Editorial

সরষের মধ্যে ভূত

সম্পাদকীয় বিভাগ

শেয়ালকে দেওয়া হয়েছে মুরগি পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব। এই না হলে নরেন্দ্র মোদী ঘোষিত দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ প্রশাসন। যাকে দেওয়া হয়েছে অনিয়ম-বেনিয়মের ওপর নজরদারি করতে তিনি নিজেই অনিয়ম করে বসে আছেন। তারপর তাকেই দেওয়া হলো লগ্নি কারচুপির তদন্ত করতে। এরপর সেই তদন্তের ফল কি হতে পারে বুঝতে কারও অসুবিধা হবার কথা নয়। বাস্তবে হয়েছেও তাই। মোদীর অতি ঘনিষ্ট আদানিদের বিরুদ্ধে ওঠা গুরুতর অভিযোগ থেকে রেহাই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতির দুর্গন্ধ এতই তীব্র যে তাকে কি আর ছাপা দিয়ে রাখা যায়। ঠিক ছিদ্র খুঁজে ফের বেরিয়ে এসেছে। এবার কাঠগড়ায় শুধু আদানি গোষ্ঠী নয়, শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির প্রধান মাধবী পুরী বুচকে তুলে দিয়েছে আমেরিকার শেয়ার লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা হিন্ডেন বার্গ।
গত বছর জানুয়ারি মাসে তাদের রিপোর্টে হিন্ডেন বার্গ জানিয়েছিল কারচুপি ও জালিয়াতির মাধ্যমে আদানি গোষ্ঠী তাদের বিভিন্ন সংস্থা তাদের শেয়ার মূল্য অস্বাভাবিক বাড়িয়ে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ ঘরে তুলেছিল। তার জেরে বিশ্বের ধুনকুবেরদের তালিকায় উঠে আসে গৌতম আদানির নাম। এক সময় মুকেশ আম্বানিকে পেছনে ফেলে ভারতের সবচেয়ে ধনী হয়ে ওঠেন তিনি। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে আদানি গোষ্ঠীর জালিয়াতি ধরা পড়ায় তাদের শেয়ারে ধস নামে। আদানি গোষ্ঠীর মোট শেয়ার মুল্য দশ লক্ষ কোটি টাকারও নিচে নেমে যায়। দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। দাবি ওঠে এই জালিয়াতির সংসদীয় কমিটির তদন্ত। কিন্তু মোদী সরকার সংসদীয় তদন্তের বিরোধিতা করে সরাসরি আদানি গোষ্ঠীর পক্ষে দাঁড়িয়ে যায় আদানিদের জালিয়াতি আড়াল করার জন্য দেশপ্রেমের সুড়সুড়ি দিয়ে ভিন্ন বয়ান খাড়া করে। বলা হয় ভারতে লগ্নি ঠেকাতে এবং ভারতে অর্থনীতির বিকাশের বিরুদ্ধে যেতে আন্তর্জাতিক ক্ষড়যন্ত্রের অংশ এটা। দেশের বিরোধীরাও সেই ষড়যন্ত্রের সুরে গলা মেলাচ্ছে। সংসদীয় তদন্ত না করে তদন্তভার দেওয়া হয় সেবিকে। ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি’র তদন্তে ইতিমধ্যেই আদানিদের নির্দোষ বলে দেওয়া হয়েছে। সেবির তদন্ত চলছে অনন্তকাল ধরে। তারা নাকি কোনও তথ্য-প্রমাণই জোগাড় করতে পারছে না। যেটুকু জোগাড় হয়েছে তাতে আদানিদের বিরুদ্ধে কিছুই নেই।
মোদী এবং তাঁর অনুগামীরা যতই আড়াল করার চেষ্টা করুন এই সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই আদানিরা নিজেদের টাকায় বিদেশে লগ্নি সংস্থা খুলে সেই লগ্নি সংস্থার মাধ্যমে ভারতে আদানিদের সংস্থায় লগ্নি করেছে। ফলে হু হু করে বেড়েছে শেয়ার দর। মোদী সরকারের নির্দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বিমা ও স্টেট ব্যাঙ্কও লগ্নি করেছে বিপুল অঙ্কের টাকা। এই গোটা বিষয়টাই অস্বীকার করে আড়াল করার প্রাণপণ চেষ্টা হয়েছে সরকারি মদতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। হিন্ডেনবার্গ তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে রীতিমতো বোমা ফাটিয়ে জানিয়ে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠীর কারচুপি ও জালিয়াতির সহযোগী স্বয়ং সেবি প্রধান মাধবী বুচ এবং তাঁর স্বামী। আদানিদের বিদেশি ভুয়া সংস্থায় লগ্নি করেছে বুচ পরিবার। সেই টাকা বিদেশি লগ্নি রূপে ঢুকেছে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে। এহেন বুচের নেতৃত্বে সেবি তদন্ত করছে আদানি গোষ্ঠীর জালিয়াতির। কেমন তদন্ত হবে কারও বুঝতে অসুবিধা হবে না।
 

Comments :0

Login to leave a comment