জন্য অন্য শহরে আউটডোর শুটিংয়ের মাঝখান থেকে মুম্বাই ফিরে যেতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
ধ্রুব রাঠীর ভিডিও দেখে এক যুবক একজন ইউটিউবারকে বলছে যে সে ইডির (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) মতো এজেন্সি সম্পর্কে জানতে পেরে। পোর্টেবল স্ক্রিনে প্রজেক্ট করে তার ভিডিওগুলি আউটডোর দেখার ব্যবস্থা করার জন্য লোকেরা কাজ থেকে বিরতি নিচ্ছে, এমন ঘটনাও দেকা গেছে।
রাঠী স্বীকার করেছেন যে কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াই লক্ষ লক্ষ ভারতীয় করেছেন, তাদের মধ্যে রবীশ কুমার, আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিসার শর্মা এবং অজিত অঞ্জুমের মতো স্বাধীন সাংবাদিক ছিলেন। তিনি পুনম আগরওয়াল, মনীষা পান্ডে, আরফা খানুম শেরওয়ানি, ফায়ে ডি'সুজা, মীনা কোতোয়াল, সঙ্গপ্রিয়া সাঙ্গওয়ান, প্রজ্ঞা মিশ্র, ফতিমা খান এবং মীরা দেবীর মতো মহিলা সাংবাদিকদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি ডঃ মেডুসা, রন্টিং গোলা এবং নেহা সিং রাঠোরের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের নামও উল্লেখ করেছেন এবং স্বীকার করেছেন যে তিনি আরও অসংখ্য ভাল লড়াই করেছেন এমন অগণিত ব্যক্তির নাম বলতে পারেননি।
বিজেপি জিতলে কী হবে? আর যদি বিরোধীরা সরকার গঠন করতে পারে? তিনি প্রশ্ন করা অব্যাহত রাখবেন কারণ বৈষম্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং মানুষের প্রতি সমান আচরণ না করা পর্যন্ত, উন্নতির জন্য সর্বদা সজাগ থাকবেন বলে জানান তিনি।
রাঠী এই বলে শেষ করেন যে, ‘‘দেশের উন্নতির জন্য প্রত্যেক ভারতীয়কে নিজের কিছু করতে হবে। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে জলের বোতল সঙ্গে রাখুন, সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে এবং স্থানীয় পণ্য যতটা সম্ভব কিনুন এবং সর্বোপরি সাম্প্রদায়িক, জাতপাতবাদী ও শ্রেণিবিদ্বেষী মানসিকতা থেকে মুক্তি পেতে হবে’’।
Dhruv Rathee
ধ্রুব রাঠী, ‘হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্ববিদ্যালয়’ ধ্বংস করার নেপথ্যে যে ব্যক্তি
×
Comments :0