মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল সরকার এবং গোটা তৃণমূল বাহিনী চিরকুট খোঁজার অভিযানে নেমে পড়েছে। আপাতত এটাই তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের কাজ। আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে থাকা ক্লেদাক্ত একটি দলকে মানুষের রাশি রাশি ঘৃণা থেকে রক্ষা করার দ্বিতীয় কোনও উপায় তাদের কাছে খোলা নেই। দুর্নীতির আবর্জনাস্তূপে বেড়ে ওঠা পুতিগন্ধময় দলটি মনে করছে ৩৪ বছরের বাম শাসনের একটি চিরকুট জোগাড় করতে পারলেই তাদের চাকরি বিক্রির কোটি কোটি টাকার দুর্নীতিকে কিছুটা হলেও স্বীকৃতি দেওয়া যাবে। ক্ষণিকের জন্য হলেও চিরকুট নিয়ে হই-হল্লাজুড়ে আপাদমস্তক চোরেদের দল থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানো যাবে।
১২ বছর ধরে সরকারি ক্ষমতায় বসে চুরির পর চুরি, দুর্নীতির পর দুর্নীতিতে এতটাই মশগুল ছিল যে চিরকুট খোঁজার কথা মনেই হয়নি। ভেবেছিল এইভাবেই চুরি করে যাবে কেউ জানতেও পারবে না। কিন্তু ধরা পড়তে শুরু করায় এখন বাঁচার পথ খুঁজে পাচ্ছে না। তাই বাম আমলের কল্পিত অনিয়মের চিরকুট খুঁজতে গোটা দল ও সরকারকে নামিয়ে দিয়েছে।
চিরকুট তো গণ্ডা গণ্ডা পাওয়া যায়। কিন্তু সেই চিরকুটে অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রমাণ মেলে না। দুর্নীতিই যদি না তাহলে প্রমাণ মিলবে কোথা থেকে। অতএব হাপিত্যেস আর হা-হুতাশই সার। বাম আমলে দুর্নীতি খোঁজার নামে মুখ্যমন্ত্রীর বালখিল্যপনা ইতিমধ্যেই হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে। বস্তুত ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন সময় বারে বারে বাম আমলের দুর্নীতি ফাঁস করার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বারো বছরে একটা অনিয়মও খুঁজে পাননি। বামফ্রন্ট সরকার তথা সিপিআই (এম)-কে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য সরকারি তহবিলের বহু কোটি টাকা খরচ করে দশটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনের কার্যকাল বারংবার প্রলম্বিত করে শেষ পর্যন্ত রিপোর্ট জমা পড়লেও সবগুলি চলে গেছে ঠান্ডা ঘরে। একটা রিপোর্টও প্রকাশ করার সাহস হয়নি মুখ্যমন্ত্রীর। সিপিআই (এম)’র দুর্নীতি খুঁজতে গিয়ে সম্ভবত তৃণমূলের দুর্নীতি বেরিয়ে পড়েছে। তাই সব তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট চেপে রাখা হয়েছে। এমনকি তৃণমূল আমলের ৬টি তদন্ত কমিশনের রিপোর্টও প্রকাশ করা হয়নি। সেখানেও বুমেরাং হবার আশঙ্কা। কথায় আছে চালুনি খোঁজে সূঁচের ছিদ্র। তেমনি সর্বাঙ্গে যাদের দুর্নীতিতে মোড়া তারা খুঁজছে সিপিআই (এম)’র দুর্নীতি।
প্রায় এক দশক সরকার চালানোর পর মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন সরকারি দপ্তরে নাকি সেই আলমারিগুলি পাওয়া যাচ্ছে না, যেখানে বাম আমলের অনিয়মের ফাইল ছিল। জেল বন্দি সারদা চিটফান্ড মালিক সুদীপ্ত সেন আচমকা রহস্যজনকভাবে চিঠি লিখলেন বাম নেতাদের নাম করে। প্রবল উৎসাহে ও আতিশয্যে পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে তদন্তে। ফলাফল শূন্য। এখন শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম হোতা জেলবন্দি পার্থ চ্যাটার্জি নাম করলেন বাম নেতার। একই সময়ে সারদা কেলেঙ্কারির অন্যতম জেলখাটা আসামী তৃণমূলের মুখপাত্র বললেন একই কথা। একেবারে নিটোল সাজানো চিত্রনাট্য।
এইভাবে বাঁচা যাবে না। তদন্তকারীদের রিপোর্টে বা আদালতের শুনানিতে প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে তৃণমূলের দুর্নীতির দগদগে ক্ষত। মানুষ তো তাদের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতায় তার থেকেও নির্মম সত্য উপলব্ধি করছেন। রাজনীতিকে তৃণমূল শুধু চৌর্যবৃত্তিতে পরিণত করেনি বাংলার সমাজ-সংস্কৃতিকে কদর্যতার শেষ সীমায় নামিয়েছে। বাংলার রাজনীতিতে চোরের এমন সর্বগ্রাসী আধিপত্য অতীতে কেউ কোনোদিন দেখেনি। মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল সেই নিকৃষ্টতার নজির স্থাপন করেছে। বাংলায় আজকের সার্বভৌম সত্য হলো তৃণমূল চোর, দুর্নীতিগ্রস্ত। অতএব সিপিআই (এম)’র চিরকুট খোঁজার নাম করে নিজেদের কদর্যতার আরও প্রকাশ না করাই ওদের পক্ষে ভালো।
Editorial on job
চিরকুটের আশায়
×
Comments :0