Editorial Ganashakti

জন্মের আগেই হিন্দুত্ব

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Ganashakti


নানা কৌশলে শিশুদের মনে অন্ধ হিন্দুত্বের বীজ পুঁতে দেবার আয়োজন করেও সঙ্ঘ পরিবার হাল ছাড়তে রাজি নয়। এবার তারা সন্তান জন্মের আগেই গর্ভস্থ শিশুকে হিন্দুত্বে পাঠ দেবার অভিযানে নামছে। এই দায়িত্ব আরএসএস অর্পণ করেছে তাদেরই মহিলা শাখা রাষ্ট্রীয় সেবিকা সমিতির সঙ্গে যুক্ত সংবর্ধিনী ন্যাস নামক একটি সংগঠনের উপর। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে সংবর্ধিনী ন্যাস ঘোষণা করেছে প্রকৃত দেশপ্রেমী, রাম বা শিবাজীর মতো বীর হিন্দু সন্তানের জন্ম দিতে হলে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় গর্ভ সংস্কার জরুরি। কীভাবে হবে সেই গর্ভ সংস্কার? সেই বিধানও তারা দিয়েছে। 

সন্তানসম্ভবা মায়েরা যদি প্রতিদিন সংস্কৃত পাঠ করেন, রাম, হনুমান ও শিবাজির জীবনী পাঠ‍‌ করেন, বেদ-পুরাণের কাহিনি পাঠ করেন তাহলে সেই পাঠ পৌঁছে যাবে গর্ভস্থ ভ্রূণ’র মস্তিষ্কে। জন্মাবার আগেই সে হিন্দুত্ববাদের প্রথম পাঠ আত্মস্থ করে ফেলবে। ফলে জন্মের পর আরও উৎকট হিন্দুত্বে অনুপ্রাণিত করা সহজ হবে। অর্থাৎ আগামীদিনে ঘরে ঘরে রাম, হনুমান বা শিবাজির অবতারের আবির্ভাব ঘটানোর হাতে গরম টোটকা বিতরণের কাজে ঝাঁপাতে চায় আরএসএস’র মহিলা বাহিনী। এই কাজে তারা যুক্ত করতে চায় অন্ধ সঙ্ঘ ভক্ত কবিরাজ, হোমিও ডাক্তার, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞদের। দুর্ভাগ্যের হলেও এই অভাগা দেশে ডাক্তারি পাশ করা এমন মানুষও আছেন যারা তাদের ছাত্র জীবনে শেখা সব  জ্ঞানকে বিসর্জন দিয়ে সঙ্ঘ প্রণীত গর্ভ সংস্কার পাঠ্যসূচিকে আঁকড়ে ধরেছেন। এদেরই কয়েকজনকে জোগাড় করে মুক্ত জ্ঞান চর্চার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় কর্মশালার আয়োজন করে সংবর্ধিনী ন্যাস। কর্মশালায় নাগপুরের সঙ্ঘ ল্যাবরেটরিতে নির্মিত ‘গর্ভ সংস্কার’ বিষয়ে রসালো জ্ঞান বিতরণ করেন যুক্তিবোধহীন অন্ধ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গর্ভের বিশুদ্ধতা রক্ষা করা হলে গর্ভে থাকাকালীনই শিশুরা ৫০০ শব্দ শিখে নিতে পারে। অবশ্য এমনটা কেউ সাহস করে বলেননি প্রসবের পর নবজাত শিশু কেঁদে ওঠার বদলে গর্ভাবস্থায় শেখা ৫০০টি শব্দ বলতে শুরু করবে।


হিন্দুত্ববাদী সংস্কারকারকরা এমনও বলেছেন গর্ভাবস্থায় মায়েরা রাম-হনুমানের জীবনী পড়লে শিশু ডিএনএ-ও নাকি বদলে যাবে। অর্থাৎ অন্য কিছু হওয়ার কথা যার সেও হয়ে যাবে রাম-হনুমানের মতো। বোঝা গেল বিজ্ঞানের আবিষ্কার ডিএনএ’র নাম তারা শুনেছে। কিন্তু ডিএনএ আসলে কি, কি তার বৈশিষ্ট্য সেসম্পর্কে কিছুই জানে না। আসলে তারা সচেতনভাবে মায়ের দুর্বল জায়গা ঘা দিয়ে সন্তানের ভালোর কথা বলে অবাস্তব কাল্পনিক পথে ঠেলে দিতে চাইছে হিন্দুত্ববাদী মানসিকতার গণ্ডিতে আবদ্ধ করার জন্য।
 

Comments :0

Login to leave a comment