আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে শনিবার দেশজুড়ে সমস্ত হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে দেশের বৃহত্তম চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। শুক্রবার এক বিবৃতি প্রকাশ করে আইএমএ ধর্মঘটের কথা জানিয়েছে। যদিও, ধর্মঘটের মধ্যেই সমস্ত হাসপাতালের জরুরি পরিষেবা চালু রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছে বেসরকারি ও সরকারি হাসপাতালগুলির বেশ কিছু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ইউনিয়ন।
গত কয়েকদিন ধরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, তিরুবনন্তপুরম, হায়দরাবাদ সহ বিভিন্ন শহরে লাগাতার বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া, জুনিয়র ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের বড় অংশ। ফেডারেশন অব রেসিডেন্ট ডক্টরস্ অ্যাসোসিয়েশন (ফোর্ডা) সহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠনের ডাকে সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দিল্লির এইমস্ সহ দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে জরুরি পরিষেবা বাদে অন্য সমস্ত পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়।
অন্যদিকে, আন্দোলনের চাপে শুক্রবার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের তরফে। হাসপাতাল চত্বরে কোনও চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর উপর কোনভাবে হামলা হলে ছয় ঘণ্টার মধ্যেই বাধ্যতামূলকভাবে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দেশের সমস্ত সরকারি হাসপাতালগুলির প্রধানদের। এদিন এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সরকারের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস)’র তরফে জানানো হয়েছে,‘‘সরকারি হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর হামলার ঘটনা এখন প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। বহু সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী কাজের সময় শারীরিক আক্রমণের শিকার হয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আবার প্রাণনাশের হুমকিরও মুখোমুখি হন। অধিকাংশ সমসয়ই রোগী বা রোগীদের পরিবার এই সমস্ত আক্রমণের জন্য দায়ী হয়।’’ এছাড়াও সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালকে এই সমস্ত ঘটনার একটি রেজিস্টার রাখার কথা জানিয়েছে ডিজিএইচএস। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি)’র এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়,‘‘ হাসপাতাল চত্বরে যে কোনও হিংসার ঘটনায়, কলেজ কর্তৃপক্ষকে পত্রপাঠ তদন্ত করতে হবে, পুলিশকে এফআইআর দায়ের করতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এনএমসি’র কাছে ঘটনার একটি রিপোর্ট পাঠাতে হবে।’’
শুক্রবার দিল্লির সংসদ ভবন চত্বরে অবস্থিত নির্মাণ ভবনে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বড় অংশ। মূলত দিল্লির এইমস্, এসআইএইচ, এমএএমসি, আরএমএল, সহ আরও বেশ কয়েকটি হাসপাতালের রেসিডেন্ট ডক্টরস্ অ্যাসোসিয়েশন (আরডিএ)’র নেতৃত্বের তরফেই এই বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। বিক্ষোভের মাঝেই এদিন তিন জনের এক প্রতিনিধি দল নির্মাণ ভবনে তাদের দাবি জানাতে যান।
দিল্লির পাশাপাশি, শুক্রবার দেশের আরও নানা শহরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এদিনই দেশজুড়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেছেন মহরাষ্ট্রের অন্তত তিনটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ২০ হাজার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। গত মঙ্গলবার থেকেই জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্মঘট চলছিল। এদিন প্রায় ৭ হাজার সিনিয়র ডাক্তার এই ধর্মঘটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মহরাষ্ট্র স্টেট অ্যাসোসিয়েশন অব রেসিডেন্সিয়াল ডক্টরস্ (এমএআরডি)’র সভাপতি ড. প্রতীক দেবাজে। এছাড়াও মধ্য প্রদেশের ভোপালে অবস্থিত এইমস্, পানাজির গোয়া মেডিক্যাল কলেজে সহ ঝাড়খণ্ডের অন্তত ৪টি মেডিক্যাল কলেজে এদিন ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালন করেছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
Doctors Strike
আজ দেশ জুড়ে ধর্মঘটে চিকিৎসকরা
×
Comments :0