Kamduni rape

প্রশাসনের ব্যর্থতায় ছাড়া পেয়েছে কামদুনির খুনিরা, ক্ষোভ আছড়ে পড়ল রাজপথে

রাজ্য

KAMDUNI MURDER CRIME AGAINST WOMEN BENGALI NEWS WEST BENGAL POLITICS

রাজ্য প্রশাসনের ব্যর্থতায় কলকাতা হাইকোর্ট থেকে ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন কামদুনি দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং খুন কাণ্ডের দোষীরা। এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার কলকাতার রাজপথে মিছিল করলেন মহিলা আন্দোলনের কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে পা মেলান কামদুনি’র আন্দোলনকারীরাও। সামনের সারিতে ছিলেন মহিলা আন্দোলনের নেত্রী  রমলা চক্রবর্তী, কনীনিকা ঘোষ, সোমা দাস, কামদুনি’র আন্দোলনকারী মৌসুমী কয়াল, টুম্পা কয়াল, কামদুনি গ্রামের প্রতিবাদী শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী প্রমুখ। 

এদিন কলকাতার ধর্মতলায় সিইএসসি অফিসের সামনে থেকে দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ মিছিল শুরু হয়। গান্ধী মূর্তি’র পাদদেশে গিয়ে শেষ হয় মিছিল। কবি সুকান্ত’র কবিতার লাইন ধার নিয়ে মিছিলের ব্যানার সাজান প্রতিবাদীরা। সেখানে লেখা ছিল, ‘‘আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই, স্বজন হারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবোই।’’

এর পাশাপাশি মিছিলে সামিল আম জনতা হাতে লেখা পোস্টার, প্ল্যাকার্ড নিয়েও কামদুনির নির্যাতিতার হয়ে বিচারের দাবি জানান। দিনের ব্যস্ততম সময়ে মিছিলে চোখে পড়ার মত লোক হয়। 

সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ সোজাসুজি অভিযোগ করেছেন, ‘‘তৃণমূল পুলিশের সাহায্যে তথ্যপ্রমাণ লোপাট করেছে বলেই আদালতে দোষীদের শাস্তি হয়নি।’’

সংগঠনের সর্বভারতীয় নেত্রী মালিনী ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘সাক্ষ্য প্রমাণ তো পুলিশের জোগাড় করার কথা, তারা সেই দায়িত্ব পালন না করলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পক্ষে বড় বিপদ। হাথরসে যা হয়েছে, বিলকিস বানোর ঘটনায় অপরাধীরা যেভাবে ছাড় পেয়েছে, এরাজ্যেও কি তার প্রতিফলন হচ্ছে? কেন্দ্রের শাসকদলের মতোই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলছে রাজ্যের শাসকদল? তাহলে সেটা ভয়ানক বিপজ্জনক ঘটনা।’’

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৭ জুন রাতে কামদুনিতে উদ্ধার হয় কলেজ পড়ুয়া তরুণীর ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ। 

প্রধান অভিযুক্ত আনসার আলিকে গ্রামবাসীরা ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। পুলিশ তাকে জেরা করে ধরে বাকিদের। কামদুনির মানুষের প্রতিবাদ ও রোষ ঠেকাতে নামানো হয় পুলিশ এবং র্যা ফের বিরাট বাহিনী। খুনি ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। 

সেই বছরের ১৭ জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কামদুনিতে গিয়েছিলেন।  কিন্তু বিচারের আশ্বাস না দিয়ে সেদিনই তিনি নিহত তরুণীর দুই বন্ধু টুম্পা কয়াল এবং মৌসুমী কয়ালকে হুমকি দিয়েছিলেন। তারপর থেকে আতঙ্কে ছিলেন কামদুনিবাসী, আশঙ্কায় ছিলেন দোষীদের আদৌ শাস্তি হবে কিনা। সেই আশঙ্কা সত্যি হল ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে এসে। 

২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি নিম্ন আদালতের বিচারক সঞ্চিতা সরকার কামদুনির তরুণীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে খুনের অপরাধে ধৃতদের তিনজনের ফাঁসি ও তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল। তিন বছরের মধ্যে দোষীদের শাস্তি হয়ে গেছে বলে তৃণমূল নেতারা তখন মমতা ব্যানার্জির প্রশাসনের কৃতিত্বও দাবি করেছিলেন। 

কিন্তু সাজাপ্রাপ্তরা স্বাভাবিকভাবেই হাইকোর্টে আপিল করে এবং গত শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিসন বেঞ্চ ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত তিনজনের একজন সহ চারজনকে মুক্তি দিয়েছে এবং বাকি দুইজনের ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। এরপরেই কামদুনিতে আবার বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে।

আদালত রায় দিয়েছে সিআইডি তদন্তের সাক্ষ্য, প্রমাণ এবং সরকারি আইনজীবীদের সওয়ালের ভিত্তিতে। তাই আঙুল উঠেছে পুলিশি তদন্ত এবং সরকারি আইনজীবীদের দিকেই। আইনজীবী মহলেরই অভিযোগ, একটি মামলায় যদি ১৬ বার সরকারি আইনজীবী বদল হয়, তাহলে পরিণতি এছাড়া আর কী হতে পারে?

উদ্ধার করা মৃতদেহ দেখে শিউরে উঠেছিল গোটা গ্রাম। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চ কী বলেছে ? ৯২ পৃষ্ঠার রায়ের ৮৪ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘এক্ষেত্রে আদালতে যে মেডিক্যাল রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে তাতে বর্বরতা সেই তুলনীয় নয়। ডাক্তারের অভিমতে দেখা যাচ্ছে যে জোর করে ধর্ষণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, এই রিপোর্টে নিহতের ভ্যাজাইনা, অ্যাবডোমেন এবং পেলভিক অংশে ক্ষতের গভীরতার উল্লেখ নেই।’

কেবলমাত্র কিছু সাক্ষ্য বয়ান আদালতে হাজির করেছিল পুলিশ, আনুষঙ্গিক প্রমাণ দাখিল করেনি। একথাও বলা হয়েছে হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চের রায়ে। রায়ে বলা হয়েছে, ‘অপরাধের পূর্বে চক্রান্তের প্রমাণ দাখিলে পুলিশের তদন্ত ব্যর্থ হয়েছে। তদন্তকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে এগতে হয়, কেবল একজন অভিযুক্তের বয়ানের ভিত্তিতে আরেকজনের সংযোগ টেনে আনা গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।’ এরই সঙ্গে ‘আনসারের মতো ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে অপরাধে অংশগ্রহণের কোনও প্রমাণ আমিন আলির বিরুদ্ধে প্রদর্শিত হয়নি’ —এই কারণ দেখিয়ে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আমিন আলিকে মুক্তি দিয়েছে হাইকোর্ট। 

Comments :0

Login to leave a comment