Farmer Suicide

চন্দ্রকোণায় ফের আত্মঘাতী কৃষক, সঙ্কট মানতে নারাজ কৃষি মন্ত্রী

রাজ্য

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মঙ্গলা মঙ্গলা প্রামাণিকের পরিবারের

চিন্ময় কর- চন্দ্রকোনা
শনিবার রাত থেকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত রাজ্যে পাঁচ কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন। ফের ঋণের দায়ে কৃষক আত্মঘাতী। ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের, জাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজধরপুরে। মৃত কৃষকের নাম মঙ্গলা প্রামাণিক (৫০)। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে যে চুক্তিতে চাষ করা এই আলু চাষী মঙ্গলবার সকালে আত্মহত্যা করেছেন। এই নিয়ে গত তিন দিনে চন্দ্রকোনা থানায় দুই কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলেন। 
আলু চাষ করে অকাল বৃষ্টিতে কৃষকরা যে সর্বস্বান্ত হয়েছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শাসকদলের স্থানীয় বিধায়ক, প্রধান, জনপ্রতিনিধিরা কৃষকদের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে ছুটে যাচ্ছেন। কিন্তু কী কারণে মৃত্যু তা নিয়ে  মুখ খুলছেন না। 
গত রবিবার রাতে চন্দ্রকোনার ভগবন্তপুরের বাপী ঘোষের মৃত্যুর পর বিধায়ক অরুপ ধাড়া বলেন কি কারণে মৃত্যু এটা প্রশাসন বলবে। মঙ্গলবারের ঘটনায় এলাকার প্রধান উমাশংকর চৌধুরীও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, কী কারণে মৃত্যু প্রশাসন ময়নাতদন্তের পর বলবেন। কৃষকরা আলু, সবজি চাষে ও ধানের ক্ষতিপূরণ পাবে কিনা, এমন প্রশ্নে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক আমলারাও নীরব। 
শুক্রবার রাতে বর্ধমানের পূর্বস্থলী থানার নিমদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের ছাতনি উত্তরপাড়ায় আত্মহত্যা করেছেন রূপ সনাতন ঘোষ (৪৫)। তাঁর আলুখেত জলে ডুবে গিয়েছে। যদিও রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ‘‘রাজ্য সরকার কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। কোনওভাবেই ওই মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে মানা যায় না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আলু চাষে ক্ষতি হওয়ার কারণে ওই কৃষকের মৃত্যু হয়নি।’’ কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য, কৃষকদের জন্য কৃষি ঋণের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন প্রকল্পে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা করা হয়। ওই কৃষকের মৃত্যুর খবরের বিষয়ে কালনা মহকুমাশাসক রূপম আগরওয়াল আগেই জানিয়ে ছিলেন, ‘‘আমি স্থানীয় প্রধানের মুখে আত্মহত্যার কারণ অন্য শুনেছি। উনি চাষ করতে গিয়ে নয়, পারিবারিক কারণেই আত্মহত্যা করেছেন’’।


সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘কৃষিকেই কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। হিমঘর, সার, বীজের ব্যবসা যারা করে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে কৃষিকে। বীজ, সার নিয়ে কালোবাজারি চলছে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে কৃষককে বেঁচে থাকতে পারতেন। তৃণমূল সরকারে সময়ে সেই ব্যবস্থাকেই ভেঙে ফেলা হচ্ছে। তাই কৃষকরা আত্মঘাতী হচ্ছেন। কৃষকের আত্মহত্যা পশ্চিমবঙ্গে আগে শোনা যেত না। কারণ পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও পঞ্চায়েতী ব্যবস্থায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকও বেঁচেবর্তে থাকতে পারেন। তাঁরা মাথা উঁচু করে বেঁচে ছিলেন। কিন্তু তৃণমূল পরিবর্তনের নামে ভূমি সংস্কার জলাঞ্জলি দিয়েছে। কৃষকের হাত থেকে জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সার নিয়ে কালো বাজারী করা হচ্ছে’’। 
মৃত কৃষক মঙ্গলা প্রামণিকের স্ত্রী ও ছেলে বলেন, অগ্রিম প্রায় এক লাখ টাকা দিয়ে চুক্তিতে সাত বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। এত জমি চাষ করতে পরিবারের তরফে নিষেধ করা হয়। গত ৬ দিন দু’বেলাই মাঠে নজর দিতে সময় কাটাতেন তিনি। মাটি সরিয়ে দেখেন সব আলু বীজ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আলু থেকে যে মুকুল মূল বের হয়েছিলো সেগুলোও সহ বীজ পুরোটাই পচন ধরেছে। ফলে পুরোটাই ক্ষতি। নিজেদের ১৯ কাঠা জমি সহ চুক্তির সাত বিঘা জমি মিলিয়ে দুই লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। ধার দেনা করেছেন মহাজন ও মাইক্রো ফিনান্স সংস্থার থেকে। সেই টাকার পরিমান প্রায় দেড় লক্ষ টাকার বেশি। আবার আলু বীজ কিনে লাগাবেন সেই অর্থও নেই। আবারও মহাজনের থেকে ঋণ নিতে হবে। গত ২দিন ধরে আলু বীজের সঙ্কট। ৫০ কেজি বস্তার দাম দ্বিগুন দামে ৫ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি চলছে। আলু বীজে কালোবাজারির কারণে পুনরায় আর চাষ করা সম্ভব নয়। এই চিন্তায় ভেঙে পড়েন তিনি। মঙ্গলবার সাতসকালে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। সবাই ভাবেন অন্যান্য দিনের মতো চাষ জমিতে গেছেন। বেলার দিকে খবর আসে ফাঁকা মাঠের এক পুকুর পাড়ের গাছে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন আলু চাষী মঙ্গলা প্রামানিক। 
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা। খবর পেয়ে পুলিশে ঘটনাস্থলে এসে দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঘাটাল হাসপাতালে পাঠায়।
 

Comments :0

Login to leave a comment