BENGAL FAMINE

মুনাফার দাপটে দুর্ভিক্ষের ভ্রুকুটি আজও

রাজ্য

অনিন্দ্য হাজরা

স্মারকলিপিতে সিপিআই সদস্যরা তুলে ধরেন যে ’৪৩ সালের কায়দায় মজুতদারি শুরু হয়েছে। হক মন্ত্রীসভার মতোই লিগ সরকারও কালোবাজারিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। ঘাটতি অঞ্চলে চালের দাম সরকার নির্ধারিত মণ পিছু ১৫ টাকা ছাড়িয়ে ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 
স্মারকলিপিতে সিপিআই’র জন প্রতিনিধিরা আবার ৪৩ সাল ফিরে আসা ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যনীতি গ্রহণের দাবি জানান। ৪০ লক্ষ টন খাদ্য শস্য সংগ্রহের দাবি জানানো হয়। সিপিআই’র তরফে বলা হয়, মজুতদারের মজুতের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বলবৎ করতে হবে। তাদের ধান, চাল কেনার লাইসেন্স বাতিল করতে হবে অবিলম্বে। মজুতদারি বিরোধী সমস্ত আইন কঠোর ভাবে কার্যকরী করতে হবে। 
৫০ দশকের খাদ্য সঙ্কটের ক্ষেত্রেও দায়ী ছিল অবাধ কালোবাজারি। ফের খাদ্যের সঙ্কট দেখা হয়। বামপন্থীদের নেতৃত্বে খাদ্য আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলন সার্বজনীয় গণবন্টন ব্যবস্থাকে পোক্ত করে। 
এই বিপদ চিরদিনের মত বিদায় নিয়েছে এমনটা মনে করা সম্ভব হচ্ছে না। তার কারণ বহুজাতিক পুঁজি একই কায়দায় ফের খাদ্যের বাজারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ নেওয়া শুরু করেছে। মজুতদারির বিপদ সম্পর্কে রাষ্ট্রসঙ্ঘও সতর্ক করেছে। ২০২৩ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন রিপোর্ট বলছে, বিশ্ব জুড়ে ব্যাপক হারে খাবারের দাম বাড়ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা সঙ্কটে। যদিও একই সময়ে বিপুল মুনাফা করেছে বহুজাতিক খাদ্যশস্য কোম্পানিগুলি। এবিসিডি হিসেবে পরিচিত ৪টি বহুজাতিক সংস্থা- আর্চার ড্যানিয়েলস মিডল্যান্ড, বাঞ্জি, কার্গিল এবং লুই ড্রেফাস খাদ্যের বাজারের ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এবং ২০২১-২২ সালে সংস্থাগুলির ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে। 
এই সংস্থাগুলি নিজেদের গুদামঘরে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশষ্য মজুত করে। সাপ্লাই চেইন এবং বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাঝারি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ধ্বংস করে। তারপর নিজেদের প্রয়োজন মত কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে বিপুল মুনাফার পথ তৈরি করে। 
রাষ্ট্রসঙ্ঘের ইঙ্গিত, খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না হলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। 
ভারতেও একই কায়দায় আম্বানি এবং আদানিকে খাদ্য শষ্য ব্যবসায় মুনাফা পাইয়ে দিতে ৩টি কৃষি আইন এনেছিল মোদী সরকার। কৃষক আন্দোলনের চাপে সরকারকে পিছু হঠতে হয়েছে। কৃষক সংগঠনগুলির মঞ্চ সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার তরফেও বলা হয়েছে, খাদ্যের অধিকার এবং র্যাণশন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেবে ৩টি কৃষি আইন। ফিরে আসতে পারে মন্বন্তরের পরিস্থিতি। 
৩টি কৃষি বিল আইনে পরিণত করার প্রক্রিয়া হিসেবে খাদ্যের নিরাপত্তা, গণবন্টন ব্যবস্থা এবং মজুতদারি বিরোধী আইনগুলি হয় বাতিল, নয়ত লঘু করা হয়েছে। 
যদিও সংসদে দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, দেশে খাদ্যের সঙ্কট নেই। তাই খাদ্য সঙ্কট কিংবা মজুতদারি মোকাবিলা আইনের প্রয়োজন নেই।

গ্রাফিক্স: মনীষ দেব

Comments :0

Login to leave a comment