Farm Loan

চাষের জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়া কৃষক কমেছে, রাজ্যে পৌষ মাস মহাজন-ফড়েদের

রাজ্য

চাষের জন্য সরকারি উদ্যোগে ঋণ পাওয়া কৃষক কমছে রাজ্যে। গত এক বছরে সরকারের হস্তক্ষেপে ব্যাঙ্ক থেকে চাষের জন্য ঋণ পাওয়া কৃষক কমেছে প্রায় ৭ লক্ষ ৩১ হাজার।
রাজ্যের কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪-এ যত কৃষক ব্যাঙ্ক থেকে চাষের জন্য ঋণ পেয়েছেন তা গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে কম। ব্যাঙ্ক থেকে চাষের জন্য ঋণ পাওয়া কৃষক কমছে মানে মহাজন কিংবা মাইক্রোফিনান্স থেকে চড়া সুদে ঋণ নেওয়া কৃষক বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গে। 
ব্যাঙ্ক থেকে কৃষি ঋণ তিন ধরণের হয়—  চাষের জন্য ঋণ, কৃষির যন্ত্রপাতি কেনার জন্য, কৃষির পরিকাঠামোর জন্য ঋণ এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য ঋণ। এর মধ্যে চাষের জন্য ঋণের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি। যদিও রাজ্যের সরকার এবং ব্যাঙ্কগুলি কৃষি যন্ত্রপাতি, পরিকাঠামোর ঋণ নেওয়ায় বেশি উৎসাহিত করছে। এই নীতি প্রধানত কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের। কিন্তু ছোট জোত পশ্চিমবঙ্গে বেশি। সেখানে চাষের জন্য ঋণ কৃষককে পাইয়ে দেওয়ার উপর মহাজন নির্ভরতা কমানোর সম্ভাবনা থাকে।
তবে রাজ্যের কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়,‘‘শুধু মহাজন, মাইক্রোফিনান্স থেকে কৃষকরা ঋণ নিচ্ছেন তাই নয়। কৃষক চাষ ছাড়ছেন, তাও হতে পারে। অথবা দুটিই।’’ মোদ্দা কথা রাজ্যের কৃষকদের এবং চাষের একটি সঙ্কট স্পষ্ট হচ্ছে এই পরিসংখ্যানে। স্টেট লেবেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির সাম্প্রতিক রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০১৯-২০-তে চাষের জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ পেয়েছিলেন ৫৪ লক্ষ ৬ হাজার ৭৮৮ জন। ২০২৩-২৪-এ তা এসে দাঁড়িয়েছে ৫৩ লক্ষ ৮২ হাজার ৬৭২-এ। কিন্তু আরও বিপজ্জনক হলো পরপর দুই বছরের হিসাব। ২০২২-২৩-এ চাষের জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ পেয়েছিলেন ৬১ লক্ষ ১৪ হাজার ৩৪৪ জন। তা নেমে এসেছে ৫৩ লক্ষ ৮২ লক্ষ ৬৭২-এ। অর্থাৎ এক বছরে কমেছে প্রায় ৭ লক্ষ ৩১ হাজার।
রাজ্যে কৃষক বন্ধু প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন ১ কোটি ৫ লক্ষ কৃষক। অর্থাৎ সরকারের হিসাবই বলে দিচ্ছে তার প্রায় অর্ধেক কৃষক চাষের জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ পাননি। যদিও রাজ্যে শাখা আছে এমন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিকের কথায়,‘‘সরকার যাঁদের কৃষক বন্ধু প্রকল্পে টাকা দিচ্ছে তাঁদের জমি আছে, কিন্তু সবাই চাষ করেন, এমন নাও হতে পারে। ফলে রাজ্যে আসলে কত কৃষক চাষ করেন, তার প্রকৃত হিসাব বোঝা কঠিন। তবে এটা ঠিকই যে একটি বড় অংশের কৃষক ব্যাঙ্ক ঋণ পাননি। আবার সবাই ব্যাঙ্কে আবেদন করেন তাও নয়।’’
এই অজুহাত পুরোপুরি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। কিন্তু বড় অংশের কৃষক চাষের জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ পাচ্ছেন না, এই বিষয়ে সন্দেহ নেই। যাঁরা ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে চাষ করছেন তাঁদের বড় অংশ আবার ফসল সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারছেন না। রাজ্যের কৃষি দপ্তরের হিসাবেই ফসল বিক্রির জন্য ১৭ লক্ষের কিছু বেশি নাম নথিভুক্ত করেছেন।
অর্থাৎ, মহাজনের চড়া সুদের ধারের উপর নির্ভরশীল রাজ্যের বেশিরভাগ কৃষক। আবার সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল বিক্রি করার সুযোগ নেই সিংহভাগ কৃষকের। তাঁরা নির্ভরশীল ফড়েদের উপর। কেন পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলির কৃষক ব্যাঙ্ক, সমবায়ের মতো প্রতিষ্ঠানের থেকে ঋণ পাওয়ার থেকে এতটা পিছিয়ে? নাবার্ডের সমীক্ষার রিপোর্ট মতে কৃষিঋণ দেওয়ার মতো প্রতিষ্ঠানের অভাব, গ্রামীণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির দুর্বলতা এর বড় কারণ। প্রসঙ্গত, গত এগারো বছরে রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলি দুর্বল হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বেশকিছুদিন কিষান ক্রেডিট কার্ড(কেসিসি) নিয়ে সাফল্যের নানা দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন তাঁর মুখে আর কেসিসি শোনা যায় না। কারন, অনেক কৃষক আবেদন করেও কেসিসি পাচ্ছেন না।
শুধু কৃষকের সংখ্যাই কমেনি। কমেছে গড় ব্যাঙ্ক ঋণের পরিমাণ। ২০২২-২৩-এ চাষের জন্য কৃষকরা গড়ে ব্যাঙ্ক ঋণ পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ১ হাজারের বেশি টাকা। ২০২৩-২৪-এ তা নেমে এসেছে ৯৫ হাজারে। সাধারণত, বোরো ধান, ফল এবং ধান ছাড়া কিছু শস্য চাষের জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ নেন কৃষকরা।
 

Comments :0

Login to leave a comment