INDIA VS ENGLAND

ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভারত

খেলা

অপ্রতিরোধ্য। দুরন্ত। দুর্ধর্ষ। কোন বিশেষণটা যথাযথ এই ভারতীয় দলের জন্য? না এগুলি সবই বহু ব্যবহারে ক্লীশে। রোহিত অ্যান্ড কোং’কে বর্ণনা করতে প্রয়োজন এবার নতুন বিশেষণের। সেদিন ইডেনে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি নিজেও বর্ণনার করার সঙ্গে শব্দ খুঁজে পেলেন না। স্রেফ প্রতিক্রিয়া দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, দলটা অন্য মানের। বিশ্ব মঞ্চে যাদের দাপুটে ক্রিকেটের সামনে সমানে খাবি খাচ্ছে প্রতিটি প্রতিপক্ষ। কী ইংল্যান্ড, কী অস্ট্রেলিয়া। প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা যেন ভারতীয় দলের কাছে চুনোপুঁটি। চোখে চোখ রাখা তো দূরের কথা সামান্যতম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না। বাধাপ্রাপ্ত না হয়েই রোহিতের দলও এগিয়ে চলছে লক্ষ্যের দিকে মসৃণ গতিতে। তিনবারের বিশ্বজয়ের স্বপ্নের আরও কাছে তাঁরা। একমাত্র দল হিসাবে অপরাজিত তো ছিলই। এদিন ইংল্যান্ডকে (যারা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নও বটে) ১০০ রানে পর্যুদস্ত করে, একটানা ছ’টি জয়ে শেষ চারের দিকে এক পা বাড়িয়ে রাখল মেন ইন ব্লু। আগামী বৃহস্পতিবার মুম্বাইতে শ্রীলঙ্কাকে হারালেই নিশ্চিত হয়ে যাবে সেমিফাইনাল।
এতদিন ভারত জিতেছে রান তাড়া করে। দেখা গিয়েছে ভারতীয় ব্যাটিং বিভাগ কতটা গভীর। রবিবার বোঝা গেল, ভারতীয় বোলিং লাইন আপের শক্তি। এবার বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা ছন্দে না থাকলেও, তাঁরা নিজেদের দিনে বিধ্বংসী। উইকেট যতই বোলারদের জন্য সাহায্য থাকুক। একটা দলকে ১৩০ রানের মধ্যে বেঁধে ফেলতে প্রয়োজন অসামান্য দক্ষতার। নিয়ন্ত্রিত লাইন লেংথের। মহম্মদ সামি, জসপ্রীত বুমরা, কুলদীপ যাদবরা মিলে টুঁটি চেপে ধরল বেন স্টোকস, জস বাটলারদের। সামিরা একেকটা বল নিক্ষেপ করলেন, প্রত্যেকটাতে যেন লেখা ছিল স্টোকস, বেয়ারস্টোদের মৃত্যু পরোয়ানা। যে ওভারটায় বেনকে ফেরালেন সামি, উফ কী ভয়ানক স্পেল! বিশ্বসেরা ব্যাটারকে ক্রিজ থেকেই নড়তে দিলেন না। একটা সিকি-আধুলির উপর টানা বল ফেলে, বেঁধে রাখলেন স্টোকসকে। তাঁর মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটল, উইকেট ছেড়ে সামিকে বাউন্ডারির বাইরে ফেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন স্টোকস (০)। বেয়ারস্টোও (১৪) আগ্রাসী হতে গিয়ে বোল্ড। বাইরের মারতে গিয়ে। মঈন আলিকে (১৫) তিনি যে বলটায় ফেরালেন, সেটা যে কোনও পেসারের স্বপ্নের ডেলিভেরি। সামি এমন একজন বোলার। টিম কম্বিনেশনের জেরে বারেবারে বঞ্চিত হয়েছেন। গতবারের সেমিফাইনালই হোক বা এবারের বিশ্বকাপে। তাঁকে দুই ম্যাচ আগে অবধি বসিয়ে রেখেছিল ভারতীয় দল। কেননা, তাঁর ব্যাটের হাত ভালো না, ব্যাটিং গভীরতা বাড়াতে খেলানো হচ্ছিল শার্দুল ঠাকুর। হার্দিক পান্ডিয়া চোট না পেলে সামি কবে সুযোগ আসতো, কেউই জানেন না। কিন্তু সামি অন্য ধাতুতে গড়া। যখনই সুযোগ পেয়েছেন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। পরপর দু’ম্যাচে বিপক্ষকে ধসিয়ে দেওয়া স্পেল। উইকেট নেওয়ার পর তাঁর সেলিব্রেশন বলে দিচ্ছিল, তাঁর ভেতরে কতটা আগুন জমে ছিল। তিন বিশ্বকাপ মিলিয়ে সামি ১২ ম্যাচ খেলে ৪০ টি শিকার করেছেন। এমন ঈর্ষণীয় পরিসংখ্যান বোধহয় কোনও ভারতীয় বোলারের নেই। 
আর কুলদীপ ইউনিভার্স জস ওরফে বাটলার ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ালেন স্পিনের ভেল্কিতে। তাঁর বলটা উইকেটে পড়ে এক হাত টার্ন করল, বাটলারের (১০) রক্ষণ ভেঙে দিল। ইংল্যান্ড অধিনায়ক অবাক চোখ-মুখ করে প্যাভিলিয়নের রাস্তা ধরলেন। লিয়াম লিভিংস্টোনও (২৭) শিকার ঘরের ছেলে কুলদীপের।  সামি, কুলদীপকে নিয়ে শব্দখরচ করতে গিয়ে, বুমরার অবদান ভুললে চলবে না। কম রান ডিফেন্ড করতে হলে বিপক্ষ শিবিরে শুরুতেই ধাক্কা দেওয়ার প্রয়োজন। প্রথম স্পেলে বল করতে এসে কাজের কাজটা করে দেন বুমরা। ডেভিড মালানকে (১৬০ এলবিডব্লিউ ও রুটের ( ০) উইকেট ছিটকে দিয়ে। সেই যে মনোবল হারালও ইংল্যান্ড, আর ম্যাচে ফিরতে পারেননি।  শেষটা করেন বুমরাই। উডকে ফিরিয়ে। এর মধ্যেই ফাঁকতালে এক উইকেট নিয়ে যান জাদেজাও। নিঁখুত বোলিং পারফরম্যান্স বুমরাদের। ওই যে আছে না, ম্যাচ জেতায় ব্যাটাররা। টুর্নামেন্ট জেতায় বোলারর। ভারতীয় দলের কাছে রয়েছে বিশ্বের সেরা বোলিং লাইনআপ। বৈচিত্রের দিক থেকে।
উইকেট বোলিং সহায়ক। ব্যাটারদের জন্য যে কিছুই ছিল না তেমন কিন্তু নয়। এই ধরনের বাইশ গজে, যেখানে বল থেমে আসবে। টার্ন করবে। সেই সমস্ত পিচে রান করতে গেলে, প্রথম ধৈর্য ধরতে হবে। বোলারদের সম্মান দেওয়ার পাশাপাশি, বলের মেরিট বুঝে শট নির্বাচন করতে হবে। অযথা হারাকিরি মানেই, আউট হয়ে ফেরা। যেটা ঘটল শুভমন গিল, বিরাট কোহলি (০) ও শ্রেয়স আইয়ারের (৪) সঙ্গে। বিরাটের মতো এত অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, তাঁর এদিন ব্যাটে বলে হচ্ছিল না ঠিক মতোন, সময় না নেওয়ার বদলে, বড় শট খেলতে গিয়ে ফাঁদে পড়লেন। শ্রেয়সও তাই। খাটো লেংথের বলে পুল করে উইকেট দেওয়াটা তিনি অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন। মুম্বাইয়ের ক্রিকেটার হয়ে, শর্ট এত দুর্বলতা। সত্যিই তিনি বিরল প্রজাতির। গিল (৯) বোল্ড হলেন ব্যাট প্যাডের মাঝখান। ৪০/৩। বিপাকে ভারত। এদিন সম্পূর্ণ অন্যরুপে পাওয়া গেল রোহিত। এতদিন অবধি আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে দলের ভিত গড়ে দিতেন। রবিবার কম রানে তিন উইকেট হারানো একটা দলের হাল ধরলেন। কঠিন উইকেটেও সহজ সাবলীল করলেন তিনি।  যেদিন তিনি ছন্দে থাকবেন,।তাঁর ব্যাট হয়ে উঠবে তুলি। মাঠটা ক্যানভাস। শিল্পীর ন্যায়ে মাঠের চারিদিকে আপন মনে বল পাঠাবেন। তাই করলেন ইংল্যান্ডের বোলারদের বিপক্ষে। নিশ্চিত শতরান ফেল আসলেন এদিন। আদিল রশিদকে চালাতে গিয়ে। ১০০ বলে তাঁর সংগ্রহ ৮৭। ২২৯ রানে ভারত পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সূর্যকুমার (৪৯), কেএল রাহুলের (৩৯) অবদানও কিন্তু কম নয়। তেমনই বুমরার (১৬)।  এঁদের তিনজনের ইনিংসগুলি কিন্তু দিনের শেষে ফারাক গড়ে দিল। না হলে সামি, বুমরারাও বল হাতে লড়াই করার শক্তিটা পেতেন না। 
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ৫০ ওভারে ২২৯/৯ (রোহিত ৮৭, সূর্য যাদব ৪৯, উইলি ৩/৪৫)
ইংল্যান্ড ৩৪.৫ ওভারে ১২৯ অলআউট (লিভিংস্টোন ২৭, সামি ৪/২২)

Comments :0

Login to leave a comment