CPIM Rally at Nazat

তৃণমূলী হুমকি উপেক্ষা করে ন্যাজাটে মিছিল

রাজ্য জেলা

CPIM Rally at Nazat ছবি: তৃণমূলের হুমকি চোখরাঙানি উড়িয়ে সন্দেশখালির ন্যাজাটে মিছিল সিপিআই(এম)'র।


প্রবীর দাস


রাতভর চললো বাড়ি বাড়ি হুমকি। সিপিআই(এম)'র মিছিলে গেলে খুন করে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হবে। আয়লার চাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। কোন ইঞ্জিন ভ্যানে লোক নিয়ে গেলে সেই ইঞ্জিন ভ্যানের চাকা আর ঘুরবে না। নদীর ঘাটে, পাড়ার মোড়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের কড়া নজর সত্ত্বেও সেহারা রাধানগর, কালিনগর, ন্যাজাট-১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে মিছিল করে পথ হাটলেন কয়েকশত মানুষ। গণসঙ্গীতের সুরে, ধামসা মাদলের বোল তুলে আদিবাসী নারী পুরুষদের নাচ গানে সমৃদ্ধ মিছিলে নেতৃত্ব দিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, পলাশ দাস, নিরাপদ সর্দার, শিবশঙ্কর ঘোষ,রঞ্জিত নাথ, রবীন্দ্রনাথ সরকার, ধনঞ্জয় মাহাতো, অমর মাহাতো, সুনীতা দাস, উমা প্রামানিক, সফিউল হাসান মন্ডল, অনুপ দাস সহ পার্টির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ন্যাজাট বটতলা থেকে মিছিল শুরু হয়।

চড়া রোদ,তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে ন্যাজাট বাজার পরিক্রমা করে মিছিল ন্যাজাট থানায় এসে পৌঁছায়। নেতৃবৃন্দ থানার ওসি সিদ্ধার্থ মণ্ডলের সাথে দেখা করে এলাকায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পুলিশের সদর্থক ভূমিকা পালন এবং রাতভর বাড়ি বাড়ি গিয়ে যে সমস্ত পার্টি কর্মীদের বাড়িতে মিছিলে অংশগ্রহণ না করা এমনকি খুনের হুমকি দেওয়া হয় সেই সমস্ত পার্টির কর্মী সমর্থকদের নিরাপত্তার দাবি তোলা হয় এবং হুমকিকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পলাশ দাস হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, আরও বড় সমাবেশ হবে এই ন্যাজাটের বুকে। তৃণমূলীরা হুমকি দিয়েও এদিন মিছিল বন্ধ করতে পারে নি। আসলে তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরতে শুরু করেছে। তাই তৃণমূল ভয় পাচ্ছে। প্রতিদিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বামপন্থীদের প্রতি মানুষের সমর্থন বাড়ছে। মিছিল বড় হচ্ছে। দীর্ঘ বছর যে কোন নির্বাচনে সন্দেশখালির মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে না। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সীমাহীন সন্ত্রাস নামিয়ে এনে বিরোধীদের নমিনেশন পর্যন্ত জমা দিতে দেয় নি। এখানে পুলিশ এবং তৃণমূল মিলেমিশে এই সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। গত কয়েকটি মিছিল এবং সভায় বিশেষ করে গত ২৬ মার্চ কালিনগর সবজি বাজারে সারাভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সভায় মহিলাদের ভিড় উপচে পড়ে। এসব দেখে তৃণমূল ভয় পাচ্ছে সন্দেশখালিতে একটি পঞ্চায়েতও বিরোধীদের হাতে নেয়া। পঞ্চায়েতে সমিতি, বিধায়ক তৃণমূলের। তা সত্ত্বেও গ্রামকে গ্রাম উজাড় করে মহিলা সহ বিভিন্ন অংশের মানুষ তাদেরকে আটকে দেওয়া হচ্ছে। কেন সন্দেশখালিতে গণতন্ত্র থাকবে না? 

 


এই প্রশ্নের জবাব চাইতে চড়া রোদ,তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে আমরা ৩ কিলোমিটার পথ হেটে মিছিল করে থানায় আসতে বাধ্য হয়েছি। মিছিলে মাইক ভাড়া দেওয়া যাবে না। ভ্যানে মিছিলের লোক তোলা যাবে না। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে সেহারা থেকে ১৬টি ইঞ্জিন ভ্যানকে আটকে দেওয়া হয়েছে। কাল তো আর নির্বাচন হচ্ছে না। নির্বাচনে তাহলে কী হবে সন্দেশখালিতে? পুলিশকে পার্টির পক্ষ গণতন্ত্র রক্ষায় তাদের কী দায়িত্ব তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে একতরফাভাবে চলবে তা মানুষ মেনে নেবে না। এই রাজ্যে কী একটাই রাজনৈতিক দল থাকবে? আর কেউ থাকবে না? আরো বড় সমাবেশ হবে এখানে। মিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত ভাষণে নিরাপদ সর্দার বলেন, গুন্ডাবাজি করে মিছিল রোখা যাবে না। সন্দেশখালির খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষ জাগতে শুরু করেছে। তৃণমূলের অনেক অত্যাচার সহ্য করেছ মানুষ। পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিতে শান্তিপূর্ণ মিছিলের ডাক দেওয়া হয় ১০০ দিনের বকেয়া পরিশোধ , ১০০ দিনের কাজ ফের চালু করা, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানো, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাস্ত করতে, নদীবাঁধ সংস্কার, অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এবং পঞ্চায়েত থেকে লুটেরাদের তাড়িয়ে মানুষের পঞ্চায়েত গঠন সর্বপরি কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মানুষ মারা নীতির বিরুদ্ধে। গোটা রাজ্যজুড়ে লাল ঝান্ডা পতপত করে উড়ছে। মিছিল বড় হচ্ছে। 

এদিন পুলিশের সাহায্য নিয়ে ন্যাজাটের মিছিল পন্ড করতে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ফের রাজনৈতিক আক্রমণ নামিয়ে এনে তৃণমূলীরা বাড়ি বাড়ি হুমকি দেওয়া শুরু করে। ডাক্তার দেখাতে যাবেন এমন মানুষকে বেতনী নদী পার হতে দেয় নি নদীঘাটে পাহারাদার তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। দ্বীপাঞ্চলের মানুষ হুমকির কাছে মাথা নত করে নি। তারা মিছিলে এসেছে। ইতিমধ্যে সন্দেশখালির বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূলের লুট তোলাবাজি সহ নানান দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের সই সংগ্রহ চলছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানোর উদ্দেশ্যে। পার্টির সন্দেশখালি-১এরিয়া কমিটির ডাকে এদিন মিছিল ও সভায় আয়োজন করা হয়। রাতভর হুমকি দেওয়ার পরেও সেহারা রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে একরত্তি বাচ্চা কোলে নিয়ে মিছিলে এলেন সেরিনা বিবি, সাহারবান বিবি, মোতালেব খান, আবুল ফারা সরদার, রাধানগর থেকে সুজোউদ্দিন সেখরা। শোনালেন সোমবার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত তৃণমূলের হাড়হিম করা সন্ত্রাসের কাহিনী। তাদের অভিযোগের তীর তৃণমূলের সেহারা রাধানগর অঞ্চলের যুব সভাপতি সবুজ লস্কর, সেহারা হাইস্কুলের শিক্ষক তপন দাসের স্ত্রী যুব মহিলা সমিতির দিপালী দাস, আবদুল কাদের সেখ, রেজাউলদের দিকে। সেরিনা বিবি বলেন, রাত তখন ১০টা ১০ থেকে ১২টি বাইকবাহিনী এসে সেরিনার স্বামী মোতালেবের খোঁজ করে। মোতালেব তখন তার কর্মস্হল হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জে। মোতালেব বাড়ি নেই শুনে দিপালী দাস হুঙ্কার দিয়ে খিস্তি দিয়ে বলে ওর চুলের মুঠি ধরে বাইরে নিয়ে আয়। ওর ঠ্যাঙ ভেঙে দে। কাল মিছিলে যাওয়ার সাধ ওর মেটাচ্ছি। ঘরে সত্তরোর্ধ শ্বশুর জহর আলী খান প্রতিবাদ করলে তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় সবুজ লস্কর। ঘরের দরজায় খিল আটকে সেরিনা, সাহারবানরা ভয়ে সিঁটিয়ে গোটা পরিবার। রাতভর চলে মদ্যপ সশস্ত্র তৃণমূলীদের তান্ডব। তান্ডব ছড়িয়ে পড়ে ১২৩, ১২৪, ১২৫ নম্বর বুথ এলাকায়। সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। 

এরপর মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয় পাড়ার মোড়ে মোড়ে, নদীর ঘাটে কড়া নজরদারি। তা সত্ত্বেও আমরা ওদের চোখ এড়িয়ে মিছিলে এসেছি। আমাদের দাবি এই অরাজকতা বন্ধ হোক। ভোলাখালি থেকে এসেছেন চৈতন্য সর্দার। তার রেকর্ড করা নয় বিঘা জমি কেড়ে নিয়েছে তৃণমূলীরা। তার বাবা যাদব সর্দার বর্গাদার ছিলেন। তৃণমূলের অবসান ঘটিয়ে জমি ফেরত পেতে চৈতন্য এসেছেন এদিনের মিছিলে। রাত ১২টায় সুজোউদ্দিনের দাওয়ায় দাঁড়িয়ে তৃণমূলীরা হুমকির সুরে বলে দিয়েছে সিপিআই(এম)'র মিছিলে যাবি তো আয়লার চাল পাবি না। তারপরেও সুজোউদ্দিন মিছিলে হাটলেন এবং গলা মিলিয়ে স্লোগান দিলেন লুটেরাদের পঞ্চায়েত থেকে তাড়াও, মানুষের পঞ্চায়েত ফেরাও। চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি চ্যালেঞ্জ নাও, পঞ্চায়েত ভোটের তারিখ দাও।


 

Comments :0

Login to leave a comment